Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

ভাগ্য ভাল, ধর্ষিতা বা খুন হতে হয়নি

এতদিন খবরের কাগজে, টিভিতে এই রকম ঘটনা দেখেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে কোনও দিন হতে পারে ভাবিনি। কোনও মেয়েই বোধহয় আগে থেকে ধারণা করতে পারে না। আমার তুলনায় ভাগ্য ভাল। ধর্ষিতা বা খুন হতে হয়নি। পাঁচটা সেলাইয়ের উপর দিয়ে গিয়েছে। আমাকে যখন মুখে ওড়না পেঁচিয়ে কোমর ধরে ছেলেটা হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন সকালবেলা। চার দিকে আলো।

অনিন্দিতা হালদার (নাম পরিবর্তিত)
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

এতদিন খবরের কাগজে, টিভিতে এই রকম ঘটনা দেখেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে কোনও দিন হতে পারে ভাবিনি। কোনও মেয়েই বোধহয় আগে থেকে ধারণা করতে পারে না। আমার তুলনায় ভাগ্য ভাল। ধর্ষিতা বা খুন হতে হয়নি। পাঁচটা সেলাইয়ের উপর দিয়ে গিয়েছে।

আমাকে যখন মুখে ওড়না পেঁচিয়ে কোমর ধরে ছেলেটা হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন সকালবেলা। চার দিকে আলো। আমি পড়াতে যাচ্ছিলাম। বাড়ি থেকে পনেরো মিনিটের হাঁটাপথে আমার ছাত্রের বাড়ি। বাচ্চাটা ক্লাস ফাইভে পড়ে। আমি সপ্তাহে পাঁচ দিন ওকে পড়াই। আমি বিএ সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী আমি।

এ দিনও সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ বেরোই। ভগবানপুরের দিকে যাওয়ার একটা শর্টকাট আছে। ওটা দিয়েই যাই। রাস্তাটার মাঝামাঝি দোসরা ভগবানপুর জায়গাটা একটু ফাঁকা-ফাঁকা। ওই জায়গাটা দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা উল্টো দিক থেকে ছেলেটাকে আসতে দেখলাম। মাঝারি উচ্চতা, ফর্সা। আগে দেখিনি কখনও। আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ক’টা বাজে? দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বার করে সময় বলতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ছেলেটা আমার ওড়না দিয়েই মুখ চেপে ধরল। তার পর কোমর জড়িয়ে টেনে-হিঁচড়ে রাস্তার পাশে ঝোপে ঢুকতে লাগল। আপ্রাণ হাত-পা ছুঁড়ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ওর হাতে জোরে কামড়ে দিই। হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে ও তখনই পকেট থেকে একটা মাঝারি সাইজের ছুরি বার করে আমার গলায় ঠেকিয়ে চাপা গলায় বলল, ‘‘যত পারো চেল্লাও। কেউ আসবে না।’’

আমি প্রাণপণ হাত-পা চালাচ্ছিলাম। ঝোপে ঢুকে ও আমাকে একটা অগভীর ডোবায় ফেলে দিল। কাদায় ভর্তি ছিল জায়গাটা। ততক্ষণে আমার মোবাইল ও ছিনিয়ে নিয়েছে আর আমাকে পা ধরে টেনে আরও ভিতরে ফাঁকা মাঠের মধ্যে নিয়ে যেতে চাইছে। ওখানে গেলে আমার চিৎকারও কেউ শুনতে পাবে না। এমন সময় বেশ খানিকটা দূরে, রাস্তা দিয়ে একটা বেঁটে ছেলে হেঁটে এল। ওকে দেখেই এই ছেলেটা চিৎকার করে ডাকল, ‘‘ভাই এ দিকে চলে আয় ভাই। এখানে আছে।’’ দূরের ছেলেটা একটু থমকাল। ওর মুখটা ভাল করে দেখতে পাচ্ছিলাম না। হাতে ইশারা করে ও এ বার চেঁচিয়ে বলল, ‘‘চলে আয়, চলে আয়।’’ আমার মনে হল, ও বোঝাতে চাইছে যে, কাছাকাছি লোকজন এসে গিয়েছে। আমাকে যে ছেলেটা ধরেছিল সে এ বার থমকে গেল। আমি তখন সবটুকু শক্তি জুটিয়ে ওর হাতে লাথি মারলাম। আমার মোবাইলটা ওর হাত থেকে পড়ে গেল আর ও ছুট লাগাল। কিছুক্ষণের ভিতর দু’জনেই উধাও। আমি শুনলাম, পুলিশ এটাকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে চালাতে চাইছে। ওঁরা কি এইটুকু বুঝতে পারছেন না যে, শুধু মোবাইল হাতানোর পরিকল্পনা থাকলে আমার কাছ থেকে ওটা ছিনিয়েই ছেলেটা পালাত। তা হলে আমাকে অতটা টেনে নিয়ে গেল কেন? হুমকি দিল কেন?

তা ছাড়া, একটা মেয়ে হিসেবে আমি তো সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারব যে কে আমার সঙ্গে কী করতে চেয়েছিল। ওদের ধরার ব্যাপারে পুলিশকে সব রকম সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত। ওদের যেন উচিত সাজা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

raped Lucky Jaynagar victim girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy