শিউলির অভাবে পড়ে আছে খেজুর গাছ (বাঁ দিকে)। চলছে রস সংগ্রহের কাজ (ডানদিকে)।
শীতে খেজুর রস থেকে নলেন গুড়ের স্বাদ নেননি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। যাঁরা খেজুরের রস সংগ্রহ করেন, তাঁদের ‘শিউলি’ বলা হয়। তাঁদের জীবনযন্ত্রণা অমাবস্যার অন্ধকারের মতোই নিকষ।
শিউলিদের মতে, খেজুর গুড় শিল্প ক্রমশ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে এগিয়ে চলেছে। তাঁদের আশঙ্কা, হয়তো এক দিন খেজুর গুড় ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে। সময় যত এগিয়েছে, শিউলিদের সংখ্যা কমেছে। আর এখন তা একেবারেই তলানিতে। উল্লেখ্য, বছরের অন্যান্য সময় এই সব শিউলিরা সাধারণত অন্যের জমিতে খেতমজুর বা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে পেট চালান।
উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার অন্তর্গত নূতনগ্রামে অবশিষ্ট দু-তিনজন শিউলির মধ্যে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা রামকৃষ্ণ বাছাড়ের কথায়, “লোক দিয়ে কাজ করিয়ে লভ্যাংশ বলে কিছু থাকে না। এ কাজে কোনও সরকারি সহযোগিতাও আমরা পাই না। ছোটবেলায় বাবার থেকে কাজ শিখেছিলাম। সেই মায়াতেই এখনও এই কাজ করি।”
আরও পড়ুন:বাড়ি বাড়ি বিশুদ্ধ জল পৌঁছে দিতে প্রকল্প হাসনাবাদে
অন্য দিকে আর এক শিউলি চারুপদ সরকার জানান, "শীত এলে এক রকম মনের টানেই গাছ ঝুড়ে গুড় তৈরির কাজে লেগে পড়ি। কিন্তু বয়স এখন আর সঙ্গ দিতে চায় না। নতুন করে এই কষ্টসাধ্য কাজ কেউ শিখতেও চায় না।”
আরও পড়ুন: দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দিলেন রতন
তাই সকলের অনাদর ও উদাসীনতায় এক দিন হয়ত শিউলিরা হারিয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে আক্ষেপের সুরে তিনি জানান, “বাজারে ভেজালের কারণে ভাল গুড় তৈরি করেও দাম পাওয়া যায় না। গত বছর যদিও কিছুটা দাম পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু এ বছর বাজারদর খুবই কম।’’
বনগাঁ বাজারে খেজুর গুড়ের পাটালি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা কম। অভিজ্ঞ শিউলিদের দাবি, সেগুলি খাঁটি নয়। কারণ খাঁটি খেজুর গুড় তৈরি করতে গেলে ২০০ টাকার বেশি দাম পড়বে প্রতি কেজিতে।
অতিমারিতে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থের ঘাটতি ও লাগামছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি শিউলিদের কাজেও প্রভাব ফেলেছে। শিউলিদের কথায়, ঘূর্ণিঝড় আমপানের কারণে খেজুর গাছে কমেছে রসের পরিমাণ। প্রবীণ শিউলি চারুপদ সরকার, রামকৃষ্ণ বাছাড়রা বুঝেছেন, অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ধরে শীতের আগমনে গাছেদের যে রূপ তাঁরা দেখেছেন, বিভিন্ন কারণে কোথায় যেন তা হারিয়ে গিয়েছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy