রাধানগরে কুলপি থানার বুথ। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ বললেন, ফাঁকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মদ-গাঁজার আসর বসছে।
কেউ বললেন, নদীবাঁধ ভাঙছে। বর্ষায় গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।
কেউ বললেন, ভোল্টেজ খুব কম। একটু দেখুন।
ক্যানিংয়ের পরে এ বার ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় চালু হল পুলিশি সাহায্য বুথ বা ভ্রাম্যমাণ থানা। অর্থাৎ, পুলিশ এল গ্রামে। সাধারণ মানুষ তাঁদের কাছে অপরাধ নিয়ে অভিযোগ জানানো ছাড়াও সমস্যার কথা বললেন। রবিবার, প্রথম দিনেই মহকুমার ছটি থানা এলাকা থেকে ১৭০টি অভিযোগ ও সমস্যার কথা জমা পড়েছে ভ্রাম্যমাণ থানায়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন অপরাধের খবর নেওয়া ছাড়াও পানীয় জল, নিকাশি, আলো, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো বেশ কিছু সমস্যা ভ্রাম্যমাণ থানার মাধ্যমে শুনে সেগুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হবে সমাধানের জন্য। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন এমন পরিষেবা দেওয়া হবে। জেলা পুলিশ কর্তারা মনে করছেন, এলাকায় পরিকাঠোমাগত সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মানুষের ক্ষোভ থেকেই আইনশৃঙ্খলার অবনতির মতো সমস্যা হতে পারে। এ রকম সমস্যার কথা শুনে সেগুলি ঠিক জায়গায় বলে সমাধানের চেষ্টা করলে তা এড়ানো সম্ভব হতে পারে অনেক ক্ষেত্রেই।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক আরও বাড়িয়ে তাঁদের সমস্যা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার এই অভিযান প্রায় সারা জেলা জুড়েই শুরু হয়েছে।’’
এ দিন কুলপি, ডায়মন্ড হারবার, পারুলিয়া কোস্টাল, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর, রায়দিঘি এবং ডায়মন্ড হারবার মহিলা থানা এলাকায় এক-একটি গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শোনেন ভ্রাম্যমাণ থানার পুলিশকর্মীরা।
কুলপির রামকিশোরপুর গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা চলে যান দুপুরের মধ্যেই। তারপর প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরিত্যক্ত আবাসনে মদ-গাঁজার আসর বসছে বলে ভ্রাম্যমাণ থানার পুলিশকে জানান গ্রামবাসীরা। গৃহবধূ বন্দনা হালদারের স্বামী এই নেশার চক্রে পড়েই হারিয়েছেন তাঁর নিজের দোকান-বাড়ি। এ রকম সমস্যার কথা এতদিন প্রশাসনের কাছে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। এ বার পুলিশকে এলাকায় পেয়ে সেই অভিযোগই জানালেন। বন্দনাদেবীর কথায়, ‘‘নিজে থানায় গিয়েছি শুনলে হয়তো বাড়িতে বকুনি খাওয়ার ভয় ছিল। কিন্তু এলাকায় যখন থানার বাবুরা এসেছেন, আমরা আমাদের কথা জানাতে এসেছি।’’
কেবলমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, কুলপির হারা থেকে রায়তলা এলাকায় আয়লার বাঁধে দেওয়া বোল্ডার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঢেউয়ের তোড়ে। প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীবাঁধের অংশ নষ্ট হয়ে যে কোনও দিন বানভাসি হতে পারেন প্রায় ৮-১০টি গ্রামের মানুষ। গ্রামের বাসিন্দা মহানন্দ হালদার বলেন, ‘‘এর আগে এসব কথা জানানো হয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক, সেচ দফতরকে। এ দিন আরও একবার জানাতে এলাম। যদি কাজ হয়।’’
২ নম্বর রাজারামপুর পঞ্চায়েতের কেশবনগর-সহ কয়েকটি গ্রামে রয়েছে কম ভোল্টেজের সমস্যা। এ রকম সমস্যার জেরে বার বার বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের কর্মীদের বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়। এ দিন সেই সমস্যাও শোনে পুলিশ। গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর মণ্ডল বলেন, ‘‘কেবল এই গ্রাম নয়, পাশের মনোহরপুর, হরিনারায়ণপুরের মতো এলাকাগুলিতেও রয়েছে একই সমস্যা। সেগুলিই এ দিন খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছি থানার অফিসারদের।’’ ডায়মন্ড হারবার মহিলা থানার শিবির খোলা হয়েছিল বাসুলডাঙায়। প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা ধরে মহিলাদের সমস্যার কথা পুলিশকর্মীরা খাতায় লিখে নেন।
পুলিশ কিছু করবে, আশায় রয়েছেন গ্রামবাসীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy