ভগ্নদশা: দুর্বল মাটির বাঁধ। দাবি কংক্রিটের বাঁধের। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
জলের ধাক্কায় প্রায়ই ভাঙছে নদীবাঁধ। সামাল দিতে ভাঙা বাঁধের একটু দূর থেকে গোল করে আরও একটা বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। যাকে বলা হয় রিং বাঁধ। কিন্তু তাতেও ভরসা পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
আবার কবে বাঁধ ভেঙে সর্বস্ব ভেসে যাবে সেই আশঙ্কা নিয়েই দিন কাটছে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত বালিদ্বীপের বাসিন্দাদের। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, নদীর ধার ধরে কংক্রিটের বাঁধ হবে। কিন্তু কবে তা জানেন না এলাকাবাসী।
আয়লায় তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবন লাগোয়া এই সব এলাকা। ভেসে গিয়েছিল প্রায় গোটা জনপদটাই। গত দশ বছরে একটু একটু করে ছন্দে ফিরেছে এলাকা। তবে ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি আজও তাজা এলাকাবাসীদের মনে। আয়লা পরবর্তী সময়েও অবশ্য বহুবার বাঁধ ভেঙেছে এই সব জায়গায়।
জল ঢুকে নষ্ট করে দিয়েছে চাষের জমি। রিং বাঁধ দিয়ে কোনও রকমে সামাল দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি। নদীর কাছাকাছি বাড়িগুলো আয়লায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে নদী থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে নতুন করে ঘর বেঁধেছে তাঁরা। আয়লার পরেও বাঁধ ভাঙার কারণে বসতবাড়ি ছেড়ে সরে যেতে হয়েছে একাধিক পরিবারকে।
বছর পঁয়ত্রিশর গৃহবধূ বৃহস্পতি মণ্ডল জানান, স্বামী মাছ ধরতে নদীতে গিয়েছেন। বৃদ্ধা শাশুড়ি ও মেয়েদের নিয়ে বাড়িতেই থাকেন বৃহস্পতি। বাঁধের কথা জিজ্ঞেস করতেই চোখেমুখে একরাশ আশঙ্কা ফুটে ওঠে তাঁর। বলেন, ‘‘নদীর ধারে বাড়ি ছিল আমাদের। আয়লায় সব ভেসে যায়। তারপর বহু বছর ছোট্ট ঘরে কোনও রকমে দিন কাটিয়ে বছর দু’য়েক হল এই বাড়িটা করেছি। বাঁধ নিয়ে তো সবসময়ই ভয়ে ভয়ে থাকি।’’ জল বাড়লেই সর্বনাশ। কংক্রিটের বাঁধ হলে একটু নিশ্চিন্ত হন তাঁরা।
বৃহস্পতির শাশুড়ি বৃদ্ধা জানকি বলেন, ‘‘সে যা দিন গিয়েছে আমাদের, তা বলার নয়। খাওয়ার জল নেই। পড়ার কাপড় নেই। খোলা আকাশের নীচে দিন কেটেছে। সে দিন যেন ভগবান আর কখনও না দেন।
ভাঙা নদী বাঁধের ধারেই জমিতে চাষ করছিলেন বছর সত্তরের জগদীশ। বললেন, ‘‘আয়লায় তো আমার জমি পুরো জলের তলায় চলে গিয়েছিল। দু’বছর চাষ করতে পারিনি। পরেও অনেকবার জল ঢুকেছে। এই তো বাঁধের অবস্থা। যে কোনও দিন আবার জল ঢুকতে পারে। বাঁধ কংক্রিট হবে শুনে আসছি বহুদিন। হচ্ছে আর না।’’
গ্রামের মানুষগুলির মনে বাঁধের আতঙ্ক এখনও কাটেনি। সবার আবেদন, আর যাই হোক, বাঁধ যেন না ভাঙে। কিন্তু মাটির বাঁধের স্থায়িত্ব যে বেশি নয় তাও বিলক্ষণ জানেন তাঁরা। ছোট খাটো জল ঢোকার ঘটনা তো প্রায় নিত্যই ঘটছে। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, একটু বড় ধরনের দুর্যোগ হলে আবার ভাসবে গ্রাম।
সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘আয়লার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকাকালীন সুন্দরবন এলাকায় স্থায়ী কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩০০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসেন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তার একটা অংশ এসেছিল। তা দিয়ে প্রাথমিক কিছু কাজকর্ম হয়। ইতিমধ্যে কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তারা ওই প্রকল্পের টাকা দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন না। সে কারণেই কাজটা থমকে আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy