গাইঘাটায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
পুরুষরা পারলে কেন মহিলারা পারবে না?
এই নিয়ে আলোচনায় একদিন জোর তর্ক বেধে যায়। তারপরেই গ্রামের মহিলারা ঠিক করেন, দুর্গাপুজের আয়োজন করে পুরুষদের তাক লাগিয়ে দেবেন তাঁরা। সেই জেদকে সামনে রেখেই গত ন’বছর আগে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা সন্দেশখালির ন্যাজাটে বারোয়ারি দুর্গাপুজো করার পরিকল্পনা করেছিলেন স্থানীয় মহিলারা। প্রমিলা বাহিনী পরিচালিত ‘আনন্দময়ী’ শুরু করেছিল দুর্গাপুজো। এ বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের পরিকল্পনায় মণ্ডপে উঠে এসেছে বিশ্ব বাংলার থিম। বাউলের আঙ্গিকে সামনে রেখে মণ্ডপ গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিমার আঙ্গিকেও বাউলের ছোঁয়া লেগেছে।
উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম ঘর-সংসার সামলে চাঁদা তুলতে বেরনো বেশ কষ্টকর ছিল। সে সময়ে অনেকেই বলতেন, সব কাজ কি আর মেয়েদের দিয়ে হয় নাকি? তা শুনে কিন্তু মেয়েদের জেদ আরও বাড়ত।’’ পুজো ছাড়াও সারা বছর নানা সামাজিক কাজ করেন মেয়েরা।
আনন্দময়ীর পক্ষে মন্দাকিনী মাহাতো, শীলা বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘আমাদের উৎসাহ আর সেবামূলক কাজ দেখে এখন অনেকেই নিজেরা মণ্ডপে এসে চাঁদা দিয়ে যান।’’
বসিরহাটের ভবাণীপুরেও দু’টি মহিলা পরিচালিত ক্লাব আছে, যারা দুর্গাপুজো করছে। একটি ‘অভিযাত্রী’ অন্যটি মৈত্রী সঙ্ঘ।
একটা সময়ে চাঁদার টাকা জোগাড় করে পুজো চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন গ্রামের পুরুষেরা। ব্যাপারটা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন অপর্ণা দাস, রাখি দাস, আশালতা কুলিয়া, অনিমা দাস, ভারতী দাসের মতো কয়েকজন মহিলা। তাঁরাই পুজোর আয়োজন করবেন বলে প্রস্তাব দেন।
সেটা ২০১৪ সালের কথা। সেই থেকে গাইঘাটার জলেশ্বর শারদীয়া সর্বজনীন দুর্গা উৎসব কমিটির পুজো মহিলারই আয়োজন করে আসছেন। পুরুষেরা পাশে থেকে সাহায্য করলেও পুজোর যাবতীয় আয়োজন করেন মহিলারাই।
পুজো কমিটির সম্পাদক অপর্ণা বিশ্বাস গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। একজন আছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বাকিদের বেশিরভাগই গৃহবধূ।
কাল্পনিক মন্দিরের আদলে এ বার পুজো হচ্ছে স্থানীয় জলেশ্বর শিব মন্দির ও পর্যটন উন্নয়ন কমিটির মাঠে। প্রতি রাতে চারজন করে মহিলা মণ্ডপ পাহারা দেবেন। অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘আমরা মহিলারা এলাকার পুজোর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছি। এর থেকে বড় কথা আর কী হতে পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy