Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

সাহসী অস্ত্রোপচার হাবড়ায় 

জরায়ুর পাশে থাকা ফেলোপিয়ান টিউব ফেটে গল গল করে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নেমে গিয়েছিল চার-এ।  

স্বামীর সঙ্গে শেফালি রায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

স্বামীর সঙ্গে শেফালি রায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

হাবড়া
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫২
Share: Save:

জরায়ুর পাশে থাকা ফেলোপিয়ান টিউব ফেটে গল গল করে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নেমে গিয়েছিল চার-এ।

হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি বছর পঁয়ত্রিশের শেফালি রায়ের শারীরিক অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি তাঁকে বারাসত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অবস্থা এতটাই খারাপ, পথেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু হাবড়া হাসপাতালে এমন কাজ আগে হয়নি। কিন্তু অন্যত্র পাঠানো মানে আরও ঝুঁকি। সাতপাঁচ ভেবে চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন, অস্ত্রোপচার হবে এই হাসপাতালেই।

হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘মহিলার শারীরিক অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে রাস্তায় মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে এখানে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়।’’ চিকিৎসক-নার্স সকলের চেষ্টায় অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এখন ওই মহিলা সুস্থ আছেন।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় অশোকনগরের রাধা কেমিক্যাল এলাকার বাসিন্দা শেফালি হাবড়া হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাতে আসেন। তাঁর পেটে ব্যথা হচ্ছিল। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে দেখে ওষুধ দেন। বাড়ি ফিরে রাতে ফের যন্ত্রণা শুরু হয়। ভোরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখে ঘাবড়ে যান চিকিৎসকেরা। তাঁরা দেখেন, জরায়ুর পাশে ফেলোপিয়ান টিউব ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। শঙ্কর জানান, বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, রোগী নিয়ে আসাটা ঝুঁকির। সুব্রতই পরামর্শ দেন, দ্রুত হাবড়া হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে টিউবটি বেঁধে দিতে। না হলে রোগী মারা যেতে পারেন।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হিমোগ্লোবিন থাকার কথা ১৩-১৪। তা সাতে নেমে গেলেই রোগীকে আর অজ্ঞান করা হয় না। এ ক্ষেত্রে মহিলার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল ৪। পাশাপাশি অস্ত্রোপচার সফল না হলে রোগীর আত্মীয়ের ক্ষোভের মুখে পড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। শঙ্কর বলেন, ‘‘বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার আমাদের ভরসা ও সাহস দেন। এরপরেই আমরা অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করি।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসক সঞ্জীব সাহা, অরূপ বসু ও অমিত বাইন ও সুপারের নেতৃত্বে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অস্ত্রোপচার শুরু হয়। শেষ হয় রাত ৮টায়।

বারাসত হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘রোগিনীর পরিস্থিতি শুনে বুঝেছিলাম, হাবড়া থেকে এতটা পথ আনতে আনতে বিপদ ঘটে যেতে পারে। অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিই। এ-ও বলি, প্রয়োজনে অন্য সব রকম সাহায্য করা হবে।’’ বারাসত হাসপাতাল থেকে সঙ্গে সঙ্গে ২ বোতল রক্ত পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন সুব্রত। অস্ত্রোপচারের পর দিন রোগিনীর কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। টেলিফোনে সে ব্যাপারেও হাবড়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত।

শেফালির স্বামী গোবিন্দ বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা ও সুপার অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। বারাসত হাসপাতালেরও সাহায্য পেয়েছি। ওঁদের জন্যই স্ত্রী এখন সুস্থ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Hospital Operation Risk Successful
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE