Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Crisis

শিউলি অমিল, ভাটার টান নলেন শিল্পে

গাছ কমলেও নলেন গুড়, পাটালির চাহিদা কমেনি।

নিকেশ: এ ভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে বহু খেজুর গাছ। নিজস্ব চিত্র।

নিকেশ: এ ভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে বহু খেজুর গাছ। নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:০৭
Share: Save:

এক সময়ে খেজুরের রস জ্বাল দেওয়ার গন্ধে শীতকালের সকাল ম ম করত বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায়। সন্দেশখালি, মিনাখাঁ, হাড়োয়া, হাসনাবাদ এলাকায় পুরো শীতকাল খেজুর গুড় কুটির শিল্প ছিল। সে দিন যে আর নেই, তা মাঠঘাটের চেহারাতেই বোঝা যায়। এখন খেজুর গাছের সারি আর তেমন চোখেই পড়ে না।

এলাকার বেকার যুবকেরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন্ রাজ্যে। ফলে এখন আর শিউলি (যারা গাছ কেটে খেজুর রস সংগ্রহ করেন) মেলে না এলাকায়। ভিন্ জেলা থেকে শিউলিদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় খেজুর গাছের মালিকদের। তবে গাছ কমলেও নলেন গুড়, পাটালির চাহিদা কমেনি। ফলে চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে গুড়ে ভেজাল মিশছে। আবার নিজস্ব শিউলি না থাকায় গাছের মালিকদের তেমন আয় হচ্ছে না। সব মিলিয়ে নানান সমস্যায় জর্জরিত এখানকার গুড় শিল্প।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিউলির অভাবে এক সময়ে গুড় শিল্প বন্ধ হতে বসেছিল এলাকায়। বছর চারেক আগে পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে শিউলিরা এসে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করায় কিছুটা জোয়ার এসেছে কাজে। দুই জেলার শিউলিরা এসে তিন মাস এই সব এলাকায় তাঁবু খাটিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ গাছের মালিকেরা তাঁদের দিয়ে রস পাড়িয়ে গুড় তৈরি করিয়ে নেন। তৈরি গুড়ের একটি অংশ শিউলিদের দিতে হয়।

গাছ-মালিকদের একাংশ আবার খেজুর রস শিউলিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়ে নিজেরা গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। অল্প সংখ্যক মানুষ সরাসরি বসিরহাট বা কলকাতার বাজারে গুড় বিক্রি করেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু ব্যবসায়ী গুড় কিনে নিয়ে কলকাতায় সরবরাহ করেন। তাঁরা চড়া দামে বাজারে গুড় বিক্রি করলেও চাষিরা দাম পান না বলে অভিযোগ।

সংগ্রামপুর, ইটিন্ডার বাসিন্দা নারায়ণ কর, আব্বাসউদ্দিন গাজিরা জানান, সাধারণত ৭-৮ হাঁড়ি রস জ্বাল দিলে এক কেজি পাটালি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফড়েরা গ্রামে এসে ৫০-৭০ টাকা কেজি দরে পাটালি কিনে শহরের বাজারে দেড়শো-দু’শো টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। ফলে নিজের গাছ নিজে কেটে পাটালি করলে ১০-২০ টাকা লাভ হলেও শিউলি দিয়ে গাছ কাটিয়ে পাটালি করলে প্রায় কিছুই থাকে না।

অভিযোগ, বাড়তি লাভের জন্য অনেকেই গুড়ে ভেজাল মেশাচ্ছেন। গ্রামবাসীরা জানান, একটা সময়ে লক্ষ লক্ষ খেজুর গাছ ছিল এলাকায়। তখন গাছ ইজারা দেওয়া হত। এখন গাছ ইজারা দিলে পুরো মরসুমে গাছ পিছু মালিকেরা হাজারখানেক টাকা পান। এলাকায় আগে শিউলির কাজ করতেম ইনসান আলি। তিনি বলেন, “এই পেশায় থেকে এখন আর সংসার চলে না। তাই পেশা ছেড়ে বাইরে কাজ নিয়েছি।”

বসিরহাট মহকুমায় এক লক্ষেরও বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। খেজুর গাছ কাটা থেকে গুড় এবং তা থেকে মিষ্টি বা পেঁড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত ৪০-৫০ হাজার মানুষ। প্রতিদিন বসিরহাট থেকে ১৪ হাজার কেজি নলেন গুড় কলকাতায় যায়। ১০ হাজার নলেন গুড়ের সন্দেশ ও রসগোল্লা কলকাতার বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয় বলে জানালেন বসিরহাট মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হরিপদ দাস।

অন্য বিষয়গুলি:

Crisis Nalen Gur dates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy