Advertisement
E-Paper

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি মহিলাকে, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, গুজবের জেরে রণক্ষেত্র বারাসত

যে মহিলা এবং তাঁর সঙ্গীকে গণপিটুনি দেওয়া হয়, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ানো এবং গণপিটুনির ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করার অভিযোগে কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় পুলিশ আধিকারিকেরা।

ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় পুলিশ আধিকারিকেরা। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ১৪:৫১
Share
Save

ছেলেধরা সন্দেহে এক মহিলা এবং তাঁর সঙ্গীকে গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘিরে আবার উত্তপ্ত বারাসত। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ উত্তেজিত জনতার বিরুদ্ধে। লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। গুজব ছড়ানো এবং মোবাইলে ওই ঘটনার ছবি তোলার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে।

সম্প্রতি কাজিপাড়ায় ১১ বছরের বালককে শ্বাসরোধ করে খুনের ঘটনার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। পুলিশের হস্তক্ষেপে তখনকার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু বারাসত জুড়ে গুজব ছড়ানো শুরু হয় ছেলে চুরির। সেই গুজবের জেরেই বুধবার সকালে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বারাসত। স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার সকালে বারাসত কামাখ্যা মন্দির সংলগ্ন এলাকায় অটোয় উঠতে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। সঙ্গে ছিলেন আরও এক জন। সেই সময় আচমকাই তাঁকে ছেলেধরার তকমা দিয়ে মারধর শুরু করে জনতা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভিড় জমে যায়। সকলেই ‘ছেলেধরা’কে দেখতে চান। গণপিটুনির খবর পেয়ে অকুস্থলে চলে আসে পুলিশ। কিন্তু উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপরেই পাল্টা চড়াও হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

স্থানীয় কাউন্সিলর সমীর তালুকদার বলেন, ‘‘কোনও ভিত্তিই নেই। সম্পূর্ণ সন্দেহের বশে এই সব করা হচ্ছে। আমরা জনপ্রতিনিধিরা রাস্তায় আছি। কামাখ্যা মন্দিরের কাছে দু’জনকে খুব বাজে ভাবে মারধর করা হয়েছে। রক্তারক্তি অবস্থা। কিছু উৎসাহী ছেলে সমাজমাধ্যমে মিথ্যে খবর ভাইরাল করছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করছে। এরাই বিষয়টিকে ছড়াচ্ছে। প্যানিক ছড়ানো হচ্ছে।’’

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বারাসতের এসডিপিও বিদ্যাগার আজিংকাকে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘গুজবে বিশ্বাস করবেন না। এটা পুরোপুরি গুজব। কাজিপাড়ায় যে ঘটনা ঘটেছিল, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই নেই। বাচ্চাচুরির যে গল্প ছড়াচ্ছে, তা সম্পূর্ণ গুজব। সেই গুজবকে বিশ্বাস করে গোলমাল চলছে। আমি আবারও বলছি, গুজবে বিশ্বাস করবেন না। এখানে প্রতিটি বাচ্চা নিরাপদে আছে।’’ পরে পুলিশ আধিকারিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সবার বাচ্চা নিরাপদে আছে। কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাচ্চাচুরির গুজব ছড়াচ্ছেন। এই কথায় দয়া করে কেউ বিশ্বাস করবেন না। অকারণে কিছু মানুষ অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন। আজ একটি গুজব ছড়িয়েছিল যে, বাচ্চাচোর পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু উনি বাচ্চাচোর নন। একটি বাচ্চাও নিখোঁজ নয়। এই গুজবের উপর ভিত্তি করে দু’জনকে মারধর করা হল, এটা একদমই ঠিক নয়। যাঁরা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যে মহিলা এবং তাঁর সঙ্গীকে গণপিটুনি দেওয়া হয়, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ানো এবং গণপিটুনির ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করার অভিযোগে কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন কাজিপাড়ার একটি বালক বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তার পর আর ঘরে ফেরেনি সে। গত বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশে একটি শৌচাগার থেকে বালকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের পরিজনের অভিযোগ ছিল, তাঁদের বাড়ির ছেলেকে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেটে নেওয়া হয়েছে তার কিডনি, উপড়ে নেওয়া হয়েছে চোখ। যদিও পুলিশ সুপার সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্তে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, তার পর থেকেই বারাসত জুড়ে বাচ্চাচুরির গুজব ছড়ানো শুরু করেন কয়েক জন। বিভিন্ন মনগড়া তথ্য এবং ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। তারই পরিণতিতে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হলেন এক মহিলা-সহ দু’জন।

West Bengal Police Rumours Tension

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}