কয়েক দিন আগেই ভোটার তালিকায় ‘ভুয়ো নাম’ ঢোকানো নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই মাঝে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে প্রায় ৪ হাজার ‘ভূতুড়ে ভোটার’কে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শোরগোল। তৃণমূলের অভিযোগ, নেপথ্যে বিজেপির কারসাজি রয়েছে। পাল্টা বিজেপি এবং সিপিএম আঙুল তুলেছে তৃণমূলের দিকে।
চম্পাহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২টি সংসদে সাড়ে চার হাজার বাড়তি ভোটার মিলেছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের নিরিখে ওই ভোটারের সংখ্যাবৃদ্ধির তথ্য জানা গিয়েছে। চম্পাহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অসিতবরণ মণ্ডল জানিয়েছেন, প্রশাসনের নির্দেশমাফিক তাঁরা ভোটার তালিকা ‘স্ক্রুটিনি’ করার সময় দেখেন প্রতিটি সংসদেই প্রচুর ‘ভুয়ো’ ভোটার রয়েছেন। বিভিন্ন সাইবার তালিকা থেকে নাম তোলা হয়েছে। যেমন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা— শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, মালদহ থেকে প্রচুর ভোটারের নাম রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোটার তালিকায়। ভোটার তালিকায় ওঠা ওই নামের পাশে থাকা ফোন নম্বরে ডায়াল করে নিশ্চিত করা গিয়েছে, ওই লোকজন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোটার নন।
পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি বিডিও-র কাছে উত্থাপন করবেন। সমস্যার সমাধান না হলে আন্দোলন করবেন। তৃণমূলের অভিযোগ, এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের গাফিলতি স্পষ্ট। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের। বারুইপুর তৃণমূল ব্লক সভাপতি শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতিটি বিধানসভাতেই ভুয়ো ভোটার ঢোকানো হয়েছে। আমাদের সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আগামী সাত দিন শুধুমাত্র ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে যুক্ত থাকার জন্য।’’
আরও পড়ুন:
বস্তুত, দিন কয়েক আগে তৃণমূলনেত্রী মমতা অভিযোগ করেছিলেন ভুয়ো ভোটার নিয়ে। তাঁর কথায়, “আমার কাছে খবর রয়েছে, স্থানীয়রা বলার পরেও বহু এলাকায় বিএলও-রা ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম রেখে দিয়েছেন। অনেকে বহু দিন এলাকা থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তাঁদের নামও রেখে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি এ নিয়ে সতর্ক করেন প্রশাসনের লোকজনকে। মহারাষ্ট্র, দিল্লি বিধানসভার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কমিশনকে হাত করে ভোটার তালিকায় অনলাইনে নাম তুলেছে বিজেপি। তার আড়ালে বিহার, উত্তরপ্রদেশের লোকেদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে তালিকায়।
অন্য দিকে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, এ রাজ্যে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ অনেক দিনের। তিনি রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ভূতুড়ে ভোটারের ভোটে নির্বাচিত এই সরকার।’’ বিজেপির যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনোরঞ্জন জোয়ারদারও তৃণমূলকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কর্মীরাই নির্বাচন কমিশনের হয়ে ভোটার তালিকার কাজ করেছেন। তাঁরাই এই কাজ করেছেন।’’ রাজ্য সরকারের কর্মীদের তৃণমূল প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ভূতুড়ে ভোটারের বিষয় প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে ‘সেটিং’-এর কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘বাংলা সচেতন। এখানে এসব কারচুপি আর কুৎসা সফল হবে না।’’