একই দিনে দু’টি আলাদা বাড়ি থেকে উদ্ধার হল এক তরুণী ও এক যুবকের মৃতদেহ। তাঁরা সম্পর্কে মামি ও ভাগ্নে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মৃত্যুর আগে তাঁরা ভিডিয়ো কলে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। যার ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, দু’জনেই সম্ভবত আত্মঘাতী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে মনে করছে পুলিশ। সেই সংক্রান্ত টানাপড়েনের জেরেই তাঁরা আত্মঘাতী হয়েছেন কিনা, আপাতত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে, বজবজের উত্তর রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাইকপাড়া এলাকায়। মৃতদের নাম অনন্যা সর্দার (৩০) ও রকি বাগ (২৬)। তাঁদের মোবাইল ফোন দু’টি বাজেয়াপ্ত করার পরে পরীক্ষা করে দেখছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, অনন্যা ও রকির আত্মীয়স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে বজবজ থানা এলাকার নন্দনপুরের বাসিন্দা অনন্যার সঙ্গে পাইকপাড়ার রঞ্জিত সর্দারের বিয়ে হয়েছিল। অনন্যার পরিবার
সূত্রে দাবি, তাঁরা প্রেম করে নিজেদের সম্মতিতেই বিয়ে করেছিলেন। দুই পরিবারেরও সম্মতি ছিল বলে জানিয়েছেন রঞ্জিতের মা দীপ্তি। রঞ্জিত ও অনন্যার আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। রঞ্জিতের একটি মোটরবাইক মেরামতির দোকান রয়েছে। তাঁর মা দীপ্তি পরিচারিকার কাজ করেন।
মঙ্গলবার সকালে দীপ্তি বলেন, ‘‘সোমবার সন্ধ্যার পরে নাতনিকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। রাতে বাড়ি ফিরে দেখি, ঘরের দরজা বন্ধ। অনেক ধাক্কাধাক্কি করা সত্ত্বেও কেউ দরজা খোলেনি। এর পরে প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানাই। ওঁরা আসার পরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরে দেখি, অনন্যা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।’’ প্রতিবেশীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা অনন্যাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার কিছু ক্ষণ পরেই জানা যায়, রকিও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রকি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। শারীরচর্চার অভ্যাস ছিল তাঁর। রঞ্জিতের এক তুতো সম্পর্কের দিদির ছেলে তিনি। রঞ্জিতের বাড়িতে যাওয়া-আসা ছিল রকির। সম্ভবত সেই সূত্রেই অনন্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় তাঁর। অনন্যা রকিকে প্রায়ই রান্না করে খাওয়াতেন বলে খবর।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িতে আসা ছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে অনন্যা ও রকি পরস্পরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতেন। মাস দুয়েক ধরে রকি অফিসে যাচ্ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে। অনন্যাদের বাড়িতে খুব ঘন ঘন আসছিলেন তিনি। প্রতিবেশীদের দাবি, অনন্যার জন্য নানা রকম জিনিস কিনে আনতেন রকি। প্রচুর টাকা খরচ করতেন।
তবে, ঠিক কী কারণে ওই দু’জন হঠাৎ আত্মঘাতী হলেন, তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন
তদন্তকারীরা। তাঁদের ফোনের কল রেকর্ড যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি, তাঁদের আত্মীয় ও পরিচিতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)