মৃত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। —নিজস্ব চিত্র।
কখন কোথায় যান, কোন সময়ে বাড়িতে ঢোকেন, ঠিক কোন সময়ে একা থাকেন সইফুদ্দিন লস্কর— তৃণমূল নেতার গতিবিধির খুঁটিনাটি দেখার জন্য তাঁর বাড়ির পাশেই একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন এক অভিযুক্ত। জয়নগরের তৃণমূল নেতা খুনে নয়া তথ্য পেল পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জয়নগরের বামনগাছির যে জায়গায় সইফুদ্দিনের প্রাসাদোপম বাড়ি আছে, তার একটু দূরেই কয়েক দিন ধরে থাকছিলেন ডায়মন্ড হারবারের এক যুবক। সোমবারই শাহরুল শেখ নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তৃণমূল নেতার খুনে বিভিন্ন তথ্য মিলছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ সূত্রে খবর, বছর তেইশের শাহরুল চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের খাতায় আগেও তাঁর নাম উঠেছে। আবার দর্জির পেশাতেও তিনি যুক্ত। ডায়মন্ড হারবারের নেতড়ার বাসিন্দা ওই শাহরুলকেই রাখা হয় সইফুদ্দিনের উপর নজর রাখার জন্য। পুলিশি জেরায় শাহরুল জানিয়েছেন, তিনি ‘নতুন কাজের বরাত’ পান কিছু দিন আগে। তাঁকে বলা হয়, একটি ‘চুরির কাজ’ আছে। তাই একটি বাড়িতে নজর রাখতে হবে। রাজি হয়ে যান ওই যুবক। তার পর তিনি চলে আসেন বামনগাছি এলাকায়। সোমবার তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের সময় তিনিও ছিলেন। পুলিশের দাবি, শাহরুলই খবর দিতেন যে, কখন নমাজ পড়তে মসজিদে যান সইফুদ্দিন। তাঁর কথা মতোই ‘অপারেশন’-এর সময় ঠিক করে নেন।
জয়নগরের ‘প্রভাবশালী’ তৃণমূল নেতা খুনে যে ভাড়াটে খুনি রয়েছে, তা আগেই আন্দাজ করেছে পুলিশ। আততায়ীদের গুলি করার দিন, ক্ষণ এবং অপারেশনের ধরন দেখে তদন্তকারীরা বুঝে যান, খুনের নেপথ্যে কোনও ‘পাকা মাথা’ রয়েছে। এ-ও জানা যায়, ওই খুনে এক লক্ষ টাকা সুপারি দেওয়া হয়েছিল। সেই ভাড়াটে খুনিদের খোঁজ চলছে। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় দু’জনের হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছে পুলিশ। অন্য দিকে, শাহরুলকে মঙ্গলবারই বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, জয়নগরকাণ্ডে মোট তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে। একটি তৃণমূল নেতার খুন, দ্বিতীয়টি পিটিয়ে মারার ঘটনা এবং তিন নম্বর হল এলাকার কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং লুটপাটের অভিযোগে।
তৃণমূল নেতার খুনের পরে সাহাবুদ্দিন নামে যাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁর বাড়ি জয়নগরের গোদাবর এলাকায়। সাহাবুদ্দিন দর্জির কাজ করতেন। শাহরুলও অন্য সময়ে সেলাই-ফোঁড়াইয়ের কাজ করতেন। সেই সূত্রেই দু’জনের মধ্যে আলাপ। যদিও মৃত সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী জরিনা বিবির দাবি, তাঁর স্বামী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন এবং তাঁরা তৃণমূল করেন। মৃতের মেয়ে রুবিয়ার কথায়, ‘‘আইন-আদালত থাকা সত্ত্বেও কেন একজনকে এ ভাবে পিটিয়ে মারা হল! আমরা বিচার চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy