Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Joynagar Murder

মুহুরি থেকে ডাকমাস্টার, ‘ঘরজামাই’ হয়ে তৃণমূলে উত্থান সইফুদ্দিনের, তাঁর খুনেই তাণ্ডব জয়নগরে!

বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। মুহুরির কাজ করার সুবাদে পুলিশের সঙ্গে বেশ ভাল চেনাজানা তাঁর। তবে সইফুদ্দিনের রাজনীতিতে এসে পড়াটা আচমকাই, জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্ব।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:০৩
Share: Save:

বাড়ি থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে মসজিদে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। আচমকা হামলা। গুলির শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এসেছিলেন। রক্তাক্ত দেহটি তুলে দৌড়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে। আর তার পরেই জোর উত্তেজনা এলাকায়। চলল একের পর এক বাড়ি জ্বালানো। গণপিটুনিতে মৃত্যু হল এক জনের। যিনি ‘অভিযুক্ত’ বলে দাবি স্থানীয়দের। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার বামনগাছির ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, সইফুদ্দিনের খুন রাজনৈতিক নয়, আছে ব্যক্তিগত শত্রুতা। কিন্তু কে এই সইফউদ্দিন? যার জন্য কালীপুজোর পরের দিনই জ্বলে উঠল গোটা গ্রাম?

জয়নগরের মহিষমারিতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সইফুদ্দিনের। কর্মজীবনের শুরুতে বারুইপুর আদালতে মুহুরির কাজ করতেন তিনি। বিয়ে হয় সরিফা বিবি লস্করের সঙ্গে। স্থানীয়েরা বলেন, তার পরেই নাকি তরতর করে ‘উন্নতি’ হয়েছে সইফউদ্দিনের। বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। মুহুরির কাজ করার সুবাদে পুলিশের সঙ্গে বেশ ভাল চেনাজানা তাঁর। তবে সইফুদ্দিনের রাজনীতিতে এসে পড়াটা আচমকাই বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। বস্তুত, ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হতেই তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন সইফুদ্দিন। কিছু দিনের মধ্যে মুহুরির কাজ ছেড়ে দেন। তার পর জয়নগর থানায় ডাকমাস্টারের কাজ শুরু করেন তিনি। প্রতিবেশীরা বলছেন, তখন থেকেই এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাকে সইফুদ্দিনের। ক্রমশ শাসকদলের আরও ঘনিষ্ঠ হন। ২০১৮ সালে বামনগাছি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয় সইফুদ্দিনকে। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পান স্ত্রী। জেতার পরেই স্ত্রী হন পঞ্চায়েত প্রধান। তার পর থেকে পুরো পরিবারের চালচলনই নাকি বদলে যায়। সইফুদ্দিনের এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘এলাকায় ওর কথাতেই সব চলত।’’

২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে স্ত্রীর পাশাপাশি নিজেও ভোটে দাঁড়ান সইফুদ্দিন। এ বার সস্ত্রীক ভোটে জেতেন। এ বারও বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন স্ত্রী সেরিফা। মৃত সইফুদ্দিনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, ‘‘রোজ লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হত ওঁর হাত ধরে। জীবনযাত্রাতেও বদল আসে। এখন আর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন না সইফুদ্দিন। চোখধাঁধানো বাড়িও তৈরি করেছেন।’’ যদিও সইফুদ্দিনের ব্যবসা ঠিক কিসের, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের দাবি, ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে খুন হয়েছেন তিনি। কিন্তু, তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিনের খুনের ঘটনায় শুরু হয় রাজনৈতিক হিংসা। তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ২০-২৫ টি বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। লুটপাট হয়েছে। পরিবারের মহিলাদের মারধর করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, বেছে বেছে শুধুমাত্র সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন খুন হয়েছেন। মাফিয়া নেতা বলে ওঁকে এলাকায় সবাই চেনেন। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাফিয়ারাজ চলে। বখরার লড়াইয়ের কথা কে জানে না! যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে এর জন্য অন্য কারও ঘাড়ে দোষ চাপানোর মানে হয় না। দু’জন ধরা পড়েছে। এক জনের হাতে খুন হয়েছেন। তিনিও তৃণমূল। মৃতের পরিবারের সদস্যেরা তো তৃণমূলেরই নেতা। তাঁরা তো দলের কথা অনুযায়ী সিপিএমের ঘাড়েই দোষ চাপাবেন। কারও ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে প্রকৃত খুনিকে খুঁজে বার করা হোক। যথাযথ তদন্ত হোক।’’

অন্য দিকে, ঘটনার খবর পেয়েই পদ্মেরহাট হাসপাতালে ছুটে আসেন স্থানীয় বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দার। তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীরাই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত দু’জনকে ধরতে পেরেছে। হাসপাতালে আসেন জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস। তিনি এই খুনের দায় চাপান বিজেপি এবং সিপিএমের উপরে। আর এক তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লার অভিযোগ, ‘‘লোকসভা ভোটে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে জেনেই এই খুন পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে।’’

খুনের ঘটনা এবং এই হিংসা প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানান, মোট দু’টি বাইকে চার জন এসেছিলেন। তার পর গুলি চলে। এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এক জন মারা গিয়েছেন। অন্য দিকে, স্থানীয় জনতার দাবি, তাঁরা পিটিয়ে মেরেছেন। যদিও পুলিশ জানিয়েছে কী কারণে মৃত্যু, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’টি দেহই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy