ঠেক: এই জলাজমির আড়ালেই চলে চোলাইয়ের ব্যবসা। নিজস্ব চিত্র
ঘিঞ্জি শিল্পাঞ্চলের মধ্যেই বড় বড় জলা ঘেরা গ্রামের পরিবেশ। ছোট ছোট ঘর, গাছপালা। তারই ফাঁকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চোলাই মদের ভাটি। গোটা রাজ্যে অন্যতম বড় চোলাইয়ের ভাটি ছিল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে।
ব্যারাকপুর ২ ব্লকের ঘোলার বিলকান্দা (১) ও (২) পঞ্চায়েতের জলা-গাছপালায় ঘেরা এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই খেতমজুর। মূল পেশা মাটির জিনিসপত্র ও প্রতিমা গড়া। পাশাপাশি, উপরি রোজগারের জন্য অনেকেই চোলাইয়ের ভাটি খুলেছিলেন। পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তা বাড়তে সময় লাগেনি। প্রায় একশো পরিবারের কাছে এই ব্যবসাই হয়ে উঠেছে রুটি-রুজির মাধ্যম। পুলিশ ও আবগারি দফতর তল্লাশি চালাতে গেলেই চোলাইয়ের কলসি লুকনোর সব চেয়ে নিরাপদ জায়গা ছিল কচুরিপানা বোঝাই জলা। ফলে, প্রতি বারই খালি হাতে ফিরতে হতো প্রশাসনের কর্তাদের।
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে বিষয়টি নজরে আসে আবগারি ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের। তাঁর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে ওই দুই পঞ্চায়েত। গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনেন তিনি। সেই মতো ওই এলাকার স্কুল ও ক্লাবে ক্লাবে গিয়ে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়। তাতে ছিলেন স্থানীয় বিডিও ও পঞ্চায়েত প্রধানরাও। বিলকান্দা, লেনিনগড়, তালবান্দা, শহরপুর ঘুরে ঘুরে মাস ছয়েক ধরে জনমত তৈরি করেন তাঁরা।
বিলকান্দা (১) পঞ্চায়েত এলাকার শহরপুরের বাসিন্দারা গত ডিসেম্বরে রীতিমতো শপথ করে চোলাই ভাটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। অন্য দিকে বিলকান্দা (২)-এ কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি চলতে থাকে আবগারি দফতরের তল্লাশি অভিযান। ৫৭টি ভাটি আর কয়েক হাজার লিটার চোলাই মদ নষ্ট করে প্রশাসন। জলাগুলির কচুরিপানা পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১০০ দিনের প্রকল্পে পুকুর সংস্কার, নিকাশি নালা ঠিক করা ও অন্য কাজে যুক্ত করা হয় চোলাই ভাটির কর্মীদের।
প্রশাসনের কর্তাদের কথায়, ‘‘উৎসাহী পরিবারগুলোকে নিশ্চিত রোজগারের দিশা দেওয়া হয়েছে। বাকিরা তার পরে এগিয়ে আসতে দেরি করেননি।’’ রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার মহিলাদের মধ্যে ৮৭ জনকে হাঁস-মুরগি পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাঁচ জনকে ব্যাঙ্ক ঋণ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে দোকান করার জন্য। এ ছাড়া অন্য ব্যবসায় সহায়তা, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে নিযুক্ত করা হয়েছে চোলাই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোকে।
সম্প্রতি এমনই ১০০টি পরিবারকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয় লেনিনগড়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অমিত মিত্র ও প্রশাসনিক কর্তারা। অমিতবাবু বলেন, ‘‘বিলকান্দার ছবিটা বদলে গিয়েছে। এটা আমাদের সবার সাফল্য। পশ্চিমবঙ্গে বিলকান্দা মডেল হতে পারে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা শক্তি দাস, সীমা বিশ্বাস, রত্না সরকাররা বলছেন, ‘‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা সুস্থ জীবন পাবে, এই আশাতেই নতুন পেশায় যাওয়া।’’
তবে, চোলাই-ব্যবসা থেকে এই পরিবারগুলিকে সরানোর উদ্যোগ আগেও দেখেছে বিলকান্দা। কিন্তু কিছু দিন পরেই ফিরে এসেছে পুরনো ছবি। এ বারেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy