অসতর্ক: লক্ষ্মীপুজোর কেনাকাটায় এমন ভিড় দেখা গিয়েছিল বনগাঁয়। নিজস্ব চিত্র।
বিজয়া দশমীর পরের আটদিনে (১৬ থেকে ২৩ অক্টোবর) উত্তর ২৪ পরগনায় জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। এই সময়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬৩ জন। পুজোর আগে সংখ্যাটায় খুব হেরফের না থাকলেও সংক্রমণ যে কমেনি, তা দেখা যাচ্ছে পরিসংখ্যানে। যে কোনও মুহূর্তে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আচমকা বাড়তে বলে চিকিৎসক মহলের আশঙ্কা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আগে, ২৭ সেপ্টেম্বর জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭২ জন। এখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৪০ ছাড়িয়েছে। ২৩ অক্টোবর জেলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪৭ জন।
সাম্প্রতিক এই তথ্য-পরিসংখ্যানে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। জেলায় এখনও করোনার টিকা দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় ৭৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৬৪ জন ভোটারের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৬৩ লক্ষ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় পাওয়া মানুষের সংখ্যা আরও কম। মাত্র ২৪ লক্ষ।
পুজোর কেনাকাটার সময় থেকেই বেশিরভাগ মানুষ বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন বলে নজের পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে চিকিৎসক মহলে। জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদেরও আশঙ্কা, মানুষের এই বেপরোয়া মনোভাবের ফলে আক্রান্তের সংখ্যা ফের বাড়তে পারে। মানুষকে সতর্ক থাকার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কোভিড-বিধি শিকেয় তুলে বেলাগাম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আমজনতার একটা বড় অংশ। সিঁদুর খেলা, প্রতিমা বিসর্জনের সময়েও এ বার দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্য-বিধি না মানার প্রবণতা।
এই পরিস্থিতিতে জেলায় করোনা-সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে না বাড়লেও তাতে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্তারা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আরও কিছুদিন মানুষকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য-বিধি মানতে হবে। না হলে সংক্রমণ বাড়তে সময় লাগবে না।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপসকুমার রায় বলেন, ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা চলে যায়নি। মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের ফলে করোনা সামান্য হলেও বাড়ার আশঙ্কা আছে। তাই সকলকে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্য-বিধি নিয়ে কোনও অবস্থায় হেলাফেলা করা যাবে না।’’ দু’টি ডোজ় ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও সকলকে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলতে হবে বলে জানান তিনি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, দিন কয়েক তাপসবাবু জেলার পুরসভা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে সকলকে করোনা বিধি মেনে চলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘বাজার কমিটি, ব্যবসায়ী-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আবার নতুন করে বৈঠক শুরু করা হচ্ছে। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে মাস্ক পরেন, তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নাইট কার্ফু চালু হয়েছে। সেটাও কঠোর ভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলতেই হবে।’’
সরকারি বিধি-নিষেধ থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় জলসা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান, ফুটবল প্রতিযোগিতা, রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন হচ্ছে। মানুষ ভিড় করছেন। শারীরিক দূরত্ব-বিধি বজায় থাকছে না। সচেতন মানুষ জনের অভিজ্ঞতায়, বেশিরভাগ মানুষ রাস্তাঘাটে মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। উল্টে, মাস্ক কেন পরেছেন, তা নিয়ে কটূক্তিও শুনতে হচ্ছে।
টিকা নেওয়া লোকজনের মধ্যেও বেপরোয়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে বাইরে বেরোচ্ছেন মাস্ক না পরে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বহু প্রবীণও। এ প্রসঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে ভাবছেন, তাঁরা করোনা থেকে মুক্ত। তাঁদের মনে রাখা উচিত, টিকা নিলেও সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে শেষ হয় না।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলায় রোজ ৪-৫ হাজার করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বেশি হচ্ছে। জেলায় নির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে এখন আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, করোনার প্রকৃত চিত্র বুঝতে গেলে আরটিপিসিআর পরীক্ষা বাড়াতে হবে।
অভিযোগ, জ্বর-সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ নিয়েও অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে শেষ মুহূর্তে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তাদের আবেদন, উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy