মৃত কামাল হোসেন মণ্ডল ও আয়েপ আলি।
এনআরসি আতঙ্কে ফের দু’জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল উত্তর ২৪ পরগনায়।
রবিবার সকালে গাছের ডাল থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল বসিরহাটের সোলাদানার বাসিন্দা কামাল হোসেন মণ্ডলের (৩২)। পরিবারের অভিযোগ, এনআরসি আতঙ্কেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শাসন থানার চকআমিনপুরের বাসিন্দা আয়েপ আলি (৫৫)। বাড়ির লোকেরা জানান, ’৭১ সালের আগের নথি না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
গত তিন দিনে এই নিয়ে এনআরসি আতঙ্কে শুধু বসিরহাটেই এক মহিলা-সহ মোট তিন জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। উত্তর ২৪ পরগনায় এ ভাবে মৃত্যুর সংখ্যা চার। রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট।
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন,‘‘মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক। বিজেপির এনআরসি নিয়ে প্রচারের জন্য মানুষ আতঙ্কে ভুগছেন। নথি জমা দেওয়ার ভিড়ের কারণে সরকারি দফতরের কর্মীদের রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে। ভিড় ঠেকাতে গিয়ে দফতরের কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আমরা মানুষের পাশে আছি।’’ এ দিন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও হুগলির চুঁচুড়ায় এনআরসি নিয়ে দলীয় কর্মীদের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এনআরসি নিয়ে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের বিরোধিতার পাল্টা প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার তাঁতিবেড়িয়ায় শনি ও রবিবার তিনি বিজেপি-সহ সঙ্ঘ পরিবারের সব সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের শেষে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, আরএসএস প্রধান সঙ্ঘ পরিবারের সকলকেই এনআরসি-র পক্ষে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, মানুষ যাতে এনআরসি সম্পর্কে বিরোধীদের প্রচারে বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য এর প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে। আশ্বাস দিতে হবে, সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ না করিয়ে এনআরসি করা হবে না। আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে হিন্দুরা রক্ষাকবচ পাবেন। কোনও হিন্দুকেই দেশের বাইরে বার করে দেওয়া হবে না। সুতরাং, হিন্দুদের কোনও ভয় নেই বলে দাবি দিলীপের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত কামাল স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে বসিরহাটের সোলাদানায় থাকতেন। ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরে এনআরসি-র কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এ দিন ভোর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাছের একটি আম গাছের ডালে গলায় দড়ি দেন তিনি। খবর পেয়ে সকাল ৯টা নাগাদ পুলিশ গিয়ে দেহটি নামায়। মৃতের দাদা আবুল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের বাবার নাম এক এক জায়গায় এক এক রকম করা রয়েছে। গত কয়েক দিন দৌড়াদৌড়ি করে সে সব কাগজ ঠিক করার চেষ্টা করছিল ভাই। সমস্ত নথি খুঁজে না পাওয়ায় ভাই প্রায়ই বলত, আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও পথ নেই।’’ স্বামীর মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে কামালের স্ত্রী খয়রুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘‘খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলেন। শুধু বলতেন, এনআরসিতে না থাকলে দেশ থেকে মেরে তাড়িয়ে দেবে। এখন বাচ্চাদের নিয়ে আমি কী ভাবে বাঁচব, বুঝতে পারছি না।’’ একই পরিস্থিতি হয়েছিল শাসনের আয়েপ আলিরও। গত দশ দিন ধরে বিডিও অফিস, ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের অফিস, পঞ্চায়েত অফিসে চক্কর কাটছিলেন। তাঁর বাড়ির লোকেরা জানান, ’৭১ সালের আগের নথি না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদ্রোগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পরিবারের দাবি, এনআরসি আতঙ্কেই শনিবার রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। পরিবারের লোকজন তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy