বাঁ দিকে, প্রতাপপুরে অগ্নিদগ্ধ বাড়ি। ডান দিকে, বর্ধমান মেডিক্যালে জখমেরা।—নিজস্ব চিত্র।
এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধল আউশগ্রামের প্রতাপপুর গ্রামে। বাড়ি ভাঙচুর থেকে শুরু করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ। পরে সোমবার সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের সংঘর্ষে দু’জন মহিলা-সহ ১৬ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চার সিপিএম কর্মী ও এক তৃণমূল কর্মী বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়াও সিপিএমের ২ জন মানকর গ্রামীণ হাসপাতালে ও ৪ জন তৃণমূল কর্মী স্থানীয় জামতাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজনকে আটকও করেছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য বেশ কয়েকদিন আগেই। বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আউশগ্রাম ২ ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দিতে যায় সিপিএম। বিডিও স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করলে সিপিএমের লোকেরা ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির দফতর ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনা তুলে গত ১৮ অগস্ট প্রতাপপুর গ্রামে ‘শান্তি মিছিল’ করে তৃণমূল। সিপিএমের আবার অভিযোগ, মিছিল শেষ হওয়ার পরেই স্থানীয় সিপিএম নেতা অরূপ মির্ধ্যাকে মারধর করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। পাল্টা আক্রমণের অভিযোগ করে তৃণমূলও। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের হামলায় দলের ৩১ জন গ্রামছাড়া হন। আউশগ্রামের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে একমাত্র ভাল্কি পঞ্চায়েতটিই সিপিএমের দখলে রয়েছে। প্রতাপপুর গ্রামটি এর মধ্যেই পড়ে। ঘটনার পরে তৃণমূলের ব্লক নেতারা জেলা সভাধিপতি ও পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিষয়টি আপাত ভাবে মিটে গেলেও গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুরে প্রতাপপুর গ্রামের সিপিএমের কয়েকজন স্থানীয় অভিরামপুর গ্রামে বাজার করতে যায়। তখন বাজারের মধ্যেই সিপিএমের লোকেদের তৃণমূল মারধর করে বলে অভিযোগ। পরে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকালে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতাপপুর গ্রামের পুলিশ ক্যাম্পের কর্মীদের সঙ্গে বচসা বাধে গ্রামবাসীদের। রাতের দিকে পুলিশ ক্যাম্প ভাঙচুর হয় বলেও অভিযোগ। সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মজুমদারের অভিযোগ, “পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীদের মধ্যে ওই ঘটনা হয়েছে। আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। কিন্তু সোমবার সকালে তৃণমূলের কয়েকজন নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে মারধর করে। তাতে দুই মহিলা-সহ ৮ জন জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।” তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএমের সন্ত্রাসের অভিযোগ জানাতে পুলিশ ক্যাম্পে গিয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মী মেহের আলি। তখন তার উপর চড়াও হয় সিপিএম। এরপর আরেক তৃণমূল সমর্থকের মুদিখানা দোকান ভাঙচুর চালানো হয়। তারপর এক এক করে তাঁদের বেশ কয়েকজন সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর করে সিপিএম। ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি সৈয়দ হায়দার আলির অভিযোগ, “সিপিএমের দুষ্কৃতীরা আমাদের সমর্থকদের বাড়ি, গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এমনকী দু’টি মুরগি খামারে আগুনও লাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের সাত জন কর্মী গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুয়ে সিপিএমের আবিজার রহমান, শেখ রবিউলদের অভিযোগ, “বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। তারপর থেকেই তৃণমূল আমাদের হুমকি দিত। সোমবার সকালে আমাদের রাস্তায় পেয়ে মারধর করে।” ঝর্ণা বিবি ও গুলসুনা বিবিরা বলেন, “আমরা বাড়িতে রান্নার জোগাড় করছিলাম। হঠাৎ দেখি কয়েকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ল। তারপর আমাদের মারধর শুরু করে দিল। কিছু বোঝার আগেই বাড়ি রক্তাক্ত হয়ে উঠল।” অন্য দিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা তৃণমূল কর্মী হাবিবুল্লা মোল্লার অভিযোগ, “পুলিশের সামনেই গোটা গ্রাম জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে সিপিএম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy