Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

হাতে ভিডিও ফুটেজ, দীপালি তবু অধরাই

ঘটনার পরে পাঁচ দিন গড়াল। এখনও পুলিশ ধরতে পারল না বুথে ঢুকে গোলমাল পাকানো ও ছাপ্পা ভোট মারায় অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহাকে। আর তার জেরে পুলিশ-প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। গত ৭ মে, রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের দিন বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত সোনামুখীর সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলের ২৭ নম্বর বুথে যে দীপালিদেবী পুরোপুরি বেআইনি ভাবে ঢুকেছিলেন, তা প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজের একটি অংশ ‘এবিপি-আনন্দ’র হাতে পৌঁছেছে।

ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে বুথে ঢুকে পড়েছেন তৃণমূল নেতা রানা বিশ্বাস। চাপড়ায়।  ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে বুথে ঢুকে পড়েছেন তৃণমূল নেতা রানা বিশ্বাস। চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দেবব্রত দাস
সোনামুখী শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

ঘটনার পরে পাঁচ দিন গড়াল। এখনও পুলিশ ধরতে পারল না বুথে ঢুকে গোলমাল পাকানো ও ছাপ্পা ভোট মারায় অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহাকে। আর তার জেরে পুলিশ-প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।

গত ৭ মে, রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের দিন বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত সোনামুখীর সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলের ২৭ নম্বর বুথে যে দীপালিদেবী পুরোপুরি বেআইনি ভাবে ঢুকেছিলেন, তা প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজের একটি অংশ ‘এবিপি-আনন্দ’র হাতে পৌঁছেছে। সেই ফুটেজ সোমবার সম্প্রচারিতও হয়েছে। তা থেকে স্পষ্ট, শাসক দলের বিধায়ক ওই বুথে ঢুকে হম্বিতম্বি করেছিলেন। প্রিসাইডিং অফিসারের চেয়ারে বসে আঙুল তুলে কিছু হুমকিও দেন।

ওই ফুটেজ ভোটের দিন থেকেই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে। তার পরেও দীপালিদেবীকে পুলিশ না ধরতে পারায় প্রশ্ন উঠছে। অথচ, আনন্দবাজার ঘটনার দিন এবং পরদিনও ফোনে দীপালিদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিল। তিনি মাঝেমধ্যেই সোনামুখীতে আসছেন, এমন খবরও মিলছে। তাই বিরোধী দলগুলির দাবি, পুলিশ-প্রশাসন যে ভোটে শাসক দলের হয়েই ‘কাজ’ করেছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা পুলিশ সুুপার মুকেশ কুমার। একাধিক বার তাঁর মোবাইলে এসএমএস করা হলেও জবাব দেননি। তবে জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেছেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার বিষয়টি দেখবে পুলিশ।” বুথে হামলার ঘটনায় ধৃত ১০ জনকে সোমবার বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ১০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

সোনামুখীর ওই বুথে ঢুকে দীপালিদেবী ছাপ্পা ভোট দেন বলে অভিযোগ। ওই বুথের ভোটকর্মীদের মারধরও করা হয়। প্রিসাইডিং অফিসারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বিধায়কের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রবিবার ওই বুথে ফের ভোট নেওয়া হয়।

তবে এ বারের নির্বাচনে শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের বুথে ঢোকাটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তৃতীয় দফার ভোটে বুথে ঢুকে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য ঝর্ণা সিংহের বিরুদ্ধে। তিনি জামিন পেয়ে যান। একই ভাবে বুথে ঢুকে প্রভাব খাটানোয় অভিযুক্ত বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি মনিকা মাহাতোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি পুরুলিয়ার পুলিশ-প্রশাসন।

সোমবার শেষ দফার ভোটেও তেমনই হয়েছে নদিয়ার চাপড়ার হাতিশাল গ্রামের বুথে। সেখানে ভোটারদের সঙ্গে বারবার ভিতরে ঢুকছিলেন স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা রানা বিশ্বাস। অভিযোগ, তিনি অন্যের হয়ে ভোটও দেন। নদিয়ারই চাকদহের বিপিনবিহারী বিদ্যাপীঠের ৫৫ নম্বর বুথে তৃণমূলের লোক ঢুকে পড়ছিল ভোটারদের সঙ্গে। পর্যবেক্ষক তা হাতেনাতে ধরতে পেরে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেন। এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত গোপাল প্রামাণিক নামে এক যুবককে ওই ঘটনায় ধরা হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর লোকসভার অন্তর্গত জীবনতলার মৌখালির যশোধর স্মৃতি বিদ্যানিকেতনে ২২৫ ও ২২৬ নম্বর বুথের বহু ভোটার অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় তৃণমূল কর্মী ফারাক জমাদার বুথে ঢুকে ইভিএমের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। কিছু লোকের ভোটও তিনি দিয়েছেন। টিভির পর্দায় তা দেখে রিটার্নিং অফিসার শান্তনু মখোপাধ্যায় ওই দুই বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরানোর এবং ফারাককে গ্রেফতারের নির্দেশও দেন। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ দাবি করেছে, অভিযুক্ত পলাতক।

পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দীপালিও। সোনামুখীর কিছু বাসিন্দা জানাচ্ছেন, ঘটনার রাতেই দীপালিদেবী ও তাঁর স্বামী সমীর সাহা ব্লক তৃণমূলের এক নেতার বাড়িতে যান। সেখানে শনিবার সকাল পর্যন্ত ছিলেন। মাঝেমধ্যে সোনামুখীর থানাগড়া এলাকায় নিজের বাড়িতেও ফিরেছেন। সিপিএমের সোনামুখী জোনাল কমিটির সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্যের ক্ষোভ, “ছাপ্পা ভোট দেওয়ার তথ্যপ্রমাণ থাকলেও দীপালি সাহা এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন। পুলিশ-প্রশাসন যে কতটা পক্ষপাত করছে, এতেই প্রমাণিত।”

বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ অবশ্য এ দিনও বলেছেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। কারণ, পুরোটাই তো বানানো গল্প!”

(সহ প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার, সৌমিত্র সিকদার, সামসুল হুদা)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE