সারদা-কাণ্ডের সঙ্গে তাদের যে কোনও যোগ নেই, সোমবার পথে নেমে ফের তা বোঝানোর চেষ্টা করল বামফ্রন্ট। মৌলালির রামলীলা উদ্যান থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত বামেদের মিছিলে দেখা গেল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবকেও। যাঁকে সম্প্রতি সারদা কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এবং ওই মিছিলের শেষেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র বুঝিয়ে দিলেন, তদন্তের প্রয়োজনে তাঁদের দিকের যাঁকে প্রয়োজন, তাঁকেই সিবিআই জেরা করতে পারে।
সারদা-কাণ্ডে জড়িত দোষীদের শাস্তি এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে এ দিনের মিছিল এবং বাম নেতাদের বক্তব্য থেকে বার্তা স্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলকে কোণঠাসা করার সুযোগ হাতছাড়া করতে তাঁরা নারাজ। সে কারণেই নিজেদের স্বচ্ছতার দাবি এবং তদন্তে সহযোগিতার কথা তাঁরা বার বার বলেছেন। সিবিআই তদন্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়ে স্বয়ং আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তৃণমূল যেখানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দফতরের সামনে ধর্নায় বসেছিল, বাম নেতারা সেখানে দেখাতে চেয়েছেন, তাঁরা ভিন্ন পথের পথিক। মিছিল শেষে এ দিন সূর্যবাবু বলেন, “আমাদের দলের যাঁকে জেরা করা দরকার, করুন। আমাকে জেরা করুন। রবীন দেবকে জেরা করুন। যাঁকে খুশি করুন। আমরা বামপন্থীরা এর বিরুদ্ধে দাঁড়াব না।”
কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা ছাড়াও নদিয়া, হাওড়া এবং হুগলি থেকে এ দিনের মিছিলে বহু মানুষ এসেছিলেন। ছিলেন সারদার আমানতকারী এবং এজেন্টরাও। রবীনবাবুকে সিবিআই জেরা করার পরে স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল শিবির কিছুটা উজ্জীবিত। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে শাসক দলের কাছে হারতে না চেয়ে বাম নেতারা এ দিনের মিছিলে রবীনবাবুকে রেখেছিলেন। মিছিল শেষে ম্যাটাডোর ভ্যানের উপরে অস্থায়ী মঞ্চে ঘোষকের দায়িত্বেও ছিলেন রবীনবাবু।
বাম জমানায় যখনই সারদার মতো বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি সূর্যবাবুর। তিনি সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেন, “শুধু কান টানলে হবে না। মাথা চাই।” তাঁর দাবি, ‘‘সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে হবে। তাতে যদি আমাদের সম্পত্তি আটক করতে হয়, করুন। আমার সম্পত্তি আটক করতে হয়, করুন। যদি যাদবপুরের বাড়ি বা পুরীর হোটেল বেচতে হয়, তা-ই করুন।”
বামেদের মিছিলে ভিড় হয়েছিল ভাল। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু-সহ শরিক দলের নেতারা সকলেই মিছিলে পা মেলান। বফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে যেমন আওয়াজ উঠেছিল, তেমনই সুরে বিমানবাবু বলেন, “অলি গলি মে শোর হ্যায়, তৃণমূল সব চোর হ্যায়।” রাজ্য সরকারের গড়া সিট প্রকৃত তদন্ত না করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছিল, এই অভিযোগ করে বিমানবাবু বলেন, “প্রকৃত তদন্ত হলে নবান্নে বসে থাকা মন্ত্রী আমলাদের জেলে যেতে হবে।”
আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, “সারদার টাকা বাংলাদেশের জামাত পেয়েছে। আর এখানে এক জন জামাত নেতাকে তৃণমূল রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে।” তাঁর দাবি, সিবিআইকে দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সারদা-সহ অন্য অর্থলগ্নি সংস্থায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে কলকাতা বাদে রাজ্যের সব জেলায় ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগ এ দিন বিক্ষোভ অবস্থান করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy