Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

সিপিএমের হাতিয়ার স্থানীয় সমস্যা

মেঠো পথ ভেঙে গাড়িটা এসে দাঁড়াল দুর্গাপুরে। চারপাশ ধুলোতে সাদা হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুরের খেলার মাঠে তখন রোড শোয়ের আয়োজন করছিলেন দলীয় কর্মীরা। মাঠের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক। হ্যান্ডেলে বাঁধা দলীয় পতাকা। এর মধ্যেই তার কেটে গেল মাইকের। নতুন তার কিনতে বাজারে দৌড়লেন এক কর্মী। অহেতুক সময় নষ্ট না করে প্রার্থীও বেরিয়ে পড়লেন পাশের পাড়ায়।

কৃষ্ণগঞ্জে সিপিএমের প্রার্থী অপূর্ব বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণগঞ্জে সিপিএমের প্রার্থী অপূর্ব বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

মেঠো পথ ভেঙে গাড়িটা এসে দাঁড়াল দুর্গাপুরে। চারপাশ ধুলোতে সাদা হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুরের খেলার মাঠে তখন রোড শোয়ের আয়োজন করছিলেন দলীয় কর্মীরা। মাঠের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক। হ্যান্ডেলে বাঁধা দলীয় পতাকা। এর মধ্যেই তার কেটে গেল মাইকের। নতুন তার কিনতে বাজারে দৌড়লেন এক কর্মী। অহেতুক সময় নষ্ট না করে প্রার্থীও বেরিয়ে পড়লেন পাশের পাড়ায়।

একগাল হেসে তিনি জানতে চাইলেন, ‘‘কী, প্রার্থী পছন্দ হয়েছে তো?”

“কী যে বল বাবা, তুমি আমাদের গাঁয়ের ছেলে। তোমাকে পছন্দ হবে না!” গর্বের সঙ্গে বললেন স্থানীয় এক প্রৌঢ়।

হাসছেন কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী সিপিএমের অপূর্ব বিশ্বাস। পরনে হালকা রঙের প্যান্ট, গাঢ় নীল রঙের শাটের্র উপরে ধূসর ব্লেজার। পেশায় চিকিত্‌সক অপূর্ববাবুর আদি বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জের পুঁটিখালিতে। এখন তিনি থাকেন কৃষ্ণনগরে। ভোটের ময়দানে একেবারেই আনকোরা। সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের ‘অনুরোধ’ ফেলতে না পেরে শেষ মুহূর্তে তিনি ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে জেলা নেতৃত্বের দাবি, ভোটের লড়াইয়ে এই প্রথম হলেও অপূর্ববাবু দীর্ঘদিন থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ভোটের হাওয়া কেমন বুঝছেন? অপূর্ববাবু বলছিলেন, “লড়াইটা হবে তৃণমূলের সঙ্গেই। বিজেপিকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যে আনছি না। তবে কে জিতবে সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।”

এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে তিনি ভোটারদের বলছিলেন যে, তিনি এই এলাকারই ছেলে। হাতের তালুর মতো চেনেন গোটা কৃষ্ণগঞ্জকে। কিন্তু এখন কী আর গ্রামের সঙ্গে সেই যোগাযোগ রয়েছে? “রয়েছেই তো। এখানকার মানুষ জানেন, আমি কী ভাবে জীবনের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছি। নিয়মিত এলাকার খোঁজখবর রাখি।” বলছিলেন অপূর্ববাবু। তবে চিকিত্‌সক হিসাবে অপূর্ববাবুর এই পরিচিতি ভোটের বাজারে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলেই দাবি বিরোধীদের।

প্রচারে তিনি কখনও তুলে ধরছেন সারদা-কাণ্ড, কখনও সরব হচ্ছেন তাপস পালের কুকথা নিয়ে। তবে তাঁর প্রচারে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্থানীয় সমস্যা। একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাসন যোজনা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি তুলে ধরছেন। এ ভাবে গোটা কয়েক বাড়ি ঘোরার পরেই ডাক এল, “দাদা, মাইক রেডি। এ বার বেরোব।” অপূর্ববাবু উঠে পড়লেন হুডখোলা গাড়িতে। সামনে পিছনে গোটা পঁচিশেক মোটরবাইক। প্রচারের গাড়ি এগিয়ে চলল কৃষ্ণগঞ্জের দিকে। কৃষ্ণগঞ্জ ঘুরে চৌগাছা, চন্দননগর হয়ে প্রার্থী ছুটলেন বাবলাবনের দিকে। মাইকে বারবার বলা হচ্ছিল বিশিষ্ট চিকিত্‌সক অপূর্ব বিশ্বাসকে ভোট দিন। যা শুনে দলেরই এক কর্মী বলছিলেন, “এমনটা কিন্তু আগে হত না। প্রার্থীর থেকে দলই বেশি গুরুত্ব পেত।”

মিছিল গিয়ে থামল গাজনা বাজারে। চারপাশে বিজেপি, সিপিএম, তৃণমূল আর কংগ্রেসের পতাকায় ছয়লাপ। শীতের অলস দুপুরে বাজারের দোকানপাট সব বন্ধ। শুধু দু’একটা মুদিখানা দোকান খোলা। দলেরই এক কর্মীর দোকান থেকে কেনা হল মুড়ি আর চানাচুর। দুপুরে সবাই মিলে সেই মুড়ি ভাগ করে খেয়ে অপূর্ববাবুর গাড়ি রওনা দিল কৃষ্ণগঞ্জে। সেখানে হোটেলে দু’মুঠো খেয়ে প্রার্থী রওনা দিলেন দুর্গাপুর।

অন্য বিষয়গুলি:

cpm local problem krishnaganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE