Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

শরণার্থীদের পাকাপাকি থাকার ‘আমন্ত্রণে’ অস্বস্তিতে প্রশাসন

ত্রাণ শিবিরের অস্থায়ী ছাউনি নয়, চাইলে তাঁরা ‘পাকাপাকি’ ভাবে কুমারগ্রামে বসত করতে পারেন। শনিবার দুপুরে, চ্যাংমারির শরণার্থী শিবিরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর এই দরাজ আশ্বাসের মাঝেই উঠে এসেছিল প্রশ্নটা ‘‘গ্রামে ফেলে আসা আমাদের গরু-ছাগলগুলো আনা হবে কী করে?’’ পাশে দাঁড়ানো মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি। মাথা নিচু করে সম্মতি দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না সঞ্জয়বাবুর। অসমে জঙ্গিহানা এবং তার জেরে বাস্তুহারা মানুষের সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে আশ্রয় নেওয়া নতুন নয়।

কুমারগ্রামের শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ বিলি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) খুদেকে কোলে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী। সন্দীপ পাল এবং নারায়ণ দে-র তোলা ছবি।

কুমারগ্রামের শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ বিলি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) খুদেকে কোলে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী। সন্দীপ পাল এবং নারায়ণ দে-র তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুমারগ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

ত্রাণ শিবিরের অস্থায়ী ছাউনি নয়, চাইলে তাঁরা ‘পাকাপাকি’ ভাবে কুমারগ্রামে বসত করতে পারেন।

শনিবার দুপুরে, চ্যাংমারির শরণার্থী শিবিরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর এই দরাজ আশ্বাসের মাঝেই উঠে এসেছিল প্রশ্নটা ‘‘গ্রামে ফেলে আসা আমাদের গরু-ছাগলগুলো আনা হবে কী করে?’’

পাশে দাঁড়ানো মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি। মাথা নিচু করে সম্মতি দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না সঞ্জয়বাবুর।

অসমে জঙ্গিহানা এবং তার জেরে বাস্তুহারা মানুষের সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে আশ্রয় নেওয়া নতুন নয়।

এ বছরের গোড়ায়, গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে হাজার দুয়েক শরণার্থী আশ্রয় খুঁজেছিলেন শামুকতলার মোমিনপাড়া, মাদারিহাট এবং ফালাকাটার তিন শিবিরে। সে বার, মুখ্যমন্ত্রীর দূত হয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘যত দিন খুশি’ এ রাজ্যে ‘থাকতে পারেন তাঁরা।’ পরিস্থিতি থিতিয়ে যাওয়ার পরে, অনেকে ফিরে গেলেও শরণার্থীদের অনেকেই রাজ্য সরকারের সেই প্রস্তাব লুফে নিয়েছিলেন। পাকাপাকি ভাবে তাঁদের অনেকেই ঠিকানা বদলে ফেলেছিলেন জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন এলাকায়। এ বার তারই পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এত শরণার্থী পাকাপাকি ভাবে এ রাজ্যে থেকে গেলে তাঁদের পুনর্বাসনের দায় নেবে কে?

আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন এবং কুমারগ্রামের লাগোয়া বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের কপালে তা নিয়ে ভাঁজ পড়েছে। উদ্বিগ্ন এক জেলা কর্তা বলেন, “থেকে যাওয়ার নিমন্ত্রণ তো জানানো হয়ে গেল, কিন্তু তাঁদের কোন জমিতে কী করে পুনর্বাসন দেওয়া হবে তা ঠিক করবে কে?”

এক রাতেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল চ্যাংমারির হেলিপ্যাড। এ দিন, চাপড়ামারি বনবাংলো থেকে গাড়িতে নাগরাকাটা ইউরোপিয়ান ক্লাবের মাঠে পৌঁছে হেলিকপ্টারে চ্যাংমারির সেই হেলিপ্যাডে নেমে শরণার্থীদের কম্বল, শীত-পোশাক বিলি করেন মুখ্যমন্ত্রী। কুমারগ্রামের শরণার্থী শিবিরে ছিলেন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। শরণার্থীদের ‘সুবিধা-অসুবিধা’ জেনে নেওয়ার ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা অতিথি। এখানে থাকা খাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না। যত দিন এখানে থাকতে চান থাকতে পারবেন।” খানিক থেমে তাঁর সংযোজন, “পাকাপাকি ভাবে এখানে থাকতে চাইলে তার ব্যবস্থাও দেখা হবে।”

মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব শুনে অসমের শিমলাবাড়ি, বিন্নাবাড়ি এলাকা থেকে ঘর ছাড়া রবিচাঁদ মুর্মু, জয় টুডরা প্রায় সমস্বরে জানতে চান, “আমাদের গরু-ছাগলগুলো যে ফেলে এলাম। ওগুলো আনা হবে কী করে?” একটুও না থেমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গরু ছাগলের বিষয়টিও দেখা হবে।” এর পরেই মুখ্যসচিবের দিকে তাকিয়ে তাঁর সম্মতিও আদায় করে নেন তিনি।

এ ব্যাপারে পরে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যসচিব। সৌরভ চক্রবর্তী অবশ্য দলনেত্রীর সুরেই শরণার্থীদের আশ্বাস দিয়েছেন, “অতীতে অসমের কয়েক হাজার শরণার্থী শামুকতলার ডাঙ্গিতে এসে বসবাস করছেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর তাঁদের রেশন কার্ড ও জমির অধিকার দেওয়া হয়েছে। যাঁরা থেকে যেতে চান একই ভাবে তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।” মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যেতেই শিবিরের অনেকেই তাঁদের ‘পাকা বসতের’ তোড়জোড়ও শুরু করে দেন। শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে গিয়ে, কোন এলাকায় কী ভাবে ‘ঘর’ তৈরি করা যায়, স্থানীয় পঞ্চায়েতে কোনও কাজের সুযোগ রয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে খোঁজ খবরও শুরু করেন তাঁরা।

যা দেখে বামফ্রন্টের আলিপুরদুয়ার জেলার আহ্বায়ক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন মিথ্যে আশ্বাস দেওয়ার মানে হয় না।” তিনি মনে করেন, দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের নিরাপদে ভিটেয় ফেরানোর উপরে জোর দেওয়া অনেক জরুরি। কংগ্রেসের কুমারগ্রাম ব্লক সভাপতি পলাশ দে’র প্রশ্ন, “এত জন শরণার্থীকে স্থায়ী ভাবে বসবাসের আশ্বাস তো দেওয়া হল, কিন্তু সে জায়গা দেওয়া হবে কোথায়?”

অন্য বিষয়গুলি:

kumargram assam nia mamata bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy