বছরখানেক ধরে কমিটির পর কমিটি হচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকার বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে কর্ণপাত করছে না বলে আক্ষেপ বাস মালিকদের। তাঁদের দাবি, ভাড়া না-বাড়ানোর জেরেই দিন দিন খারাপ হচ্ছে রাজ্য পরিবহণের সার্বিক চিত্রটি। পরিস্থিতি এমন, পারমিট পেয়েও নতুন বাস নামানোর সাহস করছেন না মালিকরা।
গত এক বছরে দূরপাল্লার বাস চালানোর জন্য সরকার বিভিন্ন রুটে ৩৮০টি ‘অফার লেটার’ বিলি করলেও, পথে বাস নামাতে চেয়ে মালিকদের আবেদন জমা পড়েছে ১১৮টি। ‘অফার লেটার’ পেয়েও বাস নামাননি এমন মালিকদের বক্তব্য, এই ভাড়ায় বাস চালিয়ে লাভ করা তো দূরের কথা, দৈনন্দিন খরচ চালানোই দুষ্কর। তা হলে সরকারের কাছ থেকে ‘অফার লেটার’ নিলেন কেন? এক বাস মালিক বলেন, “সরকারের ওই অফার দেড় বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তার মধ্যে সরকারের সুবুদ্ধি হলে বাস নামানোর কথা ভাববো।”
পরিবহণ কর্তারা বলছেন, দূরপাল্লার মতোই সঙ্কট কলকাতা-লাগোয়া ছোট রুটগুলির ক্ষেত্রেও। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ১০২টি বেসরকারি বাসের রুট রয়েছে। মিনিবাসের রুট রয়েছে ৮৫টি। বাস-মিনিবাস মিলিয়ে ওই ১৮৭টি রুটে এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় হাজার দু’য়েক কম বাস চলে। এখানেও বাস মালিকরা ‘অফার লেটার’ পাওয়ার পরে বাস নামাতে সাহস করছেন না। পরিবহণ দফতরের হিসেব বলছে, গত এক বছরে বেসরকারি বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫০টি ‘অফার লেটার’ বেরোলেও বাস নেমেছে ৬০০-রও কম। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “আগে বাসের একটি পারমিট নিতে অন্তত পাঁচ জন মালিক লাইন দিতেন। এখন সরকার পারমিট দিলেও নেওয়ার লোক নেই। এই ভাড়ায় বাস চালানো লোকসান। কে আর ব্যবসা করতে আসবে!”
গড়বেতা-হাওড়া রুটে বাস চালানোর ‘অফার লেটার’ পেয়েছেন মোহন বাগ। তিনি বলেন, “এই ভাড়ায় বাস চালিয়ে যা আয় হবে, তাতে ব্যাঙ্ক ঋণের কিস্তিই শোধ করতে পারব না। কী করে বাস নামাই?” আর এক মালিকের বক্তব্য, বর্তমান ভাড়ায় বাস চালিয়ে বেশির ভাগ মালিকই ঋণ শোধ করতে পারছেন না। তাই নতুন বাস কেনার জন্য ঋণের আবেদন করলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কও তা দিতে গড়িমসি করছে।
বাস মালিকদের যুক্তি, এ রাজ্যে শেষ বার বাসের ভাড়া বেড়েছিল ২০১২ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। সে সময়ে ডিজেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৫০ টাকা ৭৮ পয়সা। তার পর থেকে ২০ বার ডিজেলের দাম বেড়েছে। বর্তমানে কলকাতায় ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৬২ টাকা ৬৪ পয়সা। গত দেড় বছরে জ্বালানির দাম ২৪ শতাংশের বেশি বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, বাস ভাড়া বাড়লে সাধারণ মানুষের উপরে চাপ বাড়বে। যদিও বাস মালিকদের পাল্টা যুক্তি, জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া না বাড়ায় লোকসানের বোঝা বাড়ছে। এই অবস্থায়, বাস বসিয়ে রাখা ছাড়া উপায় থাকছে না তাঁদের। এ ভাবে এ রাজ্যে গত দেড় বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ বাস বসে গিয়েছে বলে দাবি মালিকদের। তার উপরে মালিকেরা নতুন বাসও নামাতে না চাওয়ায় রাজ্যের পরিবহণ-চিত্র বেহাল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
বাস মালিকদের এই অনীহার কথা মানতে নারাজ পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর বক্তব্য, “বাস মালিকদের সব যুক্তি ঠিক নয়। তবে ব্যাঙ্ক ঋণের কিস্তি মেটাতে কারও অসুবিধা হলে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সরকার তাঁদের সাহায্য করবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy