লোকসভা ভোটের পরে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আজ, শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ওই বৈঠকে দলের সমস্ত জনপ্রতিনিধি ও ব্লক স্তরের নেতাদের ডাকা হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই বৈঠকে মুখ্য বক্তা স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী।
দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বারই প্রথম লোকসভা ভোটে রেকর্ড সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। রাজ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের ৩৪ জন সাংসদ। কিন্তু বিজেপি-র উত্থানও তৃণমূলকে চিন্তায় রেখেছে। খাস কলকাতায় এ বার ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি। আগামী বছর কলকাতার পুরভোট ও তার পরের বছর রাজ্যে বিধানসভার ভোট। সে কথা মাথায় রেখে বিজেপি-র উত্থান প্রতিরোধে করণীয় বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। ভবিষ্যতের রূপরেখা ঠিক করতে আজই বৈঠকে বসছে রাজ্য বিজেপিও।
একের পর এক ভোটে সাফল্যের সঙ্গে তৃণমূলের কলেবরও বাড়ছে। নানা দল থেকে কর্মী-সমর্থকেরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। দল বড় হয়ে ওঠার পাশাপাশি কর্মীদের আচরণের দিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে নেত্রীকে। কর্মীদের দলীয় অনুশাসনে ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করার বিষয়ে আজ দলনেত্রী আলোচনা করতে পারেন বলে একটি সূত্রের বক্তব্য। লোকসভা ভোটের আগে ২৯ নভেম্বর ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলের কার্যকারী সমিতির বর্ধিত সভায় দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কর্মীদের দায়িত্ব ও শৃঙ্খলার উপরে গুরুত্ব দিয়েছিলেন মমতা। ইন্ডোরের সভাতেও আজ তিনি সেই বার্তার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশের ধারণা।
লোকসভা ভোটের প্রাথমিক পর্যালোচনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজের খতিয়ান ইতিমধ্যেই নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বেশ কয়েকটি জেলায় কিছু নেতা-কর্মীর কাজে শীর্ষ নেতৃত্ব অসন্তুষ্ট। আসানসোলে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের দায়ে মন্ত্রিত্ব এবং জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে মলয় ঘটককে। প্রার্থীদের পরাজয় এবং প্রকাশ্যে কাজিয়া চালানোর জেরে মালদহের দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রকে মন্ত্রিসভার রদবদলের মাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার সাংগঠনিক স্তরে আর কিছু পরিবর্তনের ঘোষণাও আজকের বৈঠকে দলনেত্রী করতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে আরও মজবুত করতেই জেলা স্তরে দলের বিভিন্ন কমিটিতে রদবদল করা হতে পারে।
তৃণমূল সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার আরও বেশি করে করার জন্য কর্মীদের নির্দেশও দেওয়া হতে পারে। বিধানসভা ভোটের এখনও প্রায় দু’বছর বাকি। দিল্লিতে বিজেপি-র নতুন সরকার বসেছে। ফলে, আগামী এক বছরের মধ্যে রাজ্যের সরকারের সঙ্গে দিল্লির সরকারের কাজের একটা তুল্যমূল্য বিচার আগামী বিধানসভা ভোটের বিষয় হয়ে উঠবে। সেই কারণেই জনমানসে রাজ্য সরকারের কাজের ‘সাফল্যে’র খতিয়ান তুলে ধরার জন্য এখন থেকেই দলকে প্রস্তুতি নিতে বলতে পারেন মমতা।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই কলকাতায় দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বৈঠকে দলের সব জেলা সভাপতি এবং পদাধিকারীদের নিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব নির্বাচন-পরবর্তী আলোচনায় বসবেন। এই বৈঠকে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের উপস্থিত থাকারও সম্ভাবনা। লোকসভা ভোটে এ বার রাজ্যে নতুন শক্তি বিজেপি-র উঠে আসার যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, সেই সম্ভাবনাকে দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব পুরভোটে ও বিধানসভা নির্বাচনে কাজে লাগাতে চান। বিজেপি-র এক সূত্রের খবর, এর পরে ৭-৮ জুন রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক হবে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে যে ৪২ জন প্রার্থী লড়াই করেছেন, তাঁদের সবাইকে সেই বৈঠকে ডাকা হবে। এ ছাড়াও, ‘মিশন ২০১৬’-র কর্মসূচি তৈরি করার জন্য জেলা এবং ব্লক স্তরেও বৈঠক করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy