বাঁকুড়া আদালতে প্রমথনাথ মান্না। অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
তিনি ‘ভাল কাজ’ করতেন এবং সেই সুবাদেই বিমান বসুর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল বলে দাবি করলেন এমপিএস কর্ণধার প্রমথ মান্না। একই সঙ্গে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং র্যামেলের অন্যতম কর্তা সুকান্ত দেবের সুরেই জানালেন, সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা তিনি মিটিয়ে দিতে চান।
বেশ কিছু দিন আগে প্রমথবাবুর মেয়ের বিয়েতে যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু। বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর ছবিও উঠেছিল। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মাধ্যমে প্রমথবাবু বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে এখন হাজতে। এই সময়ে বিমানবাবুর সেই ছবি ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে সোমবারই নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিমানবাবু। আর কোনও বিয়ে বাড়িতে যাবেন না বলেও ঠিক করেছেন। মঙ্গলবার বাঁকুড়া আদালত চত্বরে এমপিএস-কর্ণধারও বলেন, “ভাল কাজ করতাম। তাই বিমানবাবুর সঙ্গে শুধু আলাপ হয়েছিল। তার বেশি কিছুই নয়।”
গত শুক্রবার শ্যামল সেন কমিশন থেকে প্রমথবাবু ও প্রবীরবাবুকে ধরে পুলিশ। শনিবার বাঁকুড়া আদালতে প্রমথবাবু ও তাঁর সংস্থার ডিরেক্টর প্রদীপ চন্দ্রকে হাজির করানোর সময় ফেটে পড়েছিল জনরোষ। তাঁদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ওই দু’জনকে ফের আদালতে নিয়ে আসা হয়। পুলিশি পাহারায় প্রিজন ভ্যান থেকে নামতেই এমপিএসের জনা তিরিশেক এজেন্ট ও আমানতকারী তাঁদের উদ্দেশে বিদ্রুপ করতে শুরু করেন। তার মধ্যেই প্রমথবাবু দাবি করেন, তাঁর কাছ থেকে কোনও রাজনৈতিক দল ‘বিশেষ সুবিধা’ নেয়নি। তিনি বলেন, “ডান বা বাম, কোনও রাজনৈতিক দলই আমার কাছ থেকে কোনও সুবিধা নেয়নি। আমার সমস্ত সম্পত্তির হিসেব সেবির কাছে রয়েছে। সে-সব বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা মেটাতে চাই।”
এ দিন আদালতে প্রমথবাবুর আইনজীবী দাবি করেন, কৃষ্ণনগর আদালত একটি রায়ে এমপিএস সংস্থাকে বাজার থেকে টাকা তোলার অনুমতি দিয়েছে। যদিও সেই রায়ের কাগজপত্র আদালতে পেশ করতে পারেননি তিনি। বাঁকুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিজেএম তনুশ্রী দত্ত দুই এমপিএস কর্তার জামিনের আবেদন নাকচ করে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশের কাছে কেস ডায়েরিও চেয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, দফায় দফায় ধৃত দুই এমপিএস কর্তাকে জেরা করা হয়েছে। কোন কোন স্কিমে টাকা জমা নিত এমপিএস, সেই টাকা কতগুলি ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছিল, তার খুঁটিনাটি তথ্য নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ধৃতদের। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ওঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।”
এ দিন আদালত চত্বরে উপস্থিত এমপিএসের এজেন্টদের মধ্যে নিমাই চৌধুরী, সুদীপ্ত রায়রা অভিযোগ করেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর ভাল যোগাযোগ রয়েছে এবং সরকারি খরচে ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে একাধিক বার বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন বলে সংস্থার বৈঠকে দাবি করতেন প্রমথবাবু। এ সব শুনে এমপিএসের প্রতি ভরসা বাড়ে এজেন্ট-আমানতকারীদের। সেই আস্থা ভেঙে যাওয়াতেই তৈরি হয়েছে জনরোষ। এ দিনও প্রিজন ভ্যানের পিছনে পিছনে ছুটে প্রমথবাবুর উদ্দেশে এজেন্ট ও আমানতকারীরা চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, “আমাদের ঠকিয়ে আমাদেরই পয়সায় নিজের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করে এখন নিজেকে ‘সেলিব্রিটি’ বলা হচ্ছে! এই চোর, ঠকবাজের কড়া শাস্তি চাই।”
আমানতকারীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে এ দিনই ভোরে গ্রেফতার হয়েছেন ‘নিউল্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে এক অর্থলগ্নি সংস্থার সিইও সৌরভ দত্ত। হাওড়ার বাগনানের বাড়ি থেকে তাঁকে ধরে কোলাঘাট থানার পুলিশ। ওই লগ্নি সংস্থার প্রধান অফিস ছিল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। ২০১১-এ কোলাঘাটের নতুনবাজারে অফিস খোলে সংস্থাটি। অভিযোগ, সারদা কাণ্ডের পরই গা ঢাকা দেন সংস্থার কর্তারা। জমানো টাকাও ফেরত পাননি। তবে, ওই সংস্থার কর্ণধার দীপঙ্কর দে এখনও অধরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy