Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বনগাঁয় এখনও সুরে বাঁধা পড়ল না বিজেপির প্রচার

দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ২০ জানুয়ারি। তার পরে এতগুলো দিন কেটে গেলেও প্রচারের সেই জৌলুস এখনও চোখে পড়ছে না গৈরিক শিবিরের। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বনগাঁ এসে নেতা-কর্মীদের কী ভাবে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে এবং প্রচারে কোন কোন বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে, তার গাইড লাইন তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন। বৈঠক করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসন্ন বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনটি দলের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বাগনানে বিজেপির সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: সুব্রত জানা

বাগনানে বিজেপির সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: সুব্রত জানা

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ২০ জানুয়ারি। তার পরে এতগুলো দিন কেটে গেলেও প্রচারের সেই জৌলুস এখনও চোখে পড়ছে না গৈরিক শিবিরের।

দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বনগাঁ এসে নেতা-কর্মীদের কী ভাবে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে এবং প্রচারে কোন কোন বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে, তার গাইড লাইন তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন। বৈঠক করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসন্ন বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনটি দলের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দলের সভাপতি অমিত শাহ বনগাঁর নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন সিদ্ধার্থনাথ। লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য দলের পক্ষ থেকে সাত জন রাজ্যস্তরের নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সার্বিক ভাবেও দেখবেন অন্য এক নেতা। এত কিছুর পরেও গ্রামে গ্রামে বিজেপির প্রচার এখনও পর্যন্ত সে ভাবে দানা বাধেনি বলে দলেরই একটি অংশ মনে করছে। নিয়ম মাফিক মিটিং-মিছিল, কর্মী বৈঠক হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু স্থানীয় নেতাদের একটা বড় অংশের মধ্যে গা ছাড়া মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এলাকায় এলাকায় তাঁদের দেখা যাচ্ছে না।

আট মাস আগে অবশ্য ছবিটা শুরুই হয়েছিল অন্য ভাবে। লোকসভা ভোটে সে বার প্রার্থী কেডি বিশ্বাস। লোকাল ট্রেনের কামরা উঠে নিত্যযাত্রীদের মধ্যে প্রচার সেরে নজর টেনেছিলেন কেডি। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহও সে বার ছিল বেশ জোরদার। মতুয়াদের মধ্যেও এ বার ঠাকুরবাড়ির প্রার্থীদের নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কোথাও বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের সমর্থনে দেওয়াল লিখন, ব্যানার-পোস্টার চোখে পড়ল না। অথচ ওই সব এলাকার দেওয়াল জুড়ে এখনও কেডি বিশ্বাসের নামে দেওয়াল লিখন জ্বলজ্বল করছে। গ্রামের বিজেপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া বা এলাকায় প্রচার দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু কেন?

বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, মূলত প্রার্থী তাদের পছন্দ না হওয়াতেই প্রাথমিক কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। এক জেলা বিজেপি নেতার কথায়, “প্রচারে বেরিয়ে সুব্রতের প্রতি আমাদের স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর মনোভাব থেকে স্পষ্ট, যে তাঁদের প্রার্থীকে মন থেকে মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে।” বিজেপির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যা আছে আরও। তা হল, স্থানীয় নেতারা জানেনই না, তাঁদের ঠিক কী দায়িত্ব নিতে হবে। সাতটি বিধানসভা এলাকায় সাত জন রাজ্য নেতা দায়িত্ব পালন করছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা এখানে ভিড় করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। কিন্তু প্রচারে গ্রামের যিনি কর্মী বা নেতা, তাঁরই দেখা মিলছে না। কেন দেওয়াল লিখন বা পোস্টার খুঁজে পেতে অসুববিধা হচ্ছে গ্রামে গ্রামে? সুব্রত এ ব্যাপারে বলেন, “এ বার আমরা দেওয়াল লিখনের থেকে ব্যানার-পোস্টার-হোর্ডিং-লিফলেটে বেশি জোর দিয়েছি। তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে ইচ্ছে থাকলেও অনেক এলাকায় আমাদের কর্মীরা প্রকাশ্যে প্রচার করতে পারছেন না। তবে ভিতরে ভিতরে প্রচার শুরু চলছে’ বিজেপির একটা বড় অংশ মনে করছেন, তৃণমূলের থেকে বিজেপি যে আলাদা, তা মানুষকে বোঝানোই অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হচ্ছে। কারণ, অন্য দল থেকে এসে তৃণমূলে প্রার্থী হওয়া যায় বলে লোকের ধারণা ছিলই। কিন্তু বিজেপিতেও সেই প্রবণতা থাকতে পারে বলে অনেকের মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। এই সব ভোটাররা মনে করেন, বিজেপি অনেক বেশি সংগঠিত দল। কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে সুব্রত প্রার্থী হওয়ায় সেই ধারণা ভেঙে গিয়েছে। বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। এমনকী, সুব্রতের প্রার্থী হওয়া আটকাতে কর্মীরা ঠাকুরনগরে মিছিল ও রেল অবরোধ পর্যন্ত করেছিলেন। বারাসতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। দলের এই অংশটি সুব্রতকে পুরোপুরি মেনে নিয়েছেন, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। এই সব ভোটার, নেতা-কর্মী-সমর্থককে পাশে পাওয়াটাও জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় নেতৃত্বের একটি অংশ। গত বারের প্রার্থী কেডি এ বার প্রার্থী হতে না পারায় দলে ক্ষোভ আছে। যা প্রশমিত করতে বনগাঁয় এসে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ কেডি-সুব্রতকে দু’পাশে নিয়ে ঐক্যের বার্তা দিয়েছিলেন। তারপরে কেডি নিজে সুব্রতর সঙ্গে বারাসতে মনোনয়নপত্র জমা দিতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কি মনের ফাটল মুছে গিয়েছে, সে প্রশ্ন রয়েছে বিজেপির অন্দরেও। যদিও কেডি বলেন, “আমি দলের এক জন সৈনিক। দল আমাকে সেখানে যেতে বলছে, আমি সেখানেই যাচ্ছি। তবে প্রচারে এখনও ঝড় ওঠেনি এটা সত্যি। কেন, সেটা যাঁরা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তাঁরাই বলতে পারবেন।”

বনগাঁয় বিজেপির দীর্ঘদিনের নেতা কিশোর বিশ্বাসের নির্দলে দাঁড়ানোটা বিজেপির পক্ষে ভাল বার্তা হয়নি। দলের পুরনো নেতার অনুগামীরা সে ক্ষেত্রে বসে যেতেন। কিশোরবাবুর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনায় না মিটিয়ে তাঁকে উল্টে বহিষ্কার করে কড়া বার্তা দিতে চাইলেও তা হিতে বিপরীত হবে কিনা, সেই সংশয়ও আছে অনেকের মধ্যে। কিশোরবাবু বলেন, “আমি দল বিরোধী হলেও সমাজবিরোধী নই। অনেকেই কাকে ভোট দেবেন বুঝতে পারছিলেন না। আমি দাঁড়ানোয় তাঁরা ভোট দেওয়ার জায়গা পেয়েছেন।” কয়েক জন স্থানীয় নেতা সাফ বলেই দিচ্ছেন, “দল মিটিং-মিছিলে যেতে বললে যাব। কিন্তু এর বাইরে আমাদের কোনও দায়িত্ব নেই।” এক জেলা বিজেপি নেতার কথায়, “নির্বাচনে প্রচারের দায়িত্ব রয়েছে রাজ্যের হাতে। রাজ্য নেতৃত্বই সব করছেন। সেখানে জেলার নেতাদের মতামত থাকছে না বলে কিছু ক্ষোভ হয় তো তৈরি হয়েছে।” জেলা বিজেপি সভাপতি কামদেব দত্ত অবশ্য জানিয়েছেন, নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে প্রস্তুত হতে কিছুটা সময় লেগেছে। এ বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। সে কারণে হয় তো প্রচারটা তেমন চোখে পড়ছে না। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, বড় বড় সভা, রোড শো-ও শুরু হয়ে গিয়েছে। মানুষ তা দেখতে পারছেন। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, একাধিক সর্বভারতীয় নেতা এ বার বনগাঁয় সভা করতে আসবেন। তারকা প্রচারকদেরও আনা হবে। সেই তালিকায় আছেন অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, রাহুল সিংহ, কুমার শানু, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, নিমু ভৌমিক, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়রা।

জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার বলেন, “আমরা চাইছি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বনগাঁয় প্রচারে এসে উদ্বাস্তুদের পুর্নবাসন ও নাগরিকত্ব নিয়ে বলে যান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এখনও সবুজ সংকেত না আসায় কর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। তার প্রভাব প্রচারে পড়তে পারে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE