ভাঁড়ারের এমনই হাল, যে এ বার কর্মীদের বেতনেও হাত দিয়েছে রাজ্যের প্রধান তিন পরিবহণ নিগম। ধাক্কা সামলাতে কখনও কর্মীদের কো-অপারেটিভ তহবিলে টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে না, কখনও আবার টাকা জমা পড়ছে না কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে। এমনকী কোনও কোনও মাসে কর্মীদের পুরো বেতনটুকুও হাতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রতি মাসে কর্মীদের বেতনের একটি অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা পড়ার কথা। কোথাও আবার বেতনের একটি অংশ জমা পড়ে কর্মীদের কো-অপারেটিভ তহবিলে। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কর্মীদের বেতনের এই অংশ সংশ্লিষ্ট তহবিলে জমা না-পড়ে নিগমের দৈনন্দিন কাজে খরচ করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, গত দু’বছরে এনবিএসটিসি-তে কর্মীদের পিএফ-এর টাকা জমা পড়েনি। বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সুদ-সহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি ফের পিএফ তহবিলে কর্মীদের অংশ জমা দিতে শুরু করেছে নিগম। সে জন্য আবার প্রতি মাসে কর্মীদের বেতনের ২৫% অর্থ কেটে নেওয়া হচ্ছে। বকেয়া বেতনের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ৩৫ কোটি ছাড়িয়েছে।
একই ভাবে, সিএসটিসি এবং সিটিসি-র কর্মীদের বকেয়া পিএফ-এর টাকার অঙ্কও দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এই দুই নিগমের কো-অপারেটিভ তহবিলেও কর্মীদের বেতনের অংশ প্রতি মাসে পড়ছে না। সিএসটিসি-র কো-অপারেটিভ তহবিলে কর্মীদের বকেয়া টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি, সিটিসি-তে প্রায় ৭ কোটি। কো-অপারেটিভে কর্মীদের বকেয়া অর্থ মেটানোর জন্য সম্প্রতি রাজ্য সরকারের কাছে ঋণ চেয়েছে সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ।
কেন এই হাড়ির হাল?
পরিবহণ কর্তারা জানান, বছর দেড়েক আগেও সিএসটিসি-র আয় হত মাসে ছ’কোটি টাকার মতো। তার পর থেকে কয়েক দফায় জ্বালানির দাম বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি। ফলে এক দিকে যেমন বাসের সংখ্যা কমেছে, অন্য দিকে বেড়েছে লোকসানের বহরও। সব মিলিয়ে আয় প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য নিগমের হালও কমবেশি একই। সিএসটিসি-র সিটু নেতা রমাপ্রসাদ সেনগুপ্তর দাবি, “কর্মীদের কো-অপারেটিভ সোসাইটি এখন চালায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। আমরা শুনেছি, কো-অপারেটিভের হাতে টাকা নেই। ফলে প্রয়োজনে ঋণ নিতে পারছেন না কর্মীরা। অবসরের সময় কর্মীরা কো-অপারেটিভে জমানো তাঁদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।” তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতার দাবি, “ছ’মাস ধরে টাকা না পেয়ে আমরা বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা ফেরত চেয়েছি।” একই পরিস্থিতি সিটিসি-রও। তবে সংস্থা সূত্রের খবর, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বাম আমলের আগে থেকেই বকেয়া ছিল। গত তিন বছরে তার পরিমাণ বেড়েছে।
নিগমগুলির এই দুর্দশার জন্য আগের আমলের উপরেই দায় চাপিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর কথায়, “এ সবই ৩৪ বছরের অপশাসনের ফল। ক্ষমতায় আসার পরে আমাদের শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। এটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।” একই সঙ্গে অবশ্য তিনি জানান, পিএফ বা কো-অপারেটিভের টাকা কর্মীদের প্রাপ্য। ওই টাকা দিতেই হবে। কেন টাকা জমা পড়েনি, তা তিনি খতিয়ে দেখবেন। তবে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি এড়িয়েই গিয়েছেন মন্ত্রী।
ভাড়া না বাড়লে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে বলে মনে করেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু। তিনি বলেন, “এখন যা অবস্থা, তাতে কিছুটা ভাড়া তো বাড়াতেই হবে। না হলে যা আছে, সেটাও ধসে পড়বে।”
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy