তৃণমূল সরকারের দাবি আর সংখ্যালঘুদের অভিজ্ঞতা মোটেই মিলছে না।
ভোটের আগে তাঁরা রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে জন্য যে-সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সরকার গঠনের ১০০ দিনের মধ্যে তার ৯০ শতাংশই পূরণ করে ফেলেছেন বলে অসংখ্য বার দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী যে-দাবি করছেন, বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না। নিছক অভিযোগ করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তাঁরা। মমতার সরকার তাঁদের জন্য কতটা কী করেছে, তার খতিয়ানও দাবি করছেন। বৃহস্পতিবার, বিশ্ব সংখ্যালঘু দিবসে নবান্নের কর্তাদের দিকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এই নিয়ে সরকারি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশের দাবি জানালেন ওই নেতারা।
প্রতিশ্রুতি পালন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে ঘিরে সংখ্যালঘু নেতাদের প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। বস্তুত, ক্ষমতায় আসার সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ঈদের নমাজে গিয়ে এই ধরনের অভিযোগ-ক্ষোভের কথা শুনতে হয়েছিল মমতাকে। সে-বার রেড রোডে নমাজের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েক লক্ষ মানুষের সামনে ইমাম কাজী ফজলুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, জঙ্গলমহল, পাহাড় বা সিঙ্গুর সমস্যার সমাধানে নতুন সরকার যে-তৎপরতা দেখিয়েছে, সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে তা মোটেই চোখে পড়ছে না। সমালোচনা করেই থামেননি তিনি। বাম জমানায় সংখ্যালঘু কল্যাণে কাজ বিশেষ হয়নি বলে অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন মমতার সরকারকে। তিনি সে-দিনের জমায়েতে বলেছিলেন, “আগেকার সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজ করেছিল সামান্য। এই কারণে তাদের ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হয়েছে। এই সরকারও যদি একই পথে চলে, তা হলে তাদের দরজা দেখিয়ে দিতে বেশি সময় লাগবে না।”
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের বক্তব্যে ফের শোনা গেল শাসক দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ না-হওয়ার ক্ষোভ। মমতার দেওয়া প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ হয়নি বলে এ দিন দাবি করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন সংখালঘু সংগঠনের নেতারা। মৌলালিতে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে এক আলোচনাচক্রে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান দাবি করেন, গত সাড়ে তিন বছরে সংখ্যালঘুদের জন্য রাজ্যের নতুন সরকার কী কাজ করেছে, সেই বিষয়ে তারা একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। তা হলেই বোঝা যাবে, কথা দিয়ে কতটা কথা রেখেছে এই সরকার।
কেন তিনি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলছেন, তারও ব্যাখ্যা দেন কামরুজ্জামান। কিছু উদাহরণ দি।ে তিনি বলেন, “কলকাতায় সেই ব্রিটিশ আমলে মুসলিমদের জন্য তিনটি ছাত্রাবাস তৈরি হয়েছিল। তার পরে রাজ্যের রাজধানী শহরে আর একটিও মুসলিম ছাত্রাবাস হল না। ফলে জেলা থেকে যে-সব ভাল পড়ুয়া উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে কলকাতায় আসছে, তারা থাকার জায়গা না-পেয়ে আবার নিজের নিজের জেলায় ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।” তবে ওয়াকফ বোর্ডের পরিচালনায় কলকাতায় একটি মুসলিম মহিলা ছাত্রাবাস তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি ওই সংখ্যালঘু নেতা।
চাকরির ক্ষেত্রেও তৃণমূল সরকার কথা রাখেনি বলে আলোচনাচক্রে মন্তব্য করেন শিখ সংগঠনের প্রতিনিধি সুখরঞ্জন সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তাঁর অভিযোগ, সরকারি চাকরিতে রাজ্যের সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী নিয়োগ আগের তুলনায় বাড়েনি। এই রাজ্যের সরকার মুখে নানা ধরনের দাবি করলেও সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কোনও পরিকাঠামোই তৈরি করতে পারেনি। এবং এই কারণেই বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের দেওয়া টাকার বেশির ভাগ খরচ করতে পারেনি রাজ্য। তাই সেই টাকা ফিরে যাচ্ছে দিল্লিতে।
একটি খ্রিস্টান সংগঠনের প্রতিনিধি ফাদার কে এল জোসেফও বিভিন্ন বিষয়ে সরব হন। সভায় প্রায় সব বক্তাই অভিযোগ করেন, ওবিসি বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য উচ্চশিক্ষার জন্য বর্তমান সরকার যে-কোটা ব্যবস্থা চালু করেছে, তা-ও ঠিকমতো রূপায়ণ করা হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy