Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Travel News

অপার মুগ্ধতার কয়রাবেড়া

অপার নৈঃশব্দ আর অগাধ সৌন্দর্যের পশরা সাজিয়ে যেন বসে আছে এই জায়গা। লিখছেন সন্দীপন মজুমদার।পাহাড়ি সান্নিধ্য, আখের খেত, আদিবাসীদের অসম্ভব সুন্দররংচঙে মাটির ঘর, অযোধ্যা হিলটপ— এসব পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম সৌন্দর্যখনি কয়রাবেড়ায়, যেটা এই সফরে আমার গন্তব্য এবং রাত্রিবাসের ঠিকানা।

কয়রাবেড়া ড্যাম।

কয়রাবেড়া ড্যাম।

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:৪৪
Share: Save:

‘লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা...’,জনপ্রিয় গানের এই কথাগুলিই মনে আসছিল বারবার। উইকএন্ড কাটাতে কয়েক দিন আগে কলকাতা থেকে গিয়েছিলাম পুরুলিয়ায়। তবে উইকএন্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত একটা দিন জুড়ে মোট তিনদিনের মেয়াদ ছিল এই অনবদ্য ও উপভোগ্য অবকাশের। কলকাতা থেকে গিয়েছিলাম সড়কপথেই। আসানসোল পেরিয়ে পুরুলিয়ার দিকে যেতে যেতে ক্রমশ বদলে যেতে থাকল নিসর্গ। ধূসর মাটি হয়ে উঠল লাল। দূরে ছোট-বড় টিলা নজরে পড়তে শুরু করল রুক্ষ প্রান্তরে। আর তখনই উদ্বেল, আনমনা মনে হঠাৎই যেন গুনগুনিয়ে উঠল ওই গান।

পুরুলিয়া শহরের (কংসাবতী নদীর উত্তরে অবস্থিত এই জনপদের আগের পরিচিতি ছিল মানভূম নগর বলে) কংক্রিট-লাঞ্ছিত পরিবেশ পেরিয়ে যখন সিরকাবাদ পৌঁছলাম, তখন এক লহমায় যেন পারিপার্শ্বিক ল্যান্ডস্কেপ গেল বদলে। বাগমুন্ডি দিয়েও যাওয়া যায় অযোধ্যা পাহাড়ে, তবে সিরকাবাদ হয়ে যাওয়ার পথটা সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে বেশ খানিকটা এগিয়েই থাকবে। ‘আঁকাবাঁকা পথে যদি মন হয়ে যায় নদী’, তবে সে নদীতে বাঁধ নাই বা দিলাম? শুধু সেই আঁকাবাঁকা পথের চারপাশে যে অসামান্য রূপ, তাকেই নাহয় দোসর করে নিলাম? শিমুল, পলাশ আদৃত গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যখন সবচেয়ে উঁচু জায়গাটায় পৌঁছলাম, তখনই দূরদিগন্তে পাহাড়ের যে সারি চোখের সামনে ভেসে উঠল, সেই সারিতেই বিদ্যমান ছুঁচোলো আকৃতির যে অনবদ্য শৃঙ্গটি বেশ নজর কাড়ছে, তাই হল গজাবুরু (পুরুলিয়ার অন্যতম উঁচু শৃঙ্গ)।

পাহাড়ি সান্নিধ্য, আখের খেত, আদিবাসীদের অসম্ভব সুন্দররংচঙে মাটির ঘর, অযোধ্যা হিলটপ— এসব পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম সৌন্দর্যখনি কয়রাবেড়ায়, যেটা এই সফরে আমার গন্তব্য এবং রাত্রিবাসের ঠিকানা।

শীতের আমেজে মজে কয়রাবেড়া বাঁধ।

আরও পড়ুন, নীলাভ সুন্দরী হয়ে প্রতীক্ষায় বড়ন্তি

পৌঁছেই চমৎকৃত হলাম। কয়রাবেড়া বাঁধের জলাশয়ের ধারেই অনেকটা জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই ‘কয়রাবেড়া ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট’। অপার নৈঃশব্দ আর অগাধ সৌন্দর্যের পশরা সাজিয়ে যেন বসে আছে এইজায়গা। ঘন জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ে ঘেরা নীল জলাশয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে পরিযায়ী পাখির দল। হাওয়ার পরশে ছোট ছোট ঢেউ উঠছে জলে। জলাশয়ের গভীরতায় মনের সুখে খেলা করে রুই, কাতলা, কালবোস, গ্র্যাসকার্প, বাঁশপাতি, মাগুর, শোল ইত্যাদি মাছ। টায়ারে চড়ে স্থানীয় মানুষ সেইসব মাছ ধরে বিক্রি করেন, আর অনেকসময়েই এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা তার সুস্বাদু রান্নায় মোহিত হন।

প্রায় চার একর অনুর্বর জমিতে উর্বরতা তৈরি করে ফলানো হয়েছে নানান সব্জি ও ফল-ফুলের গাছ। আম, জাম, কুল, পেয়ারা, বেদানা, কমলালেবু, সবেদা, আঙুর, লিচু, নাশপাতি, বাতাবি লেবু ইত্যাদি ফলগাছের পাশাপাশি কুমড়ো, লাউ, বিন্‌স, করলা, টমেটো, মটরশুঁটি, পালংশাক, ধনেশাক, ঢ্যাঁড়স, মুলো, বেগুন প্রভৃতি শাকসব্জির চাষও হয়েছে পুরো এলাকা জুড়ে। দারচিনি, তেজপাতার গাছও দেখতে পেলাম এক জায়গায়।

কটেজ ছাড়া থাকার জন্য রয়েছে আরামদায়ক তাঁবুও।

ফেন্সিং ঘেরা চত্বরের বাইরে আর জলাশয়ের ওধারে বিভিন্ন ধরনের জন্তু-জানোয়ার দেখা যায়, এমনটাই শুনলাম। হাতি, বার্কিং ডিয়ার, বানর, হায়েনা, ময়ূর, শজারু, নেউল, বুনো শুয়োর ইত্যাদি তো হামেশাই দেখা যায় এসব জায়গায়, এমনকী চিতাবাঘও নাকি বিরাজ করে গভীর জঙ্গলে। তবে আদিবাসীদের শিকার উৎসবের সময় এযাবৎকাল এত পশুহত্যা হয়েছে যে বড় সাইজের হাতি ছাড়া বাকি সবকিছুর সংখ্যাই বেশ কমের দিকে। রিসর্টের পশ্চাদপটেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ল্যান্ডস্কেপের শোভাকে সমৃদ্ধ করেছে চেম্‌টোবুরু (ভিন্ন উচ্চারণে চাম্‌তাবুরু) শৃঙ্গ। পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে সাধারণভাবে পরিচিত গোর্গাবুরু (উচ্চতা ২৮০৫ ফুট)। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, গোর্গাবুরুর থেকেওএই চেম্‌টোবুরু সামান্য বেশি উচ্চতার।

এমনিতে পুরুলিয়া হল ছোটনাগপুর মালভূমিরই একটা অংশ। ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের (এবং অবশ্যই পূর্বঘাট পর্বতমালার) বিস্তৃত অংশ বলা যেতে পারে এই অযোধ্যা পাহাড়কে। স্থানীয় মানুষেরা পায়ে হেঁটে ঘন জঙ্গলে ঘেরা দুর্গম চড়াই পথ বেয়ে আড়াই-তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যান চেম্‌টোবুরুর মাথায়। সেই পথে পড়ে পাহাড়ের গায়ে এক বিশাল গুহা বাদলিলাপাং। এই অঞ্চলে মূলত বাস ছিল মুন্ডা সম্প্রদায়ের। এই বাদলিলাপাং (এমনকী, কয়রাবেড়া নামটাও) সেই মুন্ডাদের দেওয়া নাম। তবে সাধারণভাবে এটি বাদুড় গুহা বলেই পরিচিত, অন্ধকার গুহায় প্রচুর বাদুড়ের বাস বলেই হয়তো এহেন নাম।

বড় সুন্দর এই ঝর্না।

বোটিংয়ের (কায়াকিং) ব্যবস্থা রয়েছে দেখে ভেসে পড়লাম একটা বোট নিয়ে। চালক অবশ্যই আছে। লাইফ জ্যাকেটে লাইফ যেমন হল সুরক্ষিত,একইসঙ্গে ওই অসাধারণ জলবিহারে লাইফ তেমনই হয়ে উঠল যারপরনাই উপভোগ্যও। ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল। কানে আসছে জলের শব্দ, পাখির ডাক। নিঃস্তব্ধ পরিবেশে আর অন্য কোনও শব্দ নেই। কয়রাবেড়া নদীতে বাঁধ দিয়েই তৈরি হয়েছে এই অনুপম জলাধার। ভাসতে ভাসতে কখনও কখনও ঘন জঙ্গলে আবৃত পাহাড়ের কাছে চলে যাচ্ছি, কখনও আবার চলে যাচ্ছি দূরে। বোটচালকের কাছেই শুনলাম, পাড়ের একটা জায়গায় নেমে দুর্গমপথে কিছুটা পায়ে হেঁটে পৌঁছনো যায় এক অপূর্ব ঝর্নার কাছে। অনেকটা উচ্চতা থেকে সেখানে জলরাশি ঝাঁপিয়ে পড়ে নীচে। আর দুর্বার সেই জলধারার জলকণার শীতল স্পর্শ তখন ছুঁয়ে যায় নীচে দাঁড়ানো মানুষের শরীর। ঝর্নার নামটাও বড় অদ্ভুত, মাছকান্দা। জলাশয়ে খেলে বেড়ানো মাছেরা ঝর্নার জলের গা বেয়ে উল্লম্বভাবে উঠতে না পেরে নাকি বেজায় কান্নাকাটি করে এখানে, বোটচালকের মুখে এমনটাই শুনলাম! আর এই থেকেই ঝর্নার নাম হয়ে যায় মাছকান্দা।

গ্রামের আকর্ষণও এড়ানো মুশকিল।

উঁচু পাহাড়ের প্রাচীরে সূর্যটা আড়াল হতেই অন্ধকার নামল ঝুপ করে। তবে সেই অন্ধকারও উপভোগ্য হয়ে উঠল নাচে-গানে। সেই সন্ধ্যায় ঝুমুর গান ও নাচ পরিবেশন করল পুরুলিয়া শহরের একটি দল। ছো (জনপ্রিয় ও বেশি পরিচিত নাম ছৌ হলেও, আসল নামটি কিন্তু ছো)নাচ পরিবেশন করল করেং মোড়ের আদিবাসী সম্প্রদায়। বাংলার এই ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি শিল্পীদের নৈপুণ্য ও পারদর্শিতায় মুগ্ধ করল উপস্থিত সব পর্যটককেই। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় খোলা মাঠে জ্বালানো কাঠের আগুনের উত্তাপ নিতে নিতে চোখটা হঠাৎই চলে গেল আকাশের দিকে। আকাশে তখন মধুর জ্যোতি ছড়াচ্ছে সুপারমুন (ডিসেম্বরের পূর্ণিমায় পৃথিবীর নিকটবর্তী চাঁদের এই নামটাই দিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা)।

আরও পড়ুন, পাহাড়ি ঢালের গাঁয়ে হোম-স্টে

কয়রাবেড়া জায়গাটি এতটাই সুন্দর যে, কোনও পর্যটক ইচ্ছে করলে ২-৩ দিন এখানেই দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারেন আয়েশে। লেক ও পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে, অলস পদচারণায় কাছের গ্রাম ও এ-দিকসে-দিক পদব্রজে ঘুরে বেড়িয়ে, ছুটির সময়টা কেটে যাবে দারুণভাবেই। তবে আমি ঠিক করলাম পরদিনটা কাটাব কাছেপিঠের দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি দেখে। সেই ভাবনা থেকেই পরদিন খুব সকালে প্রাতরাশ সেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কুয়াশামাখা শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে। গাড়িরাস্তার পাশেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়। শাল, শিমূল, মহুয়া, আমলকি, পলাশ, পিয়াল,কুল, বেল ইত্যাদি গাছে ছাওয়া জঙ্গলের মধ্য দিয়েই চলে গেছে লাল মাটির চড়াই, উৎরাই রাস্তা। মার্চ-এপ্রিলে পলাশ ও শিমূলের রঙের বন্যায় যখন প্লাবিত হয় গোটা অঞ্চল, তখন আবার একেবারে অন্যরূপে ধরা পড়ে এইসব জায়গা।

অনুপম সৌন্দর্য।

সীতাকুন্ড, ময়ূর পাহাড়, মার্বেল লেক, বামনি ও টুর্গা ফল্‌স, চড়িদা গ্রাম (ছো নাচের মুখোশ তৈরির জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম), আপার ও লোয়ার ড্যাম, অনিন্দ্যসুন্দর মুরগুমা লেক (সাহারজোড় নদীকে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা এই বিশাল লেকটির শোভা দেখার মতোই) দেখে দিনান্তে পৌঁছলাম কংসাবতী নদীর ধারে অবস্থিত দেউলঘাটায়। নবম-দশম শতাব্দীতে নির্মিত মন্দিরগুলি বর্তমানে ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। সেই ভগ্নদশার মধ্যেও বাইরের দেওয়ালের গায়ের কিছু অলংকরণ কিন্তু যথেষ্টই নজর কাড়ল। মন্দিরে বিগ্রহ নেই। সেগুলি পাশের একটি ছোট ঘরে রাখা আছে। সুপ্রাচীন মূর্তিগুলি যেমন সুন্দর, তেমনই বিস্ময়উদ্রেককারী। দিনান্তের রক্তিম আলো ক্রমশ রাঙিয়ে দিল দেউলঘাটা মন্দিররাজি ও কিছুটা দূরে বয়ে যাওয়া কংসাবতী নদীকে। দ্রুত অপসৃয়মান রবিকিরণের সঙ্গে গাড়ি অবশ্য পাল্লা দিতে পারল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রকৃতির সব আলো গেল মুছে। হেডলাইটের কৃত্রিম আলোয় পথ চিনে গাড়ি ফিরে এল কয়রাবেড়ায়।

অবশ্যই দেখতে ভুলবেন না ছো নাচের এই পরিবেশন।

দ্বিতীয় সন্ধ্যায় পরিবেশিত হল সাঁওতালি নৃত্যগীত। মাঠা অঞ্চলের আদিবাসীরা মনকেমন করা সুরে, নাচের ছন্দে দোলা দিয়ে গেল তামাম শহুরে পর্যটককে। রাতের খাওয়া সমাধা করে সুপারমুনের অপূর্ব রূপ দেখে ঘরে ঢুকে পড়লাম তাড়াতাড়িই। কড়া শীতে, কম্বলের উষ্ণ সান্নিধ্যে ঘুম আসতে দেরি হল না। কিন্তু অত্যন্ত আরামদায়ক এই ঘুমটা পরদিন খুব সকালেই ভেঙে গেল বাঁশির সুরে। ঘুমপাড়ানি নয়, এ তো দেখছি ঘুম জাগানিয়া বাঁশি! বাঁশির সুরের সেই মনমাতানো মায়াজাল যেন গ্রাস করে নিল সমস্ত সত্তা। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, গাছের তলায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় এক মানুষ বাজিয়ে চলেছেন সেই বাঁশি। আলাপ হল, নাম রামু মাছুয়ার। বাঁশির প্রথাগত শিক্ষা কিছুটি নেই, কারও কাছেই শেখেননি কখনও। বাঁশিটাও নিজের হাতে গড়া। ছোটবেলায় গরু চরাতে চরাতে আপনমনেই সুর তুলতেন বাঁশিতে। সেটাই কালে কালে অভ্যাস হয়ে যায়। ব্যস এটুকুই।

আরও পড়ুন, ভাল্কির পাড়াগুলি ভিন্ন, তবে পরবে-উৎসবে সবাই অভিন্ন

জীবিকা নির্বাহ হয় হোটেলে বাসন মেজে। মা, বউ, ছেলে নিয়ে রামুর পরিবার। এ এক বিস্ময়! প্রথাগত শিক্ষার বাইরে শিল্পের এইরকম উৎকর্ষ, শিল্পীর এহেন মুন্সিয়ানা, এমন উদাহরণ দেশে হয়তো আরও আছে। কিন্তু পুরুলিয়ার রুক্ষ প্রান্তরে এই যে নমুনা চাক্ষুষ করলাম, তার কাছে বোধহয় চেম্‌টোবুরুর উচ্চতাও সম্ভ্রমে মাথা হেঁট করে।

সর্ষে খেতের হাতছানি।

রামুর সুরের মায়াজাল আচ্ছন্ন করে রেখেছিল অনেকটা সময়। কিন্তু সফরসূচির নির্ঘণ্ট অনুসারে কলকাতা ফেরার সময়ও তো এগিয়ে এল।কয়রাবেড়ার এই সৌন্দর্য যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। তার থেকে পরিত্রাণ তো সহজ নয়। সহজিয়া বাঁশির সুরেলা প্রভাব, পাহাড় আর লেকের অসাধারণ যুগলবন্দি এমনই আকর্ষণ করছে যে তার বাঁধন ছিন্ন করা বেশ দুরূহ। তবুও তো নিয়ম মেনেই ‘সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী, ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন...’। সে ভাবেই, অমোঘ সে নিয়ম মেনেই ফিরে চললাম কলকাতার পথে। পিছনে পড়ে রইলো চেম্‌টোবুরু পাহাড়, কয়রাবেড়া, রামু মাছুয়ার বাঁশির সম্মোহন, লাল মাটির মায়া...আরও কত কি যে!

কী ভাবে যাবেন:

কলকাতা থেকে সড়কপথে কয়রাবেড়ার দূরত্ব ৩৩৫ কিলোমিটার। গাড়িতে গেলে মোটামুটি ভাবে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। ধর্মতলা থেকে বাসও যায় (বুলেট বাস)।নামতে হবে করেং মোড়ে। হাওড়া থেকে ট্রেনেও পৌঁছতে পারেন। হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার, লালমাটি এক্সপ্রেস কিংবা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, সবক’টি ট্রেনই যায় পুরুলিয়া। পুরুলিয়া স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান ৭৫ কিলোমিটার দূরবর্তী কয়রাবেড়ায়। তবে কয়রাবেড়ার নিকটবর্তী স্টেশন হল বরাভূম (৪০ কিলোমিটার) ও সুইসা (২৫ কিলোমিটার)। সাইট সিয়িং করার জন্য গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন:

কয়রাবেড়ায় থাকার একটিই জায়গা আছে।‘কয়রাবেড়া ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট’। দ্বিশয্যা কটেজের ভাড়া ৩৫০০ টাকা, দ্বিশয্যা স্ট্যান্ডার্ড টেন্টের ভাড়া ৪০০০ টাকা, দ্বিশয্যা সুপিরিয়র টেন্টের ভাড়া ৫০০০ টাকা, দ্বিশয্যা ডিলাক্স টেন্টের ভাড়া ৬০০০ টাকা। যোগাযোগ: ৯৮৩০১-৬৯৬৯৪, ৯৮৩০১-৫৫৫৭০

অনলাইন বুকিংয়ের জন্য: www.ecoadventureresorts.net

কয়রাবেড়ায় রাত্রিবাস করেই ঘুরে নিতে পারেন সমগ্র পুরুলিয়া, হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে।

বিশেষ আকর্ষণ:

অবশ্যই ঐতিহ্যবাহী পুরুলিয়ার টুসু-উৎসব। মনমাতানো অন্য রঙে তখন পাওয়া যাবে এইসব অঞ্চলকে। এ বছরের ১৪ জানুয়ারি দিনটি পৌষ সংক্রান্তি। সেদিন থেকে শুরু হয়ে ৩-৪ দিন পর্যন্ত এই মেলা (বা উৎসব) বসে পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায়। কয়রাবেড়া ও তার কাছাকাছির গ্রামগুলিতেও বসে এই রংবাহারি মেলা। ওকাদা, বুড়দা, বুকারডি ইত্যাদি গ্রামগুলিতেও মেলা বসে এক দিন করে। কয়রাবেড়াতে এই উপলক্ষ্যে বসে ‘মহাদেব মেলা’, ওই সময়টাতেই (১৭-১৮ জানুয়ারি)। সমাপ্তিতে টুসু চৌডল বিসর্জন হয় ড্যামের জলে।

ছবি: লেখক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE