মনোরম দৃশ্য পেরিয়ে পাহাড়চূড়োয় শান্তিস্তূপে পৌঁছতে পারেন রজ্জুপথে। ছবি- শাটারস্টক
ঘুরতে যাবেন বলে আগে থেকে সব কিছু ঠিক থাকলেও আচমকা শরীর খারাপ হওয়ায় তা বাতিল করতে হয়েছে। কিন্তু মন তো মানতে চায় না। একে ছুটি পাওয়া যায় না, তার উপর যদি এমন তুচ্ছ কারণে ঘুরতে যাওয়া বাতিল হয়ে যায়, ভাবছেন তা হলে আর বেঁচে থেকে লাভ কী? আচ্ছা এমন কোনও জায়গা আছে কি, যেখানে গেলে ঘোরা এবং শরীরের যত্ন দুই-ই হবে? শরীর খারাপ হলেই এক সময়ে চিকিৎসকরা নিদান দিতেন হাওয়া বদলের। পুরী বাদ দিলে রাজগীর, দেওঘর এবং মধুপুর, এই ছিল বাঙালির তিন পছন্দের জায়গা। তা হলে তিন দিনের ছুটিতে চিকিৎসকদের ‘প্রেসক্রাইব’ করা রাজগীর ঘুরে এলেই হয়।
বিপুলগিরি, বৈভবগিরি, শোনগিরি এবং উদয়গিরি, এই পাঁচ পাহাড়ের ঘেরা রাজগীর, ইতিহাসের পাতায় যার নাম সোনার হরফে লেখা। এই সব পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা রয়েছে জৈন ধর্মগুরু মহাবীর এবং বৌদ্ধধর্মের প্রধান গৌতম বুদ্ধের উপদেশাবলী। শোনা যায়, রাজার গৃহ থেকে এই জায়গার নাম হয় রাজগীর। প্রাচীন ভারতের মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজা বিম্বিসার এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা। এককালে মগধের রাজধানী ছিল এই রাজগীর। পরে অবশ্য তা পাটলিপুত্রে স্থানান্তরিত করা হয়।
বিহারের অন্যতম একটি শহর রাজগীরে এলে কী কী দেখবেন?
১) বুদ্ধগয়া
নেপাল থেকে আসা তরুণ সিদ্ধার্থ বোধিলাভ করে গৌতম বুদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন এখানেই। যে পিপুল গাছের নীচে বসে সিদ্ধার্থের বোধি লাভ হয়েছিল, সেই বেদির পাশেই রয়েছে মহাবোধি মন্দির। জাপান, চিন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতমান, কম্বোডিয়ার মতো দেশ থেকে বহু পর্যটক আসেন এই বুদ্ধগয়ায়।
২) রাজগীর
উষ্ণ প্রস্রবণ— রাজগীরের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল এই উষ্ণ প্রস্রবণটি।
অজাতশত্রু দুর্গ ও স্তূপ— খ্রিস্টের জন্মের ৫০০ বছর আগে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয় এই দুর্গ। চারদিকে পরিখাবৃত এই দুর্গের ৩২টি প্রবেশদ্বার এখনও অক্ষত।
বিম্বিসার জেল— অজাতশত্রুর হাতে পরাজিত হয়ে এখানেই বন্দি ছিলেন বিম্বিসার।
বেণুবন বিহার— আদতে প্রমোদকানন হলেও শোনা যায়, এক সময়ে গৌতম বুদ্ধের পা পড়েছিল এখানে। এখন অবশ্য এই কানন বিভিন্ন প্রাণীর আশ্রয়স্থল।
৩) নালন্দা
রাজগীর থেকে নালন্দার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। খিস্ট্রপূর্ব ৩ শতকে সম্রাট অশোক, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে যুগের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে নালন্দা ছিল অন্যতম। দেশ-বিদেশের তাবড় তাবড় ছাত্র পড়তে আসতেন এখানে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যের পদে নিযুক্ত ছিলেন শীলভদ্র। তাঁর আমলেই চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এসেছিলেন শিক্ষার এই পীঠস্থানে। সাহিত্য, দর্শন, বিভিন্ন ধর্মচর্চার পাঠ দেওয়া হত। শুনলে অবাক হবেন, সেই সময়েও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হত। এত বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ এবং সংলগ্ন মিউজিয়াম ঘুরে দেখতেই মোটামুটি একটা গোটা দিন কেটে যাবে।
৪) পাওয়াপুরী
এর পর দেখে নিন ২৪তম জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের নির্বাণস্থল পাওয়াপুরী। প্রসিদ্ধ জৈনতীর্থ, পাওয়াপুরীতে রয়েছে বিশাল এক হ্রদ। হ্রদের একেবারে মাঝে রয়েছে শ্বেতপাথরের তৈরি জৈনমন্দির।
৫) বিশ্বশান্তি স্তূপ
রত্নগিরি পাহাড়ের চূড়োয় তৈরি, দেখতে অবিকল মধ্যপ্রদেশের সাঁচী স্তূপের মতো একটি বৌদ্ধস্তূপ রয়েছে এখানে। ৬০০ মিটার দীর্ঘ রজ্জুপথ (রোপওয়ে) পেরিয়ে ওঠা যায় শান্তিস্তূপে। চাইলে হেঁটেও যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
এখানে থাকার জন্য বিহার পর্যটন বিভাগের অতিথি নিবাস রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ছোট-বড় নানা ধরনের হোটেল। তবে এই মরসুমে কলকাতা থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভাল। না হলে জায়গা পাওয়া মুশকিল।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেনে চেপে মধ্য রাতে নামতে হবে বখতিয়ারপুর স্টেশনে। সেখান থেকে আবার লোকাল ট্রেনে রাজগীর পৌঁছতে সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েক। ট্রেনে না গেলে বাসে বা গাড়িতেও রাজগীর পৌঁছনো যায়। কলকাতা থেকে সরাসরি গয়াতেও যেতে পারেন। কলকাতা থেকে বিমানেও গয়া পৌঁছনো যায়। সড়ক পথে যেতে সময় লাগে ১২ ঘণ্টার মতো। এসপ্ল্যানেড চত্বর থেকে প্রতি দিনই বাস ছাড়ে। এ ছাড়া গাড়ি চালানোর শখ থাকলে নিজের গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন। তবে পরিবারের বয়স্কদের নিয়ে এত পথ পাড়ি না দেওয়াই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy