Advertisement
২৬ জানুয়ারি ২০২৫
Gangasagar

সপ্তাহান্তের ছুটিতে ঘুরে আসতেই পারেন গঙ্গাসাগর থেকে, কোথায় থাকবেন, কী ভাবে যাবেন?

‘সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর এক বার’, এমন প্রবাদ এখন বোধ হয় আর খাটে না। ছুটি কাটাতে যে কোনও দিন যাওয়া যায়।

পৌষ সংক্রান্তির আগে শেষ সপ্তাহান্তে গঙ্গাসাগর ঘুরে এলে কেমন হয়?

পৌষ সংক্রান্তির আগে শেষ সপ্তাহান্তে গঙ্গাসাগর ঘুরে এলে কেমন হয়? ছবি- সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১৭
Share: Save:

কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতে যাবেন ভাবতে ভাবতেই ডিসেম্বর মাস পেরিয়ে আরও একটি নতুন বছর চলে এল। কিন্তু গত বছরের আক্ষেপ নিয়ে নতুন বছর শুরু করা মহা পাপ। তাই বছরের শুরুতেই ঘুরেফিরে সেই পাপ খণ্ডন করে আসতেই হবে। পাপ-পু্ণ্যের কথা যখন উঠল, তখন পৌষ সংক্রান্তির আগে শেষ সপ্তাহান্তে গঙ্গাসাগর ঘুরে এলে কেমন হয়?

ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছেন গঙ্গাসাগর যাওয়া নাকি কঠিন ব্যাপার। তাই পু্ণ্য অর্জন করতে পায়ে হেঁটে বরফাবৃত পাহাড়ে চড়তে পারলেও চট করে গঙ্গাসাগরের নাম মুখে আনেন না বয়স্করা। তবে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। আর মেলার ভিড় শুরু হওয়ার আগেই এক বার যদি সশরীরে সাগরসঙ্গম থেকে ঘুরে আসা যায়, মন্দ হয় না।

বিচের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার মতো। এই দৃশ্য না দেখলে গঙ্গাসাগরে আসার কোনও মানেই হয় না।

বিচের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার মতো। এই দৃশ্য না দেখলে গঙ্গাসাগরে আসার কোনও মানেই হয় না। ছবি- সংগৃহীত

কথিত আছে, সূর্য বংশের রাজা সগর নিরানব্বই বার অশ্বমেধ যজ্ঞ সফল ভাবে আয়োজন করার পর শততম অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করলে দেবরাজ ইন্দ্র বিচলিত হয়ে পড়েন। কারণ একশত বার অশ্বমেধ যজ্ঞ সফল হলে তিনি ইন্দ্রের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। তাই দেবরাজ যজ্ঞ পণ্ড করার অভিপ্রায়ে যজ্ঞের ঘোড়াটি চুরি করে নিয়ে পাতালে মহর্ষি কপিল মুনির আশ্রমে লুকিয়ে রাখেন। এর পর সগর রাজার নির্দেশে তাঁর ষাট হাজার পুত্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া অন্বেষণ করতে করতে মহর্ষি কপিল মুনির আশ্রমে এসে উপস্থিত হয়ে ঘোড়াটিকে দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। তাদের আচরণে মহর্ষির তপস্যায় ব্যাঘাত ঘটে। অসময়ে তাঁর ধ্যান ভেঙে যাওয়ায় তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। তাঁর রোষানলে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্ম হয়ে যায়। এই ঘটনার বেশ কিছু বছর পর সূর্য বংশের পরবর্তী বংশধর ভগীরথ ব্রহ্মাকে তপস্যায় তুষ্ট করে গঙ্গাকে মর্ত্যে আহ্বান করেন। গঙ্গার পবিত্র জলে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্রের আত্মা মুক্তি লাভ করেন।

গঙ্গোত্রীর গোমুখ থেকে যার উৎপত্তি, সেই গঙ্গাই এখানে ভাগীরথী হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। পূর্ব-পশ্চিম দু’দিকে দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি। ঢেউ নেই বললেই চলে। জোয়ারের সময়ে এই বালুতট চলে যায় সমুদ্রের তলায়। আবার ভাটার সময়ে জেগে ওঠে। ভিজে বালুচরে প্রিয়জনের হাত ধরে ঢেউয়ের আলপনা দেখতে ভালই লাগবে। এই বিচের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার মতো। এই দৃশ্য না দেখলে গঙ্গাসাগরে আসার কোনও মানেই হয় না। পুণ্য অর্জনের আশায় স্নান করেন। চাইলে সেখানকার মন্দিরে গিয়ে পুজোও দিতে পারেন। পুজোর পর ভেজা জামাকাপড় বদলে ফেলার ব্যবস্থাও আছে।

কী কী দেখবেন?

আশপাশে বিশেষ কিছু দেখার নেই। তবুও মন চাইলে একটা টোটো নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন মনসামাতার মন্দির, নাগ মন্দির, লাইটহাউস, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম থেকে। শীতকালে গেলে কোনও গ্রামের বাড়িতে খেজুরের গুড় তৈরি হতে দেখতে পারেন। সে এক অন্য অভিজ্ঞতা হবে।

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ভিন্‌ রাজ্যের বহু পুণ্যার্থী এসে ভিড় করেন গঙ্গাসাগরে। তাই তাঁদের কাছে বাংলার প্রাচীন মন্দিরগুলির সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিতে এই বছরই দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, কালীঘাট এবং তারকেশ্বর মন্দিরের ছোট ছোট সংস্করণ করে রাখা হয়েছে।

কোথায় থাকবেন?

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মেলার আগে সুন্দর করে সাজানো হয় সমুদ্রতট। থাকার ব্যবস্থা বলতে সাগরে অল্প সংখ্যক বেসরকারি হোটেল রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে সরকারি লজ। তবে, এই সময়ে প্রচুর মানুষ সাগরে বেড়াতে যান। তাই সময় থাকতে অনলাইনে বুকিং করে রাখাই ভাল। এ ছাড়াও ন্যূনতম খরচে রাত্রিযাপন করতে চাইলে রয়েছে ভারত সেবাশ্রম সংঘের অতিথি নিবাসও।

কী ভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নামখানা লোকালে চেপে নামখানা স্টেশনে নামতে পারেন। আবার চাইলে কাকদ্বীপ স্টেশন হয়েও যেতে পারেন।

কাকদ্বীপ স্টেশন থেকে টোটো করে যেতে হবে ৮ নম্বর লটের দিকে। সময় লাগবে মিনিট পনেরোর মতো। এখান থেকেই ভেসেল পার করে পৌঁছে যেতে পারেন গঙ্গাসাগর। তবে ভেসেল পার করার ক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়। এখানে জোয়ার-ভাটার সময় দেখে ভেসেল চলাচল করে। অর্থাৎ, দিনে দু’বার পারাপার করা যায়। স্থানীয় মানুষদের জিজ্ঞাসা করলেও তারা ভেসেল পারাপারের সময় বলে দিতে পারেন। আবার ফোনে ‘গঙ্গাসাগর ভেসেল টাইম টেবিল’ অ্যাপ ডাউনলোড করে নিলেও পেয়ে যাবেন সময়সূচি।

নামখানা স্টেশনে নামলে সেখান থেকে টোটো বা ভ্যানে করে যেতে হবে লঞ্চঘাট। ঘাট পেরিয়ে পৌঁছতে হবে বেণুবন। সেখান থেকে আবার গাড়ি ধরে গঙ্গাসাগর।

এ ছাড়া সড়কপথে ধর্মতলা থেকে প্রতি দিনই সরকারি, বেসরকারি বাস ছাড়ে। একই ভাবে নামখানা বা কাকদ্বীপ এসে লঞ্চ পেরোতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

gangasagar Gangasagar Fair Gangasagar Mela Weekend Trip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy