কলকাতায় বসেই বিশ্বভ্রমণ। ছবি- সংগৃহীত
জন্ম-কর্ম-সংসার সবই কলকাতায়। ‘সিটি অফ জয়’ নিজের শহর কলকাতা বলতেই গর্বে ছাতি ফুলে ওঠে আট থেকে আশির। কিন্তু যখনই গর্বের কারণ জানতে চাওয়া হয়, অনেকেই ঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন না। এ কথা সত্যি যে, শহর কলকাতা নিয়ে গর্ব করার হাজার একটা কারণ রয়েছে। তবে তার মধ্যে রয়েছে নিউ টাউনে অবস্থিত একটি পার্কও। ভারতের সবচেয়ে বড় পার্ক হল এই ‘প্রকৃতি তীর্থ’। নাম শুনে নিশ্চয়ই ভাবছেন এমন পার্ক আবার কবে হল? সাধারণের মুখে মুখে অবশ্য এই জায়গাটি ‘ইকোপার্ক’ নামে বেশি পরিচিত।
ছুটি নেই বলে যাঁরা বেশি দূর ঘুরতে যেতে পারছেন না, অথচ কর্মব্যস্ত সপ্তাহের মাঝে একটি দিন নিরিবিলিতে কাটাতে চান, তাঁরা কলকাতার কাছাকাছি এক দিনের জন্য ঘুরে আসতেই পারেন ইকোপার্ক থেকে। ঘরের কাছেই এমন পৃথিবী দর্শনের সুযোগ এ দেশে আর একটিও নেই। হাতে যদি দু’টি দিন থাকে, তবে প্রিয়জনের সঙ্গে লেকের ধারে ‘একান্তে কটেজ’–এ বিলাসবহুল রাত্রিবাসও করতে পারেন।
‘হিডকো’-র তত্ত্বাবধানে ২০১২ সালে পার্কটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ২০১৩ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। লন্ডনের ‘মাদাম তুসো’ মিউডিয়ামের অনুকরণে ইকোপার্কের উল্টো দিকে তৈরি করা হয় ‘মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম’।
ইকোপার্কে মোট ৬টি গেট আছে। যে কোনও একটি দিয়ে ঢুকলেই হল। তবে ৪ নম্বর গেটের কাছেই আছে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের প্রতিরূপ। সেগুলি দেখেই ইকোপার্ক ভ্রমণ শুরু করতে পারেন। আবার প্রথম থেকেই হাঁটতে ইচ্ছে না করলে ব্যাটারি চালিত গাড়ি বা টয়ট্রনে পুরো ইকোপার্কটা এক ঝলক ঘুরে দেখে নেওয়া যায়। তার জন্য অবশ্য ২ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলেই ভাল।
পার্কের ভিতর কী কী দেখবেন?
পার্কটি প্রচুর জিনিস আছে। এক দিনে সবটা দেখা প্রায় অসম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে তবেই বেশ খানিকটা ঘুরতে পারবেন। প্রথমেই যদি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের প্রতিরূপ দেখতে হয়, তা হলেও আলাদা করে টিকিট কাটতে হবে। এখানে দেখতে পারেন চিনের প্রাচীর, রোমের বিখ্যাত মঞ্চ কলোসিয়াম, ব্রাজিলের রিও ডে জেনেরোর বিখ্যাত জিশুমূর্তি, জর্ডনের পেট্রা, মিশরের পিরামিড, ভারতের তাজমহল এবং চিলের রহস্যময় দ্বীপ ইস্টার আইল্যান্ডের বিভিন্ন ভাস্কর্য।
এ ছাড়াও রয়েছে শিশুদের জন্য একটি পার্ক। এখানে আলাদা করে টিকিট কাটতে লাগে না। ভিতরে ট্রি হাউসের মতো বাড়িও আছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে উপর থেকে দেখতে বেশ ভালই লাগে। এ ছাড়াও রয়েছে ডিয়ার পার্ক, পাখিবিতান, গল্ফ কোর্স, অ্যাম্ফিথিয়েটার, বাটারফ্লাই গার্ডেন, হেলিকোনিয়া গার্ডেন, স্কাল্পচার গার্ডেন, রেন ফরেস্ট, বিভিন্ন ফলমূলের বাগান, চা-বাগান, জোড় বাংলো মন্দির, ফ্লোটিং মিউজিক ফাউন্টেন, কাচের তৈরি গ্লাস হাউস, পার্কের মধ্যে কাফে একান্তে, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, ইকো রির্সট, জাপানি ফরেস্ট এবং রবি অরণ্য।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে ইকোপার্ক যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। গল্ফগ্রিন, যাদবপুর, হাওড়া, শিয়ালদহ থেকে প্রতি ঘণ্টায় এসি বাস ছাড়ে। সরকারি, বেসরকারি অনেক বাস আছে। ইকোপার্ক যাচ্ছে কিনা জিজ্ঞাসা করে উঠে পড়লেই হবে। এ ছাড়াও যাঁরা রাজারহাটের কাছাকাছি থাকেন, তাঁরা টোটো করেই পৌঁছতে পারেন ইকোপার্কের গেটে। এ ছাড়া এখন তো ‘ইস্ট-ওয়েস্ট’ মেট্রো হয়ে গিয়েছে। শিয়ালদহ থেকে পাতালরেলে চেপে শেষ স্টেশন সেক্টর ৫-এ নেমে, সেখান থেকে টোটো করেও যেতে পারেন। সময় কম লাগবে।
যে কেউ কি ঢুকতে পারেন পার্কে?
পার্কে ঢুকতে গেলে টিকিট কাটতে হবে। মাথাপিছু ৩০ টাকা। তবে ভিতরে প্রতিটি বিনোদনমূলক জিনিসের টিকিট আলাদা করে কাটতে হয়।
কটা থেকে কটা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্ক?
ইকোপার্ক খোলা থাকে প্রতি মঙ্গলবার থেকে রবিবার। সময় দুপুর আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। শুধু রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিন দুপুর ১২টা থেকেই খুলে যায় পার্ক।
শীতকালে দিন যেহেতু ছোট তাই সেই অনুযায়ী পার্কের সময়সূচিতেও বদল ঘটে। প্রতি মঙ্গলবার থেকে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এবং রবিবার বা কোনও সরকারি ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পার্কটি। তবে মনে রাখবেন, ইকো পার্ক প্রতি সোমবার বন্ধ থাকে। পার্কে বাইরে থেকে কোনও খাবার নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই সরকারি ফুড কোর্ট থেকে খাওয়াই ভাল। এখানে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy