Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Travel

সূর্যাস্ত, সমুদ্র ও স্মৃতিমেদুরতার গ্রিস

আথেন্সের ইতিহাস, সান্তোরিনির সমুদ্রসৈকত আর নিকনস শহরের অতীতকে সপরিবার ছুঁয়ে দেখলেন জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্যারাডাইস বিচ থেকে চোখজুড়ানো সবুজ-নীল জল।

প্যারাডাইস বিচ থেকে চোখজুড়ানো সবুজ-নীল জল।

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ১১:১০
Share: Save:

আমাদের বেড়ানোর দলে ছিল আট জন। আমার স্ত্রী শ্রেয়া ও ছেলে যশোজিৎ, আর এক বন্ধু ও তার স্ত্রী-সন্তান, এব‌ং আরও দু’জন বন্ধু। বেড়ানোর জন্য হুজুগ আমিই তুলি। আবার শুটিংয়ের চাপে ভেংচি আমিই কাটি। এ বারের গরমের ছুটিতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল প্যারিস-সুইৎজ়ারল্যান্ড। তবে এক বন্ধুই প্রথম তুলল গ্রিসের কথা। নিকনস, সান্তোরিনি হয়ে আথেন্স। এই আমাদের গন্তব্য।

রাত সাড়ে তিনটের ফ্লাইট ছিল কলকাতা থেকে। নিকনসে পৌঁছলাম প্রায় পরের দিন দুপুর নাগাদ। নিউ পোর্টের কাছে ছিল আমাদের হোটেল। এই শহরটা অল হোয়াইট। প্রতিটি বাড়ি, তার আসবাবপত্র, আমাদের হোটেল সব সাদা। ওখানকার স্থানীয় মানুষ মোটে ইংরেজি বলতে চান না। হোয়াইট সিটিতে আমরা প্রথম যে রেস্তরাঁয় খেতে ঢুকেছিলাম, সেটা দামি। গ্রিস আমার একটু ব্যয়বহুল মনে হল। আমার ছেলে পর্ক খেতে খুব ভালবাসে। সেটাই অর্ডার করলাম। খেয়েদেয়ে ওয়াটার ট্যাক্সি চড়ে পৌঁছে গেলাম ওল্ড পোর্ট। ওখানে শপিংয়ের এলাহি বন্দোবস্ত। আমার স্ত্রী ও বন্ধুর বৌ গোটা ট্রিপে কেনাকাটার একটা সুযোগও হাতছাড়া করেনি!

সান্তোরিনির শ্বেত সৌন্দর্য

দ্বিতীয় দিন থেকেই আমাদের বেড়ানো শুরু। ইয়টে চড়ে গিয়েছিলাম ডেলস ও রেনিয়া। ডেলস শহরটা আসলে একটা ধ্বংসস্তূপ। নিরাপত্তারক্ষী ও আর্কিয়োলজিক্যাল বিভাগের কর্মী ছাড়া আর কেউ থাকেন না। শহরের বুকে একটা মিউজ়িয়াম। সেই মিউজ়িয়াম বাঁচিয়ে রেখেছে শহরটাকে। এত বড় মিউজ়িয়ামে আমি আর ছেলে গাইড ছাড়া নিজে নিজেই ঘুরেছি। বাকিরা ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিল।

পরের দিন গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। সে দিন আমাদের লিস্টে ছিল বিচ দর্শন। জিপিএস কাজ করছিল না। অটোমেটেড গাড়ি চালানোতে সড়গড় ছিলাম না। এক বার ভুল দিকেও চলে গিয়েছিলাম। তার পরে এলাম এলিয়া বিচে। সাতরঙা একটা পতাকা পোঁতা সেখানে। ‘গে প্রাইড’-এর প্রতীক। সমকামীদের অবাধ প্রবেশ। আর এক দিকে ছিল প্যারাডাইস বিচ, যেখানে চলছিল ফুল অন পার্টি। আমার ছেলে ভাল সাঁতার জানে। হোটেলের সুইমিং পুল হোক বা সমুদ্র, ঝপাঝপ কস্টিউম পরে জলে নেমে পড়েছে। আন্ডারওয়াটার ভিডিয়োও তুলেছে নিজেই।

ওই দিনই গিয়েছিলাম লিটল ভেনিসে। এসেছিলাম লাঞ্চ করতে। এখানে একটি মনাস্ট্রিও আছে। সেটাও হোয়াইট। তবে ফেরার পথে সে আর এক কাণ্ড! ওয়ান ওয়ে রাস্তায় আমাদের গাড়ি আর স্টার্ট নেয় না। পিছনে ৬০-৭০টা গাড়ি দাঁড়িয়ে। তবে এটা কলকাতা বা মুম্বই নয়। এখানে কেউ হর্ন দেয় না। সেটা অভদ্রতা বলে গণ্য হয়। স্থানীয়দের সাহায্যে প্রায় এক ঘণ্টা পরে গাড়ি চলতে শুরু করল। তবে কেউ কোনও ঝামেলা করেনি।

গন্তব্য সান্তোরিনি। ফেরি করে পৌঁছলাম সেখানে। ওখান থেকে আমাদের হোটেল আরও এক ঘণ্টা। এই শহরে আবার সাদা আর নীল রঙের মিলন। ছবি তোলার জন্য আদর্শ স্পট। এখানে ওইয়া বলে একটা জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। যত দিন সান্তোরিনিতে ছিলাম, রোজ এখানে এসেছি। এখানেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয়ে গেল ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহের সঙ্গে। ওঁর স্ত্রী হেজেলও ছিলেন। সেলফিবন্দি হল সেই মুহূর্ত।

প্রাইভেট ইয়টে করে আমরা গিয়েছিলাম ভলক্যানিক আইল্যান্ড দেখতে। ইয়টের চালক অবশ্য ইংরেজি একটু হলেও বুঝতে পারেন। বললেন, ‘‘আপনারা খাওয়াদাওয়া সেরে নিন। এখন বড় ঢেউ আসবে না।’’ কপালে সুখ সইল না। ঢেউ এমন ধাক্কা মারল, খাবার, ওয়াইনের বোতল পড়ে গেল। তবে এই অভিজ্ঞতাটা ভোলার নয়। সান্তোরিনির আর একটা বিচেও গিয়েছিলাম। ওটাকে ব্ল্যাক বিচ বলে। সমুদ্রের পাড় পুরো কালো।

আথেন্সের থিয়েটার অফ ডায়োনিসাসে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে জয়জিৎ

আমাদের শেষ গন্তব্য আথেন্স। ইতিহাসের শহর। গ্রাফিটির শহর। ওয়াল আর্টকে ওরা কিন্তু অন্য মাত্রা দিয়েছে। গ্রাফিটির বিষয়বস্তুর মধ্যেও বৈচিত্র। কোথাও কালারব্লক, কোথাও জ্যামিতিক নকশা, কোথাও স্ট্রাকচারাল ডিজ়াইন। এখানে খাওয়ার দোকানে এক বাংলাদেশির সঙ্গেও আলাপ হল। কোথায় কী কী খেতে পারি, বলে দিলেন তিনি। এখানকার মেট্রোতেও চড়েছি। ডাবল ডেকার বাসে চড়েছি। অলিম্পিক স্টেডিয়াম চোখের সামনে দেখলাম। আর পার্থেননের সামনে দাঁড়িয়ে ছোটবেলায় পড়া ইতিহাস বইয়ের পাতাগুলোই ভেসে উঠছিল।

আমরা যে দিন কলকাতায় ফিরব বলে রওনা দিলাম, সে দিন সম্ভবত উইকএন্ড ছিল। ট্যাক্সি পেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আথেন্সে সূর্যের আলো সন্ধে আটটার পরেও জ্বলজ্বল করে। ওই রঙিন আলো গায়ে মেখেই ইতি টানলাম ইউরোপ ভ্রমণের তৃতীয় সফরে। ইটালি, রাশিয়া, গ্রিস... পরেরটা কোথায়?

খুঁটিনাটি

থিয়েটার, অলিম্পিক স্টেডিয়ামের জন্য গ্রিসের নামডাক সকলেই জানেন। তবে আমার নজর কেড়েছে এই শহরের গ্রাফিটি। রং ও ভাবনা, দুই-ই উৎকৃষ্ট মানের। কলকাতা শহরের দৈনন্দিন কোলাহলেই আমরা অভ্যস্ত। তাই গ্রিসের নো-হর্ন সংস্কৃতি আমাকে ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করেছে

অন্য বিষয়গুলি:

Travel Greece Athens theatre of dionysus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy