পুষ্কর মেলা। ছবি: তন্ময় চট্টোপাধ্যায়
উটের মেলা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় উটের মেলা হয় রাজস্থানের পুষ্করে। শুধু মাত্র এই মেলা দেখার জন্য প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। কার্তিক পূর্ণিমার আগে সাত দিন ধরে চলে এই মেলা। শেষ হয় পূর্ণিমার দিন। জগৎপিতা ব্রহ্মার মন্দিরে পুজো দিয়ে ঘরে ফেরে সকলে। কথিত আছে, কার্তিক পূর্ণিমায় হিন্দু দেবদেবীরা পুষ্কর হ্রদে নেমে আসেন। বিশ্বাস, এই পুণ্য সময়ে হ্রদের জলে স্নান করলে কঠিন অসুখ সেরে যায়, পাপ ধুয়ে যায়। এই মেলায় রাজস্থানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উট নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। বিস্তৃত মেলা প্রাঙ্গণ ভরে থাকে হাজার হাজার উটে। অনেকে উটকে সাজান সুন্দর করে। কেনাবেচা হয় গরু-ঘোড়াও। মেলার সময়ে রাজস্থান টুরিজ়ম ব্যবস্থা করে বিলাসবহুল তাঁবুর। পুষ্কর ছাড়াও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে হয় নাগৌর মেলা। জোধপুর থেকে বিকানীর যাওয়ার পথে নাগৌর। দশ লক্ষের উপরে পশু বিক্রেতার জমায়েত হয় এখানে! একই সময়ে ডিপার্টমেন্ট অব টুরিজ়ম আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট আয়োজন করে বিকানীর উট মেলার। এখানে উটের দৌড়, উটের নাচ, অ্যাক্রোব্যাটের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া উটের গায়ের লোম ছেঁটে করা ট্যাটু দেখলে অবাক হতে হয়। এই তিনটে মেলাতেই মনোরঞ্জনের জন্য থাকে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা, নাচ-গান।
শিব পার্বতীর উৎসব
জয়পুরে জুলাই-অগস্ট মাসে হয় তীজ উৎসব। শিব পার্বতীর মিলন উৎসব। এই সময় তীজ মাতার কাছে স্বামীর কল্যাণ প্রার্থনা করেন স্ত্রীরা। তীজ মাতাকে ডুলিতে সাজিয়ে, কোথাও কোথাও আবার গরুর গাড়িতে চেপে বিরাট মিছিল বার হয়। বিবাহিত মেয়েরা হাতে মেহেন্দি পরে, সালঙ্কারা হয়ে, সাবেক রাজস্থানি পোশাকে বা লাল শাড়ি পরে সেই উৎসবে অংশ নেন। পিঙ্ক সিটির রাস্তা ভরে ওঠে নানা রঙে। লোকসঙ্গীত ও নাচ করতে করতে শিল্পীরা হাঁটেন। রাস্তার দু’ধারে বসে রাজস্থানি খাবার ও নানা জিনিসের পশরা। জয়পুর ছাড়া বুন্দিতেও হয় তীজ উৎসব। তীজের মতোই জয়পুরে মার্চ-এপ্রিলে পালিত হয় গঙ্গৌর উৎসব। উপলক্ষ দেবী গৌরীর ঘরে ফেরা। এখানেও একই ভাবে গৌরীর মূর্তি নিয়ে মিছিল-উৎসব হয়। স্বামীর আশায় কলসের মধ্যে প্রদীপ নিয়ে হাঁটেন অবিবাহিত মেয়েরা। কোথাও কোথাও পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি থাকে সেই সমারোহে। নাচ-গানের পাশাপাশি রাতের আকাশ ঝলমলিয়ে ওঠে আতশবাজির আলোয়। এই সময়ে উদয়পুরে মেওয়ার উৎসবে মেয়েরা মেতে উঠেন বসন্তবরণে। এখানেও শিব-পার্বতীর বিগ্রহকে রাজস্থানি পোশাক পরিয়ে মিছিল করে পিচোলা লেকে আনা হয়। শহর মেতে ওঠে।
তীজ উৎসবে ডুলিতে চেপে বিগ্রহ
ঘুড়ি উৎসব
মকর সংকান্তিতে শুরু হয় জোধপুর ইন্টারন্যাশনাল ডেজ়ার্ট কাইট ফেস্টিভ্যাল। এই শহরের পোলো গ্রাউন্ডে তিন দিন ধরে চলে উৎসব। ভিড় করেন দেশি-বিদেশি তাবড় তাবড় কাইট ফ্লায়াররা। সেরা ফ্লায়ারকে পুরস্কৃত করা হয়। এই সময় জোধপুরের আকাশ ঢেকে থাকে নানা আকারের রঙিন ঘুড়িতে।
পর্যটকদের জন্য বিশেষ মেলা
স্থানীয় মেলা-উৎসবগুলোর পাশাপাশি রাজস্থান পর্যটন বিভাগ পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য আয়োজন করে বিভিন্ন উৎসব। ফেব্রুয়ারিতে জয়সলমেরে ডেজ়ার্ট ফেস্টিভ্যাল সে রকমই একটি। রাজস্থানি লোকসঙ্গীত, নাচ, খাবারদাবার, হস্তশিল্প, উটের দৌড়, লাঠি খেলা, সবচেয়ে বড় গোঁফের প্রতিযোগিতা, পাগড়ি বাঁধার প্রতিযোগিতা, এমনকি থাকে মিস্টার ডেজ়ার্ট প্রতিযোগিতাও। বুদ্ধ পূর্ণিমার সময়ে মাউন্ট আবুতে দু’দিনের জন্য হয় সামার ফেস্টিভ্যাল। রাজস্থানের সেরা লোক নাচ-গানের দল অনুষ্ঠান করে। রাতে কাওয়ালি গানও হয়। এই সময়ে নাক্কি লেকে বোট রেস হয়। রাতে আতশবাজির রোশনাইয়ে আকাশ ভরে ওঠে।
মনে রাখুন
যে কোনও মেলা বা উৎসবের সময় রাজস্থানে পর্যটকদের ভিড় হয় মাত্রাতিরিক্ত। তাই অনেক আগে থেকে হোটেল ও গাড়ি বুক করে রাখুন। ট্রেন বা বিমানবন্দর থেকে নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়িতে যাওয়া যায়। হস্তশিল্প থেকে জিনিস কেনার সময়ে অবশ্যই যাচাই করে নেবেন। ধর্মীয় আচার ক্যামেরাবন্দি করার আগে অনুমতি নেওয়া বাঞ্ছনীয়
আরও পড়ুন: কাশ্মীর: লাল জন্নত, গুজ্জর বিক্রম
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের অনাঘ্রাত পর্যটনক্ষেত্র বুংকুলুং-তুরুক-সেলফু
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy