কোন্নগরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত।
উৎসব মানেই ছুটি। ফুরফুরে মেজাজ। ছুটির দিনে অনেকের মন চায় বেড়িয়ে পড়তে, কোথাও ঘুরে আসতে। কিন্তু যাবেন কোথায়? রাতে থাকলে হবে না। তা হলে এমন কোন জায়গায় যাওয়া যায়, যেখানে সারা দিন বন্ধুবান্ধব মিলে ঘুরে আবার ফিরেও আসা যায়।
চারচাকাকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ুন বিভিন্ন জেলার আনাচকানাচে। এমন অনেক জায়গা থাকে, যেগুলির নাম শোনা হলেও, হয়তো ঘুরে আসা হয়নি। এ বার বেছে নিন তেমনই ঠিকানা। কলকাতার কাছে এবং দূরে রইল এমন ৩ গন্তব্যের হদিস।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি
হাওড়া থেকে ট্রেনে করে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁরা কোন্নগর স্টেশনটি দেখেছেন। হয়তো দূরপাল্লার যাত্রার সময় স্টেশনটি চোখেও পড়েছে। কিন্তু এখানেও যে বেড়ানোর কিছু থাকতে পারে অনেকেই জানেন না। এই কোন্নগরের নতুন পর্যটন গন্তব্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি।
‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘বুড়ো আংলা’, ‘রাজকাহিনী’ যিনি লিখেছেন সেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি সাজিয়ে-গুছিয়ে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। গঙ্গার পারে অনাদরে পড়েছিল ঠাকুর পরিবারের সদস্য শিল্পী-সাহিত্যিক অবন ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাগানবাড়ি। সেই ‘হেরিটেজ’ মর্যাদাপ্রাপ্ত সম্পত্তি বেহাত হতে বসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা পুনরুদ্ধার করে নবরূপ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
গঙ্গার পশ্চিম পারে কোন্নগরে ওই বাড়িতে এক সময়ে রবীন্দ্রনাথেরও আসা-যাওয়া ছিল। বাড়ির সামনে ঘাট। সেখান থেকে খেয়া নিয়ে চলে যাওয়া যেত ও পারের পানিহাটি। সে দিকে ছিল ঠাকুরদের আর একটি বাড়ি। কলকাতা থেকে মাত্র ঘণ্টা দেড়েকের দূরত্বে এই বাগানবাড়ির খোলামেলা পরিসর, গাছপালা, বাঁধানো গঙ্গার ঘাট দেখতে বেশ ভাল লাগবে।
এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন শ্রীঅরবিন্দ ভবন, গঙ্গার ধারে ‘ব্রাহ্মসমাজ ঘাট’। গঙ্গাতীরেই রয়েছে দ্বাদশ শিব মন্দির, যা এলাকায় পরিচিত ‘বারোমন্দিরের ঘাট’ হিসাবে।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাগানবাড়ি খোলা থাকে। কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে সড়ক পথে কোন্নগরের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটারের মতো। গাড়িতে আসতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। কলকাতা থেকে হাও়ড়া ব্রিজ অথবা বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে আসতে হবে। জিটি রোড এবং দিল্লি রোড, যে কোনও রাস্তা ধরেই আসা যায় এখানে। কোন্নগরের বাটা মোড়ের কাছেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি।
আর কী দেখবেন?
কোন্নগরের পাশাপাশি দেখে নিতে পারেন মাহেশের রথ এবং তার পাশেই জগন্নাথ মন্দির। তবে জগন্নাথের পুরনো মন্দিরটি রয়েছে শ্রীরামপুর মানিকতলায়। এ ছাড়া শ্রীরামপুর কলেজ, কেরি মিউজ়িয়াম ঘুরে নিতে পারেন।
সুতানের জঙ্গল
কলকাতায় কংক্রিটের জঙ্গলে হাঁপিয়ে উঠলে, কোনও এক ভোরে পাড়ি দিতে পারেন সুতানের জঙ্গলে। বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন সুতানের জঙ্গল। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েকটি ঘণ্টায় যে এমন সবুজের মধ্যে গিয়ে পড়া সম্ভব, তা না এলে বোধ হয় বিশ্বাস হবে না।
রানিবাঁধ ব্লকের সুতানের জঙ্গলে সে ভাবে পর্যটকদের ভিড় নেই। এখানে রয়েছে নজর মিনার। সেখানে উঠে চুপ করে বসে থাকলে চোখে পড়বে চার পাশে প্রকৃতির ঘন সবুজ রূপ। এই জঙ্গল ‘বারো মাইলের জঙ্গল’ বলেও পরিচিত। বর্ষাতেই এর রূপ সবচেয়ে বেশি খোলে। তবে যে হেতু বর্ষা শেষ হতে ইদানীং দেরি হচ্ছে, তাই পুজোর সময়েও গাছপালার ঝকঝকে সবুজ রূপ দেখতে পাওয়া যাবে।
সুতানের জঙ্গলের খুব কাছেই রয়েছে তালবেড়িয়া জলাধার। গাছপালা ঘেরা এই বাঁধের সৌন্দর্যও দেখার মতো। ইচ্ছা হলে নৌকা ভাড়া করে ভেসে পড়তে পারেন তালবেড়িয়ার বুকে। এখান থেকে রানিবাঁধের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে সুতানের জঙ্গলের দূরত্ব ২৩৩ কিলোমিটার। মোটামুটি ৫-৬ ঘণ্টাতেই পৌঁছনো যাবে। কলকাতা থেকে কোলাঘাট হয়ে, মেদিনীপুর, পীরাকাটা, গোয়ালতোড়, সারেঙ্গা, রানিবাঁধ হয়ে পৌঁছনো যায় সুতানের জঙ্গলে।
আর কী দেখবেন?
সুতানের জঙ্গল ছাড়া ঝিলিমিলি, বেলপাহাড়িও ঘুরে নিতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে একটি কিংবা দু’টি রাত থাকলে বেশি ভাল করে ঘোরা সম্ভব হবে।
নীল নির্জন
বীরভূম বললেই মাথায় আসে শান্তিনিকেতন কিংবা তারাপীঠ ভ্রমণের কথা। কিন্তু এই জেলারই এক অংশে লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গিয়েছে শান্ত জলাধারটি। বক্রেশ্বর নদীর উপরে বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে নীল নির্জন জলাধার। এখান থেকেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জল সরবরাহ হয়। চাইলে নৌকায় ভেসে পড়তে পারেন বিশাল জলাধারের বুকে। এর স্বচ্ছ নীল জলের সৌন্দর্য শহুরে ক্লান্তি নিমেষে দূর করে দিতে পারে। শীতের মরসুমে এখানে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনাও লক্ষ করা যায়।
নীল নির্জনে ঘোরার জন্য শীতই আদর্শ সময়। তবে শরতের মেঘমুক্ত আকাশেও এই জলাধারের সৌন্দর্য উপভোগ্য হয়ে উঠবে। এখান থেকে দেখে নিতে পারেন বক্রেশ্বর মন্দির।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে নীল নির্জন জলাধারের দূরত্ব ২০৬ কিলোমিটার। মোটমুটি ৫ ঘণ্টাতেই সেখানে পৌঁছনো যাবে। কলকাতা থেকে বর্ধমান, পানাগড়, ইলামবাজার, দুবরাজপুর হয়ে নীল নির্জন।
আর কী দেখবেন?
এখান থেকে বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণ ও দুবরাজপুরের মামা-ভাগ্নে পাহাড় ঘুরে নেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy