মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন বিশ্বকাপে মজে। মিনিয়াপোলিস যাওয়ার পথে এয়ারফোর্স ওয়ানে। ছবি সৌজন্য টুইটার
জার্মানি-১ (মুলার)
যুক্তরাষ্ট্র-০
বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগের খেলা বৃহস্পতিবার রাতেই শেষ হয়ে গেল। শেষ দিন জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচটা দেখার পর একটা প্রশ্ন মনে জাগতে শুরু করেছে— এ বার সোনার বুট শেষ পর্যন্ত কার দখলে যাবে— মেসি? নেইমার? না, গতবার এই সম্মান নিয়ে বার্লিনে পা রাখা টমাস মুলার?
প্রশ্নটা জাগছে এই কারণেই যে, বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত চার গোল করে ফেলেছে এই তিন জনই। প্রথমে নেইমার। তার পর মেসি। চব্বিশ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ওদের ধরে ফেলল টমাস মুলার।
মুলারকে চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় যে রকম দেখেছিলাম এ বারও দেখছি সে রকমই রয়েছে। পেনিট্রেটিভ জোনে ও যেন গোলের গন্ধ পায়। আর সেটা আরও ভাল ভাবে বোঝা যায় ওর বল ফলো করা দেখলে। চুপি চুপি ঠিক পৌঁছে যাবে সঠিক জায়গায়। মার্কিনদের বিরুদ্ধে ঠিক সেটাই দেখলাম। গোলকিপার হাওয়ার্ডের হাত থেকে সেকেন্ড বলটা যেই বেরিয়ে এল, তা ধরার জন্য দেখলাম একদম সঠিক জায়গায় দাঁড়িয়ে মুলার। যেন আগে থেকেই জানত, বলটা ওই জায়গাতেই আসছে। আর সেখান থেকে ডান পায়ের আউটস্টেপের সোয়ার্ভে বলটা গোলে রাখতেও ভুল করেনি। গোলটা করার সময় সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ঠিক বুঝে গিয়েছিল মার্কিন কিপার ঠিক জায়গায় নেই। বলটা সেকেন্ড পোস্ট ঘেঁষে রাখতে পারলেই গোল হবে। সেই অনুমানেও ভুলচুক করেনি। এ দিনের গোলের পর দুটো বিশ্বকাপ মিলিয়ে ন’গোল হয়ে গেল মুলারের। ছাড়িয়ে গেল মারাদোনা, রিভাল্ডো এবং স্বদেশীয় রুডি ফোলারকেও (৮টা করে গোল)।
গৃহশান্তি। আগাসি খুশি, স্টেফিও। বৃহস্পতিবার। ছবি সৌজন্য টুইটার
এর আগে ঘানার বিরুদ্ধে জার্মানির ম্যাচটা দেখার পর লিখেছিলাম সোয়াইনস্টাইগার শুরু থেকে নয় কেন? এ দিন দেখলাম খেদিরাকে বসিয়ে সোয়াইনস্টাইগার দিয়ে কোচ জোয়াকিম লো শুরু করালেন ৪-১-৪-১ ছকে। চার ব্যাকের আগে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন ফিলিপ লাম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণে এলে জার্মানরা হয়ে যাচ্ছিল ৪-২-৩-১।
বৃষ্টি ভেজা মাঠে তাও শুরু থেকেই জার্মানি খেলাটা ধরে নিতে পারল কিন্তু সেই সোয়াইনস্টাইগারের জন্যই। পাশে ওর বায়ার্ন সতীর্থ লাম, টনি ক্রুজ, মুলারদের পাওয়ায় ওকে যেন আরও চনমনে লাগছিল। ম্যাচের শুরু থেকেই সব ঠিকানা লেখা পাশ বাড়াচ্ছিল মুলার, পোডলস্কিদের উদ্দেশে। বোয়াতেংও ওভারল্যাপে গিয়ে চমৎকার বল রাখছিল বক্সে।
হেরেও শেষ আটে যুক্তরাষ্ট্র।
ভাগ্য খারাপ তাই প্রথমার্ধে গোল পায়নি জার্মানরা। এর আরও একটা বড় কারণ হল যুক্তরাষ্ট্র কোচ ছিলেন আর এক জার্মান-- যুরগেন ক্লিন্সম্যান। যিনি এই দলটাকে প্রায় হাতের তালুর মতো চেনেন। আট বছর আগে বিশ্বকাপে জার্মানিরই কোচ ছিলেন। তাই ৪-৪-১ ছকে ক্লিন্সম্যানও ওঁর ডিফেন্সিভ থার্ডে জার্মান আক্রমণের সময় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিলেন নেই-নেই করে প্রায় দশ জনকেই। তাই গোলটা হচ্ছিল না। না হলে কিন্তু জোয়াকিম লো-র দলই প্রথমার্ধে সারাক্ষণ দাপিয়ে বেড়াল মার্কিন রক্ষণে। কিন্তু জানতাম, মার্কিনদের এই ডিফেন্সিভ ছক বেশিক্ষণ কাজ করবে না এবং শেষ পর্যন্ত করেওনি।
তবে ফুটবলে মোদ্দা কথাটা হল গোল। দ্বিতীয়ার্ধে তাই পোডলস্কিকে তুলে লো নামিয়ে দিলেন মিরোস্লাভ ক্লোজেকে। আর ক্লোজে বরাবরই মিডল করিডর দিয়ে খেলতে পছন্দ করে। ফলে দুই উইংয়ে মুলার আর ওজিল চলে যাওয়ায় খেলাটা আরও ছড়িয়ে পড়ল। বাড়ল আক্রমণের ঝাঁঝ। যার ফলশ্রুতিই মুলারের গোল।
সকলের মতো আমিও বসেছিলাম দুই জার্মান কোচের মগজের লড়াই দেখতে। সেটা তো দেখলামই। সঙ্গে উপরি পাওনা রভশান ইরমাতভের রেফারিং। উজবেক এই রেফারি আমাদের যুবভারতীতে খেলিয়ে গিয়েছেন কলকাতা লিগের ডার্বি ম্যাচ। মাত্র আড়াই বছর আগে। বিশ্বকাপেও বেশ মেজাজেই খেলালেন তিনি।
ম্যাচের সেরা
টমাস মুলার
ফের জ্বলে উঠলেন টমাস মুলার। গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে তাঁর গোলেই যুক্তরাষ্ট্রকে হারাল জার্মানি। একই সঙ্গে চার গোল করে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের দৌড়ে লিওনেল মেসি, নেইমারদের সঙ্গে উঠে এলেন ২৪ বছরের তারকা। প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের তারকা প্লেয়ার। দ্বিতীয় ম্যাচে ঘানার বিরুদ্ধে গোল পাননি। তবে বৃহস্পতিবার রেকিফে ফের স্বমহিমায় দেখা গেল তাঁকে। এই নিয়ে জার্মানির গত ২৩টি বিশ্বকাপ গোলের মধ্যে ১৩টির ক্ষেত্রেই মুলারের নাম জড়িয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy