জার্মানি নিয়ে আমার প্রচুর স্মৃতি। অনেক বার আমি ওদের খুব কাছাকাছি থেকে বেঁচেছি। বেকেনবাউয়ারের জার্মান কোচ হিসেবে অভিষেক আমাদের বিরুদ্ধেই। এবং সেই ম্য্যাচের পরিস্থিতিটা এমন ছিল, আর্জেন্তিনা হেরে গেলে কর্মকর্তারা আমাকে কোচের দায়িত্ব থেকে ছুড়ে ফেলবেন। বেশ মনে আছে, চুরাশিতে সেটা ছিল একটা ফ্রেন্ডলি সফর। ছিয়াশির মেক্সিকো বিশ্বকাপ মাথায় রেখে। বরাবরই আর্জেন্তিনীয় ফুটবলারদের অনেক জার্মান বন্ধুবান্ধব আছে। দু’তরফই একে অপরকে খুব ভাল চেনে।
সে জন্য আজ মারাকানা ফাইনালটাও যথেষ্ট কঠিন হবে। সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ওদের ঘরের মাঠে অমন চুরমার করার পর জার্মানরা ফাইনালেও নিশ্চয়ই অলআউট যাবে। কিন্তু লিও মেসির টিমকে আমি বলব, ব্রাজিলকে ১-৭ হারতে দেখে জার্মানিকে ভয় পেও না।
সাবেয়ার দল যদি নিজেদের খেলাটা খেলতে পারে, আর মেসির যা করা উচিত সেটা যদি ও করে দেখাতে পারে তা হলে জার্মানিই বরং নিশ্চিত ঝামেলায় পড়বে। এমনকী আমাদেরই তখন ওরা ভয় পাবে।
তবে ম্যাচের রেজাল্ট যা-ই হোক না কেন, দয়া করে যাবতীয় দায়-দায়িত্ব লিও মেসির উপর চাপাবেন না। বিশ্বকাপ এখনও না জিতলেও মেসি প্রমাণ করে দিয়েছে, ও-ই বিশ্বের সেরা ফুটবলার। এর পর ব্রাজিলে ও যদি বিশ্বকাপটাও জেতে, তা হলে তো দুর্দান্ত ব্যাপার! দেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেখতে আর্জেন্তিনীয়রা আঠাশ বছর অপেক্ষা করছে। সে কারণে মেসির জন্য আমার পরামর্শ ভাই, নিজের মাথায় বাড়তি চাপ নিও না। তুমি এখনই বিশ্বসেরা ফুটবলার। কাপ ফাইনালে তাই ঠান্ডা মাথায় স্রেফ নিজের খেলাটা খেলো।
আমি সর্বদা জার্মান ফুটবলারদের শারীরিক শক্তিকে মর্যাদা দিই। জার্মানদের পাওয়ারপ্লে, যার জন্য ওরা ফুটবল-বিশ্বে বিখ্যাত, তাকে শ্রদ্ধা করি। আগেও বলেছি, জার্মানরা ডেড বল সিচুয়েশনে অর্থাৎ সেট পিসে ভয়ঙ্কর। ফ্রিকিক মারার সময় ওরা ‘ইউ..ইউ...ইউ....’ করতে করতে পরের পর ফলস্ দিয়ে একজন ঠিক দুর্দান্ত শট নিয়ে গোল করে দেয়! সত্যিই, জার্মানদের শারীরিক শক্তি আর উচ্চতার জন্য সেট পিস সিচুয়েশনে ওরা কী সাংঘাতিকই না!
আমি শুনেছি, রবিবার বিশ্বকাপ ফাইনালের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, সাবেয়া নাকি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে! কিন্তু কোনও কোচের জন্যই শেষ ম্যাচ বলে কিছু হয় না। সাবেয়া সত্যিই দারুণ করেছে। প্রত্যেকে ওর কাজের প্রশংসা করছে। জার্মানির বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ ফাইনালের আর মাত্র কিছু ঘণ্টা বাকি। এবং আলেজান্দ্রো সাবেয়ার সামনে সুযোগ কাপ হাতে ধরা একজন দুর্ধর্ষ ট্যাকটিশিয়ান রূপে ইতিহাসে ঢুকে পড়ার। তবে দলকে কাপ ফাইনালে তুলে সাবেয়া ইতিমধ্যেই আর্জেন্তাইন ফুটবলের বিরাট ইতিহাসে ওর দু’টো পা রেখেছে।
সেমিফাইনালে গোলকিপার সের্জিও রোমেরোর ঠান্ডা মাথা আর দুর্দান্ত অনুমানক্ষমতার সর্বত্র প্রচুর প্রশংসা হচ্ছে। কিন্তু ফাইনালটা ওর জন্য আরও কঠিন হতে চলেছে বলে মনে করি। অন্য দিকে আবার শুনছি, অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া একেবারে ফিট, পুরোপুরি ম্যাচ কন্ডিশনে চলে এসেছে এবং ফাইনালে শুরু থেকে খেলতে চাইছে। তবে এক্ষেত্রে সাবেয়াকে আমার টিপস খুব ভেবেটেবে ঝুঁকিটা নিও। কারণ, দি মারিয়া যদি মাঠে নেমে ফের অসুবিধে বোধ করে এবং দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে বসে যায়, তা হলে ওকে খেলানো বেকার!
আমাদের ডিফেন্সকে জমাট দেখালেও মাঝমাঠে আরও আঁটোসাটো হয়ে ওঠা দরকার। মাঝমাঠে জার্মানদের কিছুতেই জায়গা দেওয়া চলবে না। জার্মানদের যদি মাঝমাঠে থামিয়ে দেওয়া যায় আর সাপ্লাই লাইন কেটে দেওয়া যায়, ওরা নিশ্চিত বিরাট সমস্যায় পড়বে। জার্মানি দল মোটেই অপরাজেয় নয়। লড়াইটা অবশ্যই কঠিন কিন্তু সেটার মুখোমুখি হওয়ার মতো মশলা আর্জেন্তিনা দলেও আছে। ভুলে গেলে চলবে না, দারুণ-দারুণ সব পারফরম্যান্স করেও জার্মানি কিন্তু নব্বইয়ের পর একবারও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy