বন্ধুত্বটা তাঁদের এক দিনের নয়, বহু দিনের।
চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের সময় মাইকেল বালাককে খোলাখুলি একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন ফিলিপ লাম। বলেছিলেন, ক্যাপ্টেন তুমিই থাকো। সে সময় চোট-আঘাতে প্রচণ্ড ভাবে ভুগছিলেন বালাক। সেই বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত খেলতে পারেননি বালাক, দেশের হয়েও আর কোনও দিন তাঁকে নামতে দেখা যায়নি।
মাইকেল বালাকের ঘটনাগুলো এখনও স্পষ্ট মনে আছে। মনে আছে লামের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের দিনগুলো। কিন্তু ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানির পারফরম্যান্স দেখার পর জার্মান ক্যাপ্টেনের সঙ্গে বন্ধুত্বকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন, খুব কর্কশ ভাবে বলে দিচ্ছেন, এত জঘন্য ভাবে কখনও তিনি জার্মানিকে খেলতে দেখেননি। আলজিরিয়ার বিরুদ্ধে সোমবার রাতে জার্মানি যে ফুটবলটা খেলল, তার একটা নামকরণও করে দিয়েছেন প্রাক্তন জার্মান ক্যাপ্টেনহার্ট অ্যাটাক ফুটবল!
তবে এই প্রথম নয়। লামের সঙ্গে খটাখটি বেশ কয়েক দিন ধরেই চলছে বালাকের। লামের রাইটব্যাক পজিশন ছেড়ে মিডফিল্ডে চলে যাওয়া মোটেও তাঁর পছন্দ নয়। “লামকে বুঝতে হবে, ওর বয়স হয়েছে। ও উঠে গেলে নেমে আসতে যে সময়টা লাগছে, তাতে বিপক্ষ স্ট্রাইকার বেরিয়ে যাচ্ছে। আর আলজিরিয়া ম্যাচে প্রথমার্ধে ওরা যা খেলেছে, তাতে একটাই কথা বলব। আমি শক্ড! দ্বিতীয়ার্ধে উন্নতি ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু সব মিলিয়ে পারফরম্যান্স মোটেও খুশি হওয়ার মতো নয়,” শেষ ষোলো ম্যাচের পর বলেছেন প্রাক্তন জার্মান তারকা। যিনি এখন টিভি বিশেষজ্ঞও।
মঙ্গলবার বিভিন্ন জার্মান কাগজও ফেটে পড়েছে জোয়াকিম লোর টিমের হতশ্রী পারফরম্যান্সে। কোথাও স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, জার্মানি মোটেও আর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার নয়। কোথাও আবার ম্যানুয়েল ন্যয়ারের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, গোলকিপার, লেফ্টবব্যাক, রাইটব্যাক, মিডফিল্ডার, সবই এখন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে দিদিয়ের দেশঁর ফ্রান্সের বিরুদ্ধেও বেশ পিছিয়ে রাখা হচ্ছে জার্মানিকে। যা দেখে অসহ্য মনে হচ্ছে লোর টিমের ডিফেন্ডার পের মার্টেস্যাকারের।
আলজিরিয়া ম্যাচ জেতার পর সাংবাদিকদের খোঁচা দেওয়া প্রশ্নের জবাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন মার্টেস্যাকার। “কী চাইছেন আপনারা? সুন্দর ফুটবল খেলে ছিটকে গেলে কি আপনাদের বেশি ভাল লাগবে? আর আপনাদের কথাবার্তা শুনে বোঝা যায় না কী চান। কী মনে হয়, প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে যারা খেলে তারা সব মিকি মাউস টিম? আসলটা হল কোয়ার্টার ফাইনাল। যেটায় আমরা উঠেছি।” জোয়াকিম লো-কে এতটা আক্রমণাত্মক দেখায়নি। জার্মান কোচ স্বীকার করে নিয়েছেন, পাসিংয়ে প্রচুর গণ্ডগোল হয়েছিল। জার্মানি বিপক্ষকে আমন্ত্রণ করে ডেকে এনেছে নিজেদের বক্সে। কোচ বলছেন, “ম্যানুয়েল অসাধারণ খেলল। প্রচুর ভুলভ্রান্তি করলেও এই জয়টা আমাদের টিমের জাত বুঝিয়ে দিয়েছে। আমি এখন শুধু একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে চাই!”
কিন্তু ‘নিঃশ্বাস ফেলতে চাই’ বললেই তো আর ফেলা যায় না। একে টিমের অপ্রত্যাশিত ফুটবল-ছবি বেরিয়ে পড়া। তার উপর বালাকের মতো হেভিওয়েট প্রাক্তনের তীক্ষ্ন সমালোচনার তির। এখানেও শেষ হলে কথা ছিল। জার্মান শিবিরে তো আবার ফ্লু নামক মহাশত্রুরও আমদানি হয়েছে। ব্রাজিলের আবহাওয়া, রোদ-বৃষ্টি, আজ ঠান্ডা-কাল গরম এ সবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না কোনও কোনও জার্মান। ম্যাট হুমেলস ফ্লুয়ে কাবু হয়ে নামতে পারেননি আলজিরিয়া ম্যাচে। টমাস মুলারের মধ্যেও ফ্লুয়ের উপসর্গ দেখা গিয়েছে। অসুস্থ শরীর নিয়েই সোমবার তিনি খেলেছেন।
এত কিছুর পরেও জার্মান চাণক্য বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পারেন, জার্মানি এখনও বেঁচে আছে, কাপটাও নেবে। ফ্রান্সকে হারিয়ে লো এটাও বোঝাতে পারেন, বিশ্বকাপে পড়ে থাকা ইউরোপীয় শক্তি বলতে তাঁর টিমকেই বোঝায়। কিন্তু মাঠের বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে তিনি জিতবেন কী ভাবে? ফ্লু-র অ্যান্টিডোট তো ফুটবল-মস্তিষ্ক থেকে বেরোবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy