সে দিনের যোগিন্দর
ওয়াঘা সীমান্ত থেকে কতই বা দূরে থাকেন? বড় জোর আড়াইশো মাইল। সেই আড়াইশো মাইল পেরিয়ে ও পারে গেলেই তিনি খলনায়ক। সাত বছর আগের সেই ফাইনালের শেষ ওভারে মিসবা উল হককে তিনি ড্রেসিংরুমে ফেরার রাস্তা না দেখালে ভারত অধিনায়কের হাতে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উঠতই না। রবিবার ধোনিদের বিশ্বজয়ের লড়াই দেখতে টিভির সামনে বসে অধীর আগ্রহে শেষ ওভারটার দিকে তাকিয়ে থাকবেন সেই যোগিন্দর শর্মা।
“যদি আমার মতো এ বারও ভারতের কোনও বোলার শেষ ওভারে ম্যাচ জেতায়, তা হলে সারা দুনিয়ায় আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না।” দ্বিতীয় টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের উদ্দেশ্যে ভারত মাঠে নামার প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন যোগিন্দর। ফিরে যাচ্ছিলেন সাত বছর আগে ২৪ সেপ্টেম্বরের রাতে।
যখন ৮ বলে ১৩ রান চাই মিসবাদের, তখন যোগিন্দরের হাতেই বল তুলে দিয়েছিলেন ধোনি। ভারত ফের সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্ব খেতাবের সামনে। তাই বারবার তাঁর মনে পড়ছে সেই রাতটার কথা। যোগি বলছিলেন, “এত বছর পরও চোখ বুজলে সিনেমার মতো ভাসে ঘটনাটা। ডায়লগ-সহ মনে আছে। তিন-তিনটে ছয় হাঁকিয়ে মিসবার তখন রণমূর্তি। হাত নিশপিশ করছিল ওকে আউট করার জন্য। আবার ভাজ্জিরও তখন এক ওভার বাকি। বুঝতে পারছিলাম না, আমিই বলটা পাব কি না। ধোনি যখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘যোগি, তু যা’, তখন ইচ্ছে করছিল মিসবাকে প্রথম বলটাতেই খুন করে ফেলি। সত্যি বলতে, উত্তেজনায় কাঁপছিলাম।”
অত্যাধিক উত্তেজনার বশে প্রথম বলটা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করে ফেলেন। যোগিন্দর বলে চললেন, “ক্যাপ্টেন চেঁচিয়ে বলল, ‘যোগি, কিপ কুল, কিপ কুল’। ও দিক থেকে ভাজ্জিও উৎসাহ জোগাচ্ছিল।” সেই ঘটনার কথা বলার সময়ও রোহটাকের তারকা ক্রিকেটারের গলায় উত্তেজনা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। ফের বললেন, “পরের বলটা একেবারে ঠিকঠাক। ধোনি চেঁচাল, ‘কাম অন যোগি, ওয়েল বোল্ড’। তৃতীয় বলটাও একই রকম করেছিলাম মিসবাকে টোপ দেওয়ার জন্য। কিন্তু এমন জোরে চালাল যে, বল সোজা গ্যালারিতে। ধোনি এগিয়ে এসে বলল, ‘কোই বাত নেহি, তু অ্যায়সা হি বল ডাল। উও গলতি করেগাহি’ (কোনও ব্যাপার নয়, তুই এমনই বল কর। ও ভুল করবেই)।” ক্যাপ্টেন এমনভাবে উৎসাহ জোগানোয় চোয়াল আরও শক্ত হয়ে যায় যোগির। “রান আপে যেতে যেতে ঈশ্বরকে বললাম, রব্বা, শেষ উইকেটটা পাইয়ে দাও, জীবনে আর কখনও কিছু চাইব না,” বললেন তিনি, “ভাবলাম এ বার একটু অন্য রকম বল করা দরকার। এ বার মিসবা ক্যাচ তুলবেই। ভয়ও করছিল, যদি আবার ছয় মারে। তখন মনে পড়ল মাহি-ভাইয়ের কথাটা, ‘...উও গলতি করেগাহি’। দিলাম একটা ফুলটস। তার পরেরটুকু তো আজ ইতিহাস। সারা দুনিয়া দেখেছে।”
রবিবার যদি সে রকম পরিস্থিতি দেখা যায়? শেষ ওভারে তাহলে কোন ভারতীয় বোলারের হাতে বল দেখতে চান? প্রথমে হেসে বললেন, “কেন, যোগিন্দর শর্মা!” তার পর বেশ চমকে দিয়ে বললেন, “স্পিনাররাই তো এই টুর্নামেন্টে ভাল বল করছে। শেষ ওভারে যদি বিপক্ষের দশের কম রান দরকার হয়, তা হলে বোধহয় কোনও স্পিনারের হাতেই বল তুলে দেবে মাহি ভাই।” বাংলাদেশের উইকেট স্পিনারদের বেশি সাহায্য করছে বলেই এই ধারণা তাঁর। বললেন, “১৫-র বেশি টার্গেট থাকলে হয়তো ভুবনেশ্বর বা মোহিত। শামির চোট আছে কি না জানি না। ও ডেথ ওভারে তো বেশ ভাল। আর মাহি ভাই তো এই ব্যাপারে ওস্তাদ। এই ব্যাপারগুলো পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক হয়। কেমন উইকেট, পরিবেশ কেমন, বিপক্ষের কত রান দরকার, কে ব্যাট করছে সব দিক বিচার করেই সিদ্ধান্ত হয়।”
সেই সাফল্যের পর প্রথমে গোড়ালির অস্ত্রোপচার ও পরে সড়ক দুর্ঘটনায় মাঠের বাইরেই তাঁকে কাটাতে হয় প্রায় দু’বছর। সাত বছর আগের সেই ফাইনালের পর থেকে আর ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা হয়নি তাঁর। “এখন অবশ্য আমি ফিট। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে ফের ভারতীয় দলে ডাক পাই। এখন সেই আশাতেই আছি।” মুস্তাক আলি ট্রফির আঞ্চলিক পর্বে ছ’টি উইকেটও পেয়েছেন। এ বার খেলবেন মূলপর্বে। “এ বার নিশ্চয়ই আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবেন না নির্বাচকরা,” আশা যোগির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy