যন্ত্রণার দিন। অধিনায়কের, বাংলারও। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ঘরের মাঠে ফলো অন! “এ আর নতুন কী? আগের ম্যাচেও হয়েছে, আবারও নয় হবে। এ বার এ সব দেখা অভ্যাস করতে হবে আমাদের,” ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন বিরক্ত এক প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার।
আর এক প্রাক্তন, যিনি এখন বাংলার কোচ, তাঁর তো কথাই বন্ধ। রঞ্জি ট্রফিতে পরপর দু’টি হোম ম্যাচে ফলোঅন হওয়ার ঘটনা ইদানীং ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না অশোক মলহোত্রও। গত ম্যাচের মতো ফের ফলো অনের মুখে বাংলা। মঙ্গলবার ১৩৫ না তুলতে পারলে হয়তো ফের প্যাড-আপ করে নামতে হবে লক্ষ্মী-মনোজদের। তার পর...। দলের এই অবস্থায় কীই বা বলবেন?
বাংলার ক্রিকেটে নাকি উন্নয়নের জোয়ার। এক দিকে নানা নতুন নিয়ম, ফরম্যাট। অন্য দিকে ভিশন। মিশনও অবশ্য একটা রয়েছে। কিন্তু সোমবার ইডেন থেকে সারা দেশে বাংলার ক্রিকেট সম্পর্কে যে বার্তা ছড়িয়ে পড়ল, তাতে সেই মিশন সম্পর্কে ভাবতে বসলে বঙ্গ ক্রিকেটের ধারক-বাহক-প্রশাসকদের সেই প্রবাদ মনে পড়াই স্বাভাবিক‘দিল্লি আভি দূর হ্যায়’।
দিল্লি পৌঁছবে কী! মুম্বইয়েই যে ভাবে শুয়ে পড়েছে বাংলা, যে ভাবে বাঘের খাঁচায় ঢুকে ছটফট করছেন লক্ষ্মীরা, তাতে দিল্লির স্বপ্ন আপাতত সিন্দুকে তুলে রাখাই ভাল। শার্দূল ঠাকুর, বাংলা অভিধানে যার নামের অর্থ বাঘ, সেই পেসারের থাবা কেড়ে নিল বাংলা ব্যাটিংয়ের অর্ধেক প্রাণ। প্রথম পাঁচের চার ব্যাটসম্যানই ২৩ বছরের এই ডেল স্টেইন-ভক্তের শিকার। পরে তিনি ছিটকে দিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্লকেও।
বাকিদের রান যখন ৭, ৫, ০, ১, ১১-র মতো, তখন একা মনোজ তিওয়ারি উইকেটে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছিলেন মাত্র চার ম্যাচের প্রথম শ্রেণির অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে নামা অভিমন্যূ ঈশ্বরনকে (৩১) নিয়ে। ছন্দেও চলে এসেছিলেন। দু’দিন আগেই মনোজ ইডেনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “ওরা (মুম্বই) ভাবে ওরাই শুধু ক্রিকেটটা খেলতে জানে। আমরা পারি না। সেটা ভুল প্রমাণ করতেই বারবার ওদের বিরুদ্ধে লড়ে যাই।”
এ দিনও মনোজ তেমন কড়া মেজাজেই ছিলেন। প্রথম শ্রেণির ১৭ নম্বর হাফ সেঞ্চুরিটি করতে দশবার বাউন্ডারি পার করিয়ে দেন শার্দূলদের। কিন্তু তিনি যে একা। বাকিরা সিনেমার অতিথি শিল্পীদের মতো এলেন আর গেলেন। তাই একা তিওয়ারির তেজে মুম্বইয়ের গায়ে ছিটেফোঁটা আঁচও লাগল না। মুম্বইকরদের শিক্ষা দেওয়া তো দূরের কথা নিজেদেরই উল্টে সূর্য কুমার যাদবদের ক্লাসরুমে মাথা নিচু করে বসতে হল।
মুম্বইকরদের বিরুদ্ধে একটা রাগ তো ছিলই। তবে এ দিন মনোজ অন্য কারণেও ড্রেসিংরুমে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ৬৩-র ইনিংস খেলে শার্দূলের বুকের কাছে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হওয়ার পর তাঁর অভিযোগ, “সাইট স্ক্রিনের আশপাশ দিয়ে প্রায়ই লোক আনাগোনা করছিল। এতে ব্যাটসম্যানের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়। মাঠে থাকা লোকজনদের সিএবি-র ডেকে শিক্ষিত করা উচিত তাদের কখন ও কোথায় যেতে হবে আর কোথায় নয়।” ক্যাপ্টেনেরও একই অভিযোগ। সাংবাদিকরা বিষয়টি সিএবি কর্তাদের গোচরে আনার আগে তাঁরা কিছু জানতেনই না! জানার পর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হল। সে নয় হল, কিন্তু তাতে ফলো অন বাঁচবে?
সকালে ইডেনে যে পরিবেশ থাকছে এবং বাইশ গজের যা অবস্থা, তাতে ফলো অন বাঁচানো যে কঠিন, তা স্বীকারই করে নিলেন মনোজ। বললেন, “অভিমন্যূ আর শুভজিৎ যদি উইকেটে টিকে থাকতে পারে, তা হলে হয়তো তা সম্ভব। কিন্তু সেটা বেশ কঠিন লাগছে। সকালের কন্ডিশন বোলারদের সাহায্য করছে।” বাংলার বোলাররাও সেই সুবিধা পেয়েছিলেন। দিন্দা আগের দিন শ্রেয়াস আইয়ারকে নেওয়ার পর এ দিন ফেরান সরফরাজ খানকে। সূর্য ও সিদ্ধেশ লাডের ক্যাচ যথাক্রমে শুভজিৎ ও ঈশ্বরন না ফেললে তাঁর ঝুলিতে আরও দু’উইকেট জমা পড়ত। এই লাডই ৬৪-র ইনিংস খেলে শেষ উইকেটে ৪৩-এর পার্টনারশিপ না গড়লে মুম্বই চারশোর গণ্ডি পেরতে পারত না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বই ৪১৪ (আইয়ার ১৫৩, নায়ার ৬৫, লাড ৬৪, বীরপ্রতাপ ৩-১১৪, লক্ষ্মী ৩-৫৮)
বাংলা ১৩০-৬ (মনোজ ৬৩, শার্দূল ৫-৩৭)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy