তৈরি নর্থ-ইস্ট কোচ রিকি হারবার্ট। সোমবার মর্গ্যান-বধের লক্ষ্যে নামছে জন আব্রাহামের আইএসএল টিম। -নিজস্ব চিত্র
গুয়াহাটির হলটা কী!
পশ্চিমে মাণ্ডবী তীর থেকে পূর্বে গঙ্গাপারের শহরে যখন রিংটোন ‘লেটস ফুটবল’, তখন ব্রহ্মপুত্রের ধারে মেরি কম থেকে সর্দার সিংহের খবর রাখা ট্যাক্সিচালক আইএসএল শব্দটা শুনে মুখচোখ এমন করে বসলেন, মনে হল মাধ্যমিকের গণিত পরীক্ষার্থীকে ক্যালকুলাস করতে দেওয়া হয়েছে!
এমনকী সোমবার জন আব্রাহামের নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি যেখানে সচিন তেন্ডুলকরের কেরল ব্লাস্টার্সের মুখোমুখি হবে সেই ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের পার্শ্ববর্তী দোকানদারও শনিবারের বারবেলায় বললেন, “আইএসএলে আমাদের শহরের টিম রয়েছে। অথচ দেখুন সেভাবে প্রচার নেই। কলকাতায় তো শুনলাম আটলেটিকোর হোর্ডিং শহরময়। আর এখানে...!”
উত্তর-পূর্বের ফুটবলপ্রেমীদের আক্ষেপ শুনে আবার হাসছেন নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের অন্যতম মালিক লারসেন মিং! “আগে টুর্নামেন্টটা শুরু হতে দিন। কাল কোচকে নিয়ে কলকাতা যাচ্ছি আপনাদের আটলেটিকোকে মাপতে। ওদের সঙ্গেই তো এখানে আমাদের দ্বিতীয় ম্যাচ। সাতটা জায়গা থেকে ম্যাচের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সোমবারের ম্যাচেও পঁয়ত্রিশ হাজার সিট ভরে যাবে। ফুটবলের সঙ্গে জুবিন গর্গ, পাপনদের কনসার্ট। আর প্রথম ম্যাচ জিতলে বৃহস্পতিবার কলকাতা ম্যাচের টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ি পড়বে। তখন এই শহরও বলে উঠবে লেটস ফুটবল।”
তা হলে কি অন্তত বল গড়ানোর আগে আইএসএল মহারণ থেকে দূরে সরে রয়েছে গুয়াহাটি? ভুলটা ভাঙিয়ে দিলেন জন আব্রাহামের টিমের কিউয়ি কোচ রিকি হারবার্ট। চার বছর আগে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কোচ ছিলেন। শনিবার দুপুরে গনগনে রোদ মাথায় নিয়েও কাপদেভিয়া, আইবর, জেমস কিনিদের কাউন্টার অ্যাটাক অনুশীলন করাচ্ছিলেন। ততক্ষণে জেনে গিয়েছেন ভিসা সমস্যায় প্রথম ম্যাচে পাবেন না ইস্টবেঙ্গলের কিউয়ি বিশ্বকাপার লিও বার্তোসকে। গোটা টুর্নামেন্টে হয়তো পাবেন না আহত বিশ্বকাপার কর্নেল গ্লেনকেও।
তা হলে কি চাপ বাড়ল? প্রশ্ন শুনেই রিচার্ড হ্যাডলির দেশের ফুটবল কোচের জবাব, “রাবিশ।” তার পর বললেন, “টিমে সবাই পেশাদার। জানে কী ভাবে ম্যাচ বার করতে হয়।” ধেঁয়ে গেল পরের প্রশ্ন, ভারতের গরম, না বিপক্ষ কোচ ট্রেভর মর্গ্যানের স্ট্র্যাটেজি, কোনটাকে সমীহ করছেন? এ বার খোলস ছেড়ে বেরোলেন বিশ্বকাপার কোচ। “মর্গ্যান লোকটাকে তো চিনিই না। তা হলে আর ভাবার কী দরকার। নিজেদের খেলা নিয়েই ভাবছি।”
এর পর যেন আরও উদ্দাম তিনি, “ভারত তো ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দেড়শোরও পিছনে। নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের আমি দায়িত্ব পাওয়ার সময় আমাদের দেশও ওই রকম একটা জায়গায় ছিল। পাঁচ বছর পর যখন আমার কোচিংয়ে নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলল, তখন র্যাঙ্কিং পঞ্চাশেরও নীচে।” মনে করিয়ে দিলেন, “নিজেও বিশ্বকাপ খেলেছি। বিরাশিতে। ব্রাজিল ম্যাচে স্টপার পজিশনে আমার কাজ ছিল জিকোকে মার্ক করা। পারিনি। এ বার জিকোর গোয়াকে হারিয়ে বদলা নিতে পারলে দারুণ লাগবে।”
দুপুর তিনটে নাগাদ র্যাডিসন ব্লু-র লবিতে বসে আনন্দবাজারের যখন আড্ডা চলছে রিকি হারবার্টের, তখনই সেই হোটেলে ঢুকে পড়লেন মর্গ্যান, ডেভিড জেমস-সহ কেরল ব্লাস্টার্স। লবিতে বিপক্ষের আইবরকে দেখে গড়িয়াহাটে পাঁচ মাস আগেও তাঁর রুমমেট সাবিথ রসিকতা মেশানো যুদ্ধংদেহি আওয়াজ দিলেন, “সোমবার দেখবি কী হয়!”
যা দেখে হাসছিলেন সচিন তেন্ডুলকরের দলের ব্রিটিশ কোচ মর্গ্যান। হারবার্ট জিকোকে আটকালে তিনিও সতীর্থ ছিলেন জর্জ বেস্টের। হারবার্টের মন্তব্য শোনাতে মর্গ্যান বললেন, “ম্যাচের আগে কোনও কথা নয়।” তাঁকে ঘিরে ইস্টবেঙ্গলে তাঁর সাফল্যের দিনের কুশীলবরা মেহতাব, ইসফাক, সৌমিক, সন্দীপ, সুশান্ত, গুরবিন্দর, বরিসিচ। লাল-হলুদে কোচিংয়ের পর ফের ভারতের মাটিতে ফুটবলে তাঁর অভিষেক ঘটছে সোমবার। এবং একদা মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গলে ফ্রি-ম্যান পেন ওরজি পৌঁছেই হুঙ্কার দিলেন, “মর্গ্যান স্যারের নেতৃত্বে আমাদের নতুন চেহারা সোমবার থেকে দেখতে পাবেন।” কোথা থেকে এই মোটিভেশন কেরল ব্লাস্টার্সের? কেন? সচিন তেন্ডুলকরের পেপ টক!
সাবিথ বললেন, “সে দিন সচিন বলে গেল, যখন জুনিয়র ছিলাম তখন কে সিনিয়র ভাবতাম না। আর তোমরাও কে বিশ্বকাপ খেলেছে আর কে ইউরো কাপ জিতেছে, তা নিয়ে না ভেবে মাঠে নিজের খেলাটাই খেলে এসো।” সন্দীপ, সৌমিক, গুরবিন্দরের গলাতেও জোশ, “সচিন বলে গিয়েছে এভারেস্টে প্রথম যে উঠেছিল তাকেই সবাই মনে রেখেছে। তোমরাও প্রথম আইএসএল জিতে সবার মনে জায়গা করে নাও।”
যা জানার পর হারবার্টের গলাও কিছুটা কমা শোনাল! “সচিন নিজেই তো মাস্টার ব্লাস্টার। মাঠে তো কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়বেই ওর কেরল ব্লাস্টার্স!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy