ক্যাপ্টেন কোহলি। শনিবার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তের সংখ্যার দিক থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে টপকালেন। এ বার আগ্রাসী মেজাজেও যেন ক্যাপ্টেন কুলকে পিছনে ফেলে দিচ্ছেন তিনি। মাঠ এবং মাঠের বাইরেও। বিরাট কোহলির মুখে বারবার ‘নির্দয় হয়ে ওঠো’ শুনে সে রকমই মনে হচ্ছে যে।
মোতেরার নেটে তাঁর নির্দয় ব্যাটিংয়ের নিদর্শন দেখা গিয়েছিল। উপ্পলে সেই ছবি দেখতে না পাওয়া গেলেও তাঁর মুখে যা শুনতে পাওয়া গেল, সেটাই বা কম কী?
পরিষ্কার বলে দিলেন, “প্রতিপক্ষ যেমনই হোক না কেন, তাকে জাস্ট শুইয়ে দাও। কোনও দয়া দেখালে চলবে না। টিমের মধ্যে এই ‘মোটো’ আনার চেষ্টা করছি।” একেবারে ধরো আর মারো স্টাইল। বিরাটের পূর্বসূরিদের কথায় এতটা আগ্রাসী মেজাজ কখনও দেখা গিয়েছে বলে তো মনে পড়ে না। আগ্রাসনের ‘ওভার ডোজে’ তিনি ধোনিকেও পিছনে ফেলে দিলেন।
মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে কী যেন বলছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘জেন ওয়াই ক্যাপ্টেন’।
কী বলুন তো? যাকে বলছিলেন কথাগুলো, পরে সেই গ্রাউন্ডসম্যানকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, “আসলে উনি পিচে বেশি রোল করাতে বারণ করছেন। চাইছেন, কাল বল ঠিকমতো ব্যাটে আসুক। যাতে মনের সুখে রান করতে পারেন।” বল ঠিকমতো ব্যাটে আসা মানেই তো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের রানের ফুলঝুরি। আগের দিন মোতেরায় যা হয়েছিল। তা ছাড়া কিউরেটর চন্দ্রশেখর কোহলিরা মাঠে ঢোকার আগেই বলে দিয়েছেন, “এখানে ভারত আগে ব্যাট করলে বলে বলে তিনশো তুলবে।”
আর রোলিং না হওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েই যেন সুর চড়ে গেল কোহলির। সাংবাদিক বৈঠকে এসে রীতিমতো টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলে দিলেন একটা। এক সাংবাদিক বাউন্সার দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, “এই তো শ্রীলঙ্কা দলের অবস্থা। এদের বিরুদ্ধে এত বড় বড় মার্জিনে ম্যাচ জিতে কি রাজা-উজির মারছেন বলে ভাবছেন?” হুক করে সে বল বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিলেন ক্যাপ্টেন, “ওরা কেমন, ওদের অবস্থা কী, ও সব ভেবে আমরা কী করব? এখন থেকে কোনও টিম নিয়েই আর ভাবব না। নিজেরা যদি ঠিক থাকি, তা হলে সামনে কে, সেটা বড় কথা নয়। দলের ছেলেদের মজ্জায় এই ব্যাপারটাই ঢুকিয়ে দিতে চাই। নিজেদের শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের উপর জোর দিলে আর কোনও কিছু নিয়েই চিন্তা করার দরকার নেই।”
তার পরই সেই নির্দয় হয়ে ওঠার তত্ত্ব। বিরাট বললেন, “প্রতিপক্ষ দুর্বল বলে তাদের হাল্কাভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বরং নির্দয় হয়ে ওঠো। বড় মার্জিনে জেতো। কোনও পরিস্থিতিকেই অবহেলা কোরো না। এ রকমই হওয়া উচিত আমাদের মানসিকতা। এই সিরিজ আর অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজ, বিশ্বকাপের আগে এই দুটো সিরিজেই নিজেদের পরখ করে নেওয়ার সুযোগ। এই সুযোগ কিছুতেই ছাড়া যাবে না।” সোজা কথায়, রবিবার হায়দরাবাদের অদূরে উপ্পলে পিষে মারতে চান দূর্বল শ্রীলঙ্কাকে। যারা প্রায় লড়াই ছেড়ে দিয়ে বসে আছে বলে মনে হলেও, ভিতরে ভিতরে বোধহয় নিজেদের তাতিয়ে তুলতে মরিয়া।
বেশ হাল্কা অনুশীলন এ দিন ভারতীয়দের। কোহলি-সহ কেউই নেটে তেমন বাড়তি পরিশ্রম করলেন না। নেট শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন স্থানীয় এক জ্যোতিষীর কাছ থেকে আশীর্ব্বাদ নিচ্ছিলেন কোহলিরা, তখনও ব্যাট করতে দেখা গেল ঋদ্ধিমান সাহাকে। রবিবার যাঁকে দেখতে উপ্পল স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে পড়তে পারে বলে খবর, সেই অম্বাতি তিরুপতি রায়ডু যখন নেটে ব্যাট করছিলেন, নজর রেখেছিলেন কোচ ডানকান ফ্লেচার। মাঝে মাঝে তাঁকে কোন বল কী ভাবে খেলতে হবে, তা দেখিয়েও দিচ্ছিলেন। সব শেষে স্টুয়ার্ট বিনিকে নিয়ে পড়লেন কোচ ও ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। দীর্ঘক্ষণ বলও করেছেন বিনি। দেখে মনে হতেই পারে রবিবার তাঁকে মাঠে নামানোর তোড়জোড় চলছে। রাতে অবশ্য শোনা গেল, ধবল কুলকার্নির কথাও না কি ভাবা হয়েছে।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ কিন্তু তাঁর দলবল নিয়ে নেমে এ দিন বেশ কড়া প্র্যাকটিস করলেন। মাঠে ফিজিক্যাল ও ফিল্ডিং ড্রিলসের বহর তো নেটে কড়া ব্যাটিং অনুশীলনও। হঠাত্ কথা কম, কাজ বেশি নীতিতে চলে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা শিবির। তাই সাংবাদিকদের সামনে স্পিন বোলিং কোচ রজার বিজয়সূর্যকে পাঠিয়ে দিল তারা। তাঁর মুখে পাখি পড়ানো চ্যালেঞ্জের কথা। মোতেরায় ম্যাথেউজের বলা “ওরা আমাদের শেষ করে দিল”-র ধারকাছ দিয়েও যেতে চাইলেন না।
সঙ্গা, মাহেলারা কি এখন মুখ লুকোতে চাইছেন, না তাঁরা বিরক্ত বলে মিডিয়ার সামনে এলেন না? এর উত্তর আর স্পিন কোচের কাছে কী করে থাকবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy