যুবভারতীতে গত রবিবার বিপক্ষ ডাগআউটে বসে মনে মনে ম্যাচ রিডিং করছিলাম— সামনের রবিবার আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচে আটলেটিকো দে কলকাতা কেমন খেলতে পারে।
আটলেটিকো দে কলকাতাকে আমার টিম তিন গোল দিল। সমর্থকরা দেখলাম হতাশও হয়ে পড়েছেন প্র্যাকটিস ম্যাচে কলকাতা ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলা দেখে। প্রথমেই বলে রাখি, সে দিন কোচের চেয়ারে বসে কোনও ম্যাজিক করিনি আমি। ছেলেদের মাঠে নামার আগে দু’টো কথা বলেছিলাম, নিজেদের জোনে ট্যাকল করবি। আর দ্বিতীয়ত, বল পেলে যে অফ দ্য বল থাকবে, সে পাল্টা দৌড়টা দেবে।
আটলেটিকো দে কলকাতা দেখলাম তাতেই শেষ হয়ে গেল।
টিমটার গঠনে আসলে কয়েকটা গণ্ডগোল থেকে গিয়েছে। প্রথমেই বলব, ওদের সহকারী কোচ হোসে রামিরেজ ব্যারেটোর নাম। ওদের চিফ কোচ আন্তোনিও হাবাস তো ভারতের নন। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে ওঁর ধারণা নিয়ে আসাও সম্ভব নয়। হাবাসের পক্ষে জানা অসম্ভব, ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে কে ভাল, আর কে নয়। কিন্তু ব্যারেটো তো সেটা জানে। এত দিন ধরে খেলেছে ভারতে। ও তা হলে কী প্লেয়ার নিল নিলামে?
পরিষ্কার বলছি, আটলেটিকো দে কলকাতা খারাপ টিম, একেবারেই বলব না। কিছু প্লেয়ার ভাল। লুই গার্সিয়ার মতো বিশ্বকাপার, রিয়াল মাদ্রিদে খেলা বোরহা ফার্নান্দেজ আছে যে টিমে— তাদের খারাপ বলবেন কী ভাবে? মুশকিল হল, টিমটার বাকি প্লেয়াররা ভাল নয়। তারা বিশ্বকাপারদের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। কারণ তারা ভারতীয় ফুটবলের মানে আহামরি প্লেয়ার নয়। তারা বুঝতে পারছে না, বিদেশিরা কখন বল ছাড়ছে, কখন ধরছে। বুঝতে পারছে না, কখন পাস আসবে। না গতি, না ফুটবল-সেন্স— কোথাওই ফিকরু-ফার্নান্দেজদের ধারেকাছে থাকছে না এখানকার রাকেশ মাসি বা কিংশুক দেবনাথরা।
আর এর দায় তো ব্যারেটোকেই নিতে হবে। ও-ই তো নিলাম টেবলে ছিল। কেন মেহতাব হোসেন, রহিম নবির মতো প্লেয়ারদের ও তুলল না? যুবভারতীতে ওদের বিপক্ষ কোচ হিসেবে আমার মনে হয়েছে যে পাঁচ জনের থাকা উচিত ছিল টিমটায়, তারা হল মেহতাব, নবি, বলজিত্ সাইনি, শৌমিক দে আর নির্মল ছেত্রী। কারণ, আইএসএলে তাদেরই আধিপত্য দেখানোর সম্ভাবনা বেশি, যাদের হাতে ভাল ভারতীয় প্লেয়ার আছে।
ব্যারেটোর আরও একটা ব্যর্থতা হল, ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে কোনও ধারণা হাবাসকে দিতে না পারা। স্পেনে বত্রিশ দিন শিবির করেছে টিমটা। এ রকম শিবির করলে টিমের মধ্যে যে বোঝাপড়াটা দেখা যায়, তার কোনও প্রতিফলন যুবভারতীতে পাইনি। তৃতীয়ত, ওদের কোচেদের আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম। বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা বিচার না করে স্ট্র্যাটেজি সেট করা। আমি সে দিন তিনটে পরিবর্তন করেছিলাম, যার পরই তিন গোল খেয়ে যায় আটলেটিকো।
এক জন বাঙালি হিসেবে আমি সব সময় চাই কলকাতার টিম জিতুক। আইপিএল এক সময় দেখতাম শুধু সৌরভের জন্য। চাইতাম, ওর হাতে ট্রফি উঠুক। আইপিএল পায়নি সৌরভ। আইএসএলে কলকাতার টিমের অন্যতম মালিক ও। কিন্তু এই সমস্যাগুলো না মিটলে আইএসএলেও ওর ভাগ্য পাল্টাবে কি না, জানি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy