ডানকান ফ্লেচারের ভারতীয় কোচ হিসেবে দিন শেষ হয়ে গিয়েছে সানি (সুনীল গাওস্কর) বলার আগেই। অন্তত আমার তাই ধারণা। যে দিন ও নিউজিল্যান্ড সফরেও ওয়ান ডে, টেস্ট দু’টোই হারল, তার পর আর এক মিনিটও ওকে ধোনিদের কোচ রেখে দেওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটেই থাকে। ভারত এর পর এশিয়া কাপে মুখ থুবড়ে পড়ার পরেও এ সপ্তাহে ফ্লেচারই কোচ হিসেবে ভারতীয় দল নিয়ে যাবে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও! অথচ ভারতীয় ক্রিকেটটাকেই ও গোল্লায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
ফ্লেচারের কোচিংয়ে ভারতের বিদেশে গো-হারা হারার কথা নতুন করে আর বলার নেই। ইংল্যান্ডে ০-৪, অস্ট্রেলিয়ায় ০-৪। দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডেও টেস্ট সিরিজ হার। তিন বছরে বিদেশে সাকুল্যে মাত্র একটা টেস্ট জয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডসর্বত্র ওয়ান ডে সিরিজেও হার। দেশের মাঠে ফ্লেচারের কোচিং জমানায় ভারত অনেক টেস্ট আর ওয়ান ডে সিরিজ জিতেছে। কিন্তু সে তো ভারতীয় দল হোম সিরিজ সব সময় নিজেদের পুরোপুরি পছন্দসই, যাকে বলে ‘টেলরমেড’ উইকেটে খেলে থাকে। কিন্তু তাতেও তো ফ্লেচারের জমানায় ভারতকে ঘরের মাঠেই টেস্ট সিরিজে হারিয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ড। ওয়ান ডে-তে হারিয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। তা হলে গত তিন মরসুম ভারত দেশের মাঠে অপ্রতিরোধ্য সেটাই বা বলা যায় কী ভাবে?
ভারতীয় ক্রিকেটের উপকারেই বা ফ্লেচার কতটা লেগেছে এই ক’বছরে? জাতীয় দলের কোচের কাজটা কী? না, ফর্ম হারানো প্লেয়ারকে ফর্মে ফেরানো। আন্তর্জাতিক প্লেয়ারকে তো আর কোচ স্কিল বা খেলাটার প্রাথমিক পাঠ শেখাবে না! কিন্তু ফ্লেচারের জমানায় এক জন করে ক্রিকেটার ফর্ম হারিয়েছে আর ভারতীয় দল থেকে এতটাই দূরে ছিটকে গিয়েছে যে আজ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটেনি কারও। সহবাগ, গম্ভীর, হরভজন, উমেশ যাদবক’জনের নাম করব?
দলের টেকনিক্যাল উপকারই বা কতটা করেছে ফ্লেচার? বরুণ অ্যারন যদি এখন ভারতে সবচেয়ে জোরে বোলিং করে থাকে তো ওকে এখনও কেন সঠিক লাইন-লেংথ শেখাতে পারল না ফ্লেচার? দু’শোর (১৮৯টা) কাছাকাছি ওয়ান ডে খেলে ফেললেও কেন রায়না এখনও শর্ট পিচড্ বল ঠিকঠাক খেলতে পারে না? রোহিত শর্মার মধ্যে এখনও এত ধারাবাহিকতার অভাব কেন?
চমকে দেওয়া স্ট্র্যাটেজিই বা কী এমন দেখিয়েছে! যদি না চেতেশ্বর পূজারার মতো ব্যাটসম্যানকে এশিয়া কাপে দলের সঙ্গে নিয়ে গিয়েও একটাও ম্যাচ না খেলানো, জিম্বাবোয়েতে ওয়ান ডে টুর্নামেন্টে ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’ অমিত মিশ্রকে ২০টা ম্যাচ পরে আবার একটা ওয়ান ডে-তে সুযোগ দেওয়া, মনোজ তিওয়ারি ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করার পরেও তাকে ১২টা ম্যাচ বসিয়ে রেখে দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়াএগুলোকে ‘চমকে দেওয়া স্ট্র্যাটেজি’ বলে ধরেন!
আসলে ধোনির টিমে ফ্লেচারের কাজটা ঠিক কী আমাকে বলুন তো? দলে আলাদা বোলিং কোচ আছে। আলাদা ফিল্ডিং কোচ আছে। দলের স্ট্র্যাটেজি যা, সেটা করে ধোনির মতো একজন স্ট্রং ক্যাপ্টেন-ই। বর্ষীয়ান ফ্লেচার (৬৫ বছর) কি পা গুটিয়ে বসে টিভি ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফারদের ছবি দেওয়া আর প্রতি মাসে মোটা ডলারের চেকটা নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় দলে আছে? সানি ঠিকই বলেছে, ফ্লেচারের শুধু ওই আন্তর্জাতিক ম্যাচের সময় ভারতে আসা আর এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচ না দেখাটা মোটেই ভাল ব্যাপার নয়।
ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে ফ্লেচারের মতো পারফরম্যান্স যদি কোনও ভারতীয় কোচ করত, তা হলে তাকে ছাঁটাই করতে বোর্ডের ক’সেকেন্ড লাগত ভাবুন তো? আমি তো বলব, নতুন তরুণ কোচ রাখতে হলে কোনও ভারতীয় কোচকেই জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। আমি আজও ভেবে উঠতে পারি না, দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন করানোর পরেও কেন লালচাঁদ রাজপুতকে কোচ রেখে দেওয়া হয়নি? কেন ওর কোচিংয়েই ভারত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এত বছরের মধ্যে প্রথম বার ত্রিদেশীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট জেতার পরেও ওকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছিল? আমি তো বলব, বিদেশি কোচ গ্যারি কার্স্টেন যতই ভারতকে ২০১১ বিশ্বকাপ এনে দিক, ও আসলে লালচাঁদের পরিশ্রমের ফলটা খেয়েছিল।
আর ডানকান ফ্লেচার? ভারতের কোচ হিসেবে ওর শুধু সময়ই শেষ হয়ে যায়নি, ‘হেল্পলাইন’-ও শেষ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy