Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
জার্সি হয়তো লালচেই

প্রথম সারির ফুটবলার খেলানোর জটিলতা কাটাতে বৈঠক আজ

যুবভারতীর বিশালত্ব ও প্রচারমাধ্যমের উৎসাহ দেখে কলকাতায় পা দেওয়ার বারো ঘণ্টার মধ্যেই সৌরভের শহরের প্রেমে পড়ে গেলেন আটলেটিকো মাদ্রিদের কর্তারা! লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম দাবিদাররা মুগ্ধ শহরের আইকন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ফুটবল প্রেম দেখে। আটলেটিকো মালিক মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মারিন-সহ স্পেনের ক্লাবটির ছয় কর্তার সঙ্গে বৈঠকে কী এমন করলেন সৌরভ যা মুগ্ধ করেছে আটলেটিকো কর্তাদের? দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে চলা পাক্কা চার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক শেষে দিয়েগো কোস্তাদের ক্লাবের মালিক মাদার হাউসে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “দারুণ বৈঠক হল।

আটলেটিকো কর্তাদের সঙ্গে হর্ষ নেওটিয়া, উৎসব পারেখ, সৌরভ। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

আটলেটিকো কর্তাদের সঙ্গে হর্ষ নেওটিয়া, উৎসব পারেখ, সৌরভ। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

যুবভারতীর বিশালত্ব ও প্রচারমাধ্যমের উৎসাহ দেখে কলকাতায় পা দেওয়ার বারো ঘণ্টার মধ্যেই সৌরভের শহরের প্রেমে পড়ে গেলেন আটলেটিকো মাদ্রিদের কর্তারা! লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম দাবিদাররা মুগ্ধ শহরের আইকন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ফুটবল প্রেম দেখে।

আটলেটিকো মালিক মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মারিন-সহ স্পেনের ক্লাবটির ছয় কর্তার সঙ্গে বৈঠকে কী এমন করলেন সৌরভ যা মুগ্ধ করেছে আটলেটিকো কর্তাদের? দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে চলা পাক্কা চার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক শেষে দিয়েগো কোস্তাদের ক্লাবের মালিক মাদার হাউসে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “দারুণ বৈঠক হল। সৌরভ আমাদের আইপিএল নিয়ে ওঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছে। যা আমরা আইএসএলে কাজে লাগাব।” তার পরেই বললেন, “ওঁর খেলার কিছু সিডি দিল। সেগুলো আজ রাতে দেখব। সৌরভকেও আমাদের সঙ্গে লিসবনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল দেখতে নিয়ে যাব।”

এ দিনের আলোচনায় বেহালার বীরেন রায় রোডের বাসিন্দাকে মিগুয়েল বলেন, ২০১৭-র অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের প্রথম এগারোতে পাঁচ-ছ’জন পূর্বাঞ্চলের ফুটবলার তিনি দেখতে চান। এ ছাড়াও কলকাতার দল নিয়ে পরিকাঠামো, টেকনিক, বিপণন, সমর্থক তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে স্পেনের ক্লাবটির কর্তাদের সঙ্গে এ দিন আলোচনা হয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েনকা, উৎসব পারেখদের। কিন্তু সেই বৈঠকের পর উঠে আসছে অনেক প্রশ্ন।

এক, লোকসভা ভোটের জন্য সল্টলেক স্টেডিয়াম এবং তাঁর পরিকাঠামো ব্যবহারের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা যাচ্ছে না। এ দিন রাতে কলকাতার টিমের অন্যতম মালিক হর্ষ নেওটিয়ার বাড়িতে ডিনার পার্টিতে হাজির ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় আটলেটিকো কর্তাদের। সেখানে ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের একপ্রস্থ আলোচনা হলেও জট পুরোপুরি কাটেনি।

দুই, অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য জুন মাস থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কাজ শুরু হওয়ার কথা। যেখানে ফিল্ড টার্ফ তুলে ফের ঘাসের মাঠে ফেরার পরিকল্পনাও রয়েছে। কারণ চলতি বছরেই ফিফার কর্তারা আসবেন প্রস্তুতির কাজ সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করতে। জুন মাসে এই কাজ শুরু হলে সেপ্টেম্বরে যুবভারতীতে এই টুর্নামেন্ট হবে কী ভাবে?

তিন, আটলেটিকো কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ দিন সৌরভ-হর্ষরা বুঝিয়ে দিয়েছেন লা লিগার চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে থাকা এই দলটির দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় টিমের ফুটবলার খেলালে কলকাতার ফুটবল জনতার সঙ্গে আত্মীয়তার গাটছড়া বাঁধা যাবে না। দাভিদ ভিয়া, গাবিদের মতো আটলেটিকোর প্রথম সারির পাঁচ-ছ’জন তারকা ফুটবলারকে চাই। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও ইতিবাচক তথ্য দিতে পারেননি আটলেটিকো কর্তারা। বরং তাঁরা কলকাতার লিগ পার্টনারদের বলেন, ফিফার নিয়ম অনুযায়ী একসঙ্গে বিশ্বের দু’টো দলে কখনও নাম নথিবদ্ধ করা যায় না।

যদি দাভিদ ভিয়াদের আইএসএল-এ কলকাতার দলে খেলতে হয়, তা হলে তাঁদের লোনে নিতে হবে। কিন্তু ফিফার নিয়মে সেপ্টেম্বরে তা হওয়া সম্ভব নয়। আটলেটিকো কর্তারা বলেন, ফিফার নিয়ম খুব নির্দিষ্ট এবং সহজে নড়চড় হয় না। আপনারা এআইএফএফ-এর মাধ্যমে এ ব্যাপারে ফিফাতে আবেদন করুন জট খোলার ব্যাপারে। আটলেটিকোর তারকা ফুটবলারদের খেলানোর এই শক্ত গিঁট খুলতে রাতেই নৈশভোজে হাজির আইএমজি-আর কর্তা শ্রীনিবাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আটলেটিকোর প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেই বৈঠকেও জট খোলেনি। আজ বুধবার দাভিদ ভিয়ার মতো প্রথম সারির ফুটবলারদের খেলানো যাবে কি না সেই জট কাটাতে ফের বৈঠক হবে লিগ পার্টনার, ফেডারেশন কর্তা, আটলেটিকো প্রতিনিধি এবং আইএমজি-আর কর্তাদের। এছাড়াও জট খোলেনি কে কোচ হবেন সে ব্যাপারেও। আইএমজি-আর কর্তারা এ দিন রাতে বলেন, কলকাতার লিগ পার্টনারের মতো অন্য দলের পার্টনাররাও কিছু না কিছু সমস্যায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরে আইএসএল কী ভাবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তবে আইএমজি-আর সূত্রে খবর, বিশ্বকাপ শেষ হলে জুলাই নাগাদ তাঁরা একটা সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। সেখানেই এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে বলে আশাবাদী তাঁরা।


যুবভারতী পরিদর্শন

এ দিন বৈঠকের মাঝে আটলেটিকোর দুই প্রতিনিধি গিয়েছিলেন বারাসত স্টেডিয়াম দেখতে। কিন্তু অনুশীলনের জন্য সেখানকার মাঠ দেখে খুশি হলেও দূরত্ব ভাবাচ্ছে তাঁদের। বুধবার সকালে তাই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল মাঠ ফের দেখতে যাবেন তাঁরা। বৈঠকে যুবভারতীতে ফুড কোর্টের জন্য জোরালো সওয়াল করেন তাঁরা। নেপথ্যে যুক্তি, এতে আয় বাড়ানোর আরও একটা রাস্তা খোলে। দর্শকও ফুটবল বিনোদনের সপ্তম স্বর্গে পৌঁছবে রসনা তৃপ্ত হলে।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে বিশাল যুবভারতী চক্ষুস্থির করে দিয়েছিল আটলেটিকো মাদ্রিদের মালিক মিগুয়েল মারিনের। যুবভারতী পুরোদস্তুর জরিপ করে তিনি বলে বসেন, “হোয়াট আ জাইগ্যানটিক স্টেডিয়াম!” তার পরেই ছুড়ে দেন প্রশ্নটা, “এই মাঠেই নাকি মেসি, অলিভার কানরা খেলে গিয়েছে? পা পড়েছে মারাদোনার?” এর পরেই তাঁর মন্তব্য, “এত বিশাল স্টেডিয়ামে এত কীর্তি! আগামী দিনে নতুন অতিথি আসলে তাঁকে কিন্তু বলতে ভুলবেন না, এই মাঠে আটলেটিকো মাদ্রিদের দলও খেলে।”

মিগুয়েল জানতে চান, যুবভারতীর বাকেট চেয়ারের সংখ্যা, ভিভিআইপি এবং প্রেস বক্সের আসন ও কার পার্কিং-এর ব্যাপারে। বলেন, “দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কোনও আপস নয়। এই ব্যাপারে কিন্তু আমরা বেশ কঠোর।” মাঠ ছাড়ার সময়ও প্রশ্ন শেষ হয়নি আটলেটিকো মাদ্রিদ মালিকের। এ বার সাফ জানতে চাইলেন, “২০১৭ তে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য মাঠের কৃত্রিম ঘাস তুলে ফেলা হলে তা কবে নাগাদ হবে? পুলিশ কন্ট্রোল রুম কোথায়? ড্রেসিংরুমটা এক বার দেখান তো?” ড্রেসিংরুম দেখলেন খুঁটিয়ে। বাদ গেল না স্নানঘরের শাওয়ারও। এক সাংবাদিক এরই মাঝে স্পেনের ক্লাবটির মালিককে বললেন ১৯১১ সালে তাঁদের লাল-সাদা জার্সি ব্যবহার করার বছরেই এই শহরের মোহনবাগান শিল্ড জিতে রেকর্ড গড়েছিল। যা শুনে মিগুয়েলের ছোট্ট প্রতিক্রিয়া, “গ্রেট!”

দুপুরের পর ইন্টারভিউ দিতে বাইপাসের ধারের অভিজাত হোটেলে গিয়েছিলেন হোসে রামিরেজ ব্যারেটো এবং স্পোটির্ং ক্লুব দ্য গোয়ার কোচ অস্কার ব্রুজো। তবে দু’জনেই বেরিয়ে বলে যান, “ইন্টারভিউ কম, গল্প বেশি হল।” স্পেনের ভিগোতে বেড়ে ওঠা অস্কার বললেন, “আমি স্পোর্টিং-এর কোচ আছি, থাকব। আটলেটিকো কর্তারা জানতে চেয়েছিলেন ভারতীয় ফুটবল এবং ফুটবলারদের সম্পর্কে। আমি তা জানিয়েছি।” আর রাতে লুসিয়ানোকে নিয়ে নৈশভোজে বেরোনোর আগে ব্যারেটোর রসিকতা, “এত প্রস্তুতি নিয়ে গেলাম কিন্তু কনফার্মড হলাম কোথায়? ওরা তো আমার কাছ থেকে কলকাতার ফুটবলে বারো বছরের অভিজ্ঞতা জানতে চাইছিলেন।”

সবুজ তোতাও মুগ্ধ সাক্ষাৎকার পর্বে সৌরভের উৎসাহদান দেখে। বললেন, “প্রথমে খুব টেনশন হচ্ছিল। কিন্তু সৌরভই বলল, ব্যারেটো, টেনশন নয়। মন খুলে গল্প করো। ব্রাজিলীয় হয়েও পর্তুগিজের বদলে ওদের সঙ্গে স্প্যানিশেই গল্প করেছি। মনে তো হল ওরা খুশি।”

মিগুয়েল থেকে ব্যারেটো বৈঠকে যাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ সেই সৌরভ কী বললেন? বিকেলে বাড়ি ফেরার আগে সৌরভ বলে গেলেন, “দু’পক্ষই বৈঠকে অনেক প্রস্তাব দিয়েছে। আজ কিছু কথা হল। বাকি কথা বুধবার হবে। সেখানে ফেডারেশন এবং আইএমজি-আর-এর প্রতিনিধিরাও থাকবেন।” বুধবারের এই বৈঠকের পরেই ঘোষণা করা হবে কলকাতার দলের নাম এবং উদ্বোধন হবে জার্সির। ভিতরের খবর, দলের তিনটি নাম বাছা হয়েছে। কিন্তু জার্সি? সেটা কি আটলেটিকোর মতোই লাল-সাদা হবে? শোনা যাচ্ছে, আটলেটিকোর লাল-সাদা জার্সির মতোই লালচে হতে চলেছে কলকাতার দলের জার্সি।

যে জটিলতা কাটেনি

• যুবভারতী ও সরকারি পরিকাঠামো কতটা ব্যবহার করা যাবে?

• দাভিদ ভিয়া, গাবিদের মতো প্রথম সারির তারকারা কলকাতার দলে খেলতে পারবেন কি?

• অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য জুন মাসে যুবভারতী সংস্কারের কাজ শুরু হলে সেপ্টেম্বরে কোন স্টেডিয়ামে খেলা হবে?

অন্য বিষয়গুলি:

debanjan bandopadhyay isl kolkata meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE