শহরে সস্ত্রীক মাহি। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ফোনের ওপার থেকে দমকে দমকে ছিটকে বেরোচ্ছে আত্মবিশ্বাস। টেনশনের ‘ট’ নেই, সিএসকে প্রসঙ্গ উঠলেই পরের পর হুঙ্কার ছাড়ছেন কেকেআর ম্যানেজমেন্টের জনৈক কর্তা, “আরে আপনারা এত টেনশন করছেন কেন? সিএসকে তো কী? আমরাও তো বদলে যাওয়া কেকেআর!”
রাত দশটাতেও কলকাতা এয়ারপোর্টের বাইরে শ’খানেক লোকের ভিড়। কী ব্যাপার? না, কেকেআর আসছে। গৌতম গম্ভীর বেরোলেন এবং তৎক্ষণাৎ তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হল, কেকেআর-সিএসকে ম্যাচ হাউসফুল। ইডেন তাঁর টিম নামার প্রহর গুনছে। চমকিত কেকেআর ক্যাপ্টেন উপস্থিত সিএবি প্রতিনিধিকে বলে ফেললেন, “তাই? আমিও তো ইডেনে নামার প্রহর গুনছি।”
কে যেন ইডেন থেকে আর সব রং মুছে দিয়েছে! যে দিকে চোখ যায়, শুধু সোনালি-বেগুনি। কোথাও দাঁড়িয়ে দৃপ্ত পাঠান। কোথাও গম্ভীরের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুষ্টি। একের পর এক কাটআউট। মোটিভেশনাল উক্তি। ওয়ান টিম। ওয়ান প্লেজ। এক টিম। এক প্রতিজ্ঞা।
মঙ্গলবারে চারশো টাকার টিকিট চাই? সোল্ড। পাঁচশো? নেই। ন’শো? পরের ম্যাচে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। আঠারোশো? সবার আগে নাকি নিঃশেষ!
এত পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে। এক মাসের উপর টুর্নামেন্ট চলছে, আর ইডেন আইপিএল সেভেন প্রথম দেখবে আজ। বুভুক্ষু ক্রিকেট-জনতার উন্মাদনা এখন চড়বে না তো কবে চড়বে? এত পর্যন্ত দেখে এটাও মনে হবে, ইডেন কেকেআরেরই মাঠ। ঘরের মাঠ। দর্শক তাদের। সমর্থন তাদের। পিচও তাদের।
ভুল।
মঙ্গলবারের গরিষ্ঠ ইডেন-দর্শক নিশ্চয়ই কেকেআরের। সমর্থনও। কিন্তু পিচ মোটেও নয়। বরং সেটা যতটা কেকেআরের, ততটাই সিএসকের!
এ দিন বিকেল-বিকেল ইডেনে গিয়ে দেখা গেল, পিচে সবুজ আভা। সাধারণত মে মাসের ইডেন উইকেট স্লো টার্নার হয়ে থাকে। তা হলে সবুজ যে? ইডেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলে দিলেন, উইকেটে যাতে ক্যারি থাকে তাই ঘাসের ব্যবস্থা। ভাল বোলার যারা, তারা ঠিকই উইকেট পাবে। আর টার্ন? এ বার পূর্বাঞ্চলের চিফ কিউরেটর আশিস ভৌমিককে বলতে শোনা গেল, মঙ্গলবারের ম্যাচে নাকি টার্ন কম, রান বেশি। লোকে টি-টোয়েন্টি দেখতে আসে চার-ছয়ের জন্য।
নেপথ্যে যদিও অন্য কাহিনি শোনা গেল। ক্রিকেট নয়। বোর্ড কূটনীতির।
ওয়াংখেড়ে থেকে যে দুটো প্লে-অফ সরেছে, তার একটা এসেছে ইডেনে। ২৭ মে প্রথম কোয়ালিফায়ার ইডেনে হবে। শোনা গেল, সাম্প্রতিকে বোর্ডের বিরুদ্ধে সিএবি কর্তাদের গাঁইগুঁই বন্ধ করার জন্যই নাকি এমন ‘উপহার’। ‘অদৃশ্য’ প্রেরকের নাম? থাক। ঘটনা হল, সিএবিকে যেমন প্লে-অফ দেওয়া হয়েছে, রিটার্ন গিফ্ট হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধেও চাওয়া হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম সিএসকে। যারা নাকি ইডেনকে এখন থেকে ততটাই নিজেদের ভাববে, যতটা কেকেআর! ২৭ মে-র প্লে অফে তারাই ইডেনে নামবে, সিএসকে নাকি ধরে নিচ্ছে। এটাও ধরে নিচ্ছে, সেক্ষেত্রে ইডেন থেকে হোম অ্যাডভান্টেজও তাদের প্রাপ্য। সেটা ২৭ হোক বা ২০ মে। শোনা গেল, তাদের নির্দেশ মতোই নাকি পিচ থেকে টার্ন কমানোর বন্দোবস্ত (সোমবার রাত পর্যন্ত পিচ সে রকমই থাকল)। কারণটাও সহজবোধ্য সুনীল নারিন। আরও শোনা গেল, পিচ পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে দিন পাঁচেক আগে থেকে। রাতারাতি নয়।
ইডেনে পিচ প্রস্তুতির ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার
সোমবার দুপুর-দুপুর সিএসকে শহরে পৌঁছল। এবং টিমের সঙ্গে আসা তামিলনাড়ু ক্রিকেটের এক মহাকর্তার কলকাতায় ঢুকেই সিএবির এক পরিচিতকে ফোনে প্রথম প্রশ্ন, “পিচটা কী দাঁড়াল?” মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ইডেনের পাঁচশো মিটারের মধ্যেও এ দিন আসেননি। কিন্তু সিএসকে টিম ম্যানেজার যে কখন এলেন আর পিচ সম্পর্কে খবরাখবর নিয়ে চলে গেলেন, মিডিয়া কোন ছার, কাকপক্ষীতেও টের পেল না।
ঘরের বাইরে ‘হোমের’ সন্ধান পেয়ে কি না কে জানে, টিম সিএসকে যেন পুরোপুরি ‘হুইসল পোডু’ মোডে। টিম হোটেলে এমএসডি, সুরেশ রায়নাদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখে কে বলবে, আরসিবি ম্যাচটা হেরে তাঁরা কলকাতায় ঢুকেছেন। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম চেক-ইন করার আগেই ছুটলেন রেস্তোরাঁয় পছন্দের ডিশের খোঁজে। কেউ সোজা সুইমিং পুলে। বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত ফাফ দু’প্লেসি। রেকর্ড বলে, সিএসকে বনাম কেকেআর ম্যাচ মানে সত্তর শতাংশ ক্ষেত্রে ধোনির কপালে রাজতিলক। কিন্তু এই কেকেআর যে আবার একটু আলাদা!
টানা চার ম্যাচ জেতা এই কেকেআর যেন পারিপার্শ্বিকের ঊর্ধ্বে। সিএসকে প্রসঙ্গে এরা বলে দেয়, রাঁচি আর ইডেনে তফাত আছে। রাঁচির সিএসকে ম্যাচে এ বার যে কেকেআর নেমেছিল, তাদের সেট ওপেনিং জুটি ছিল না। মিডল অর্ডারে ভরসা বলে কিছু ছিল না। শুধু ভাল বোলিং ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সিএসকের বিরুদ্ধে ইডেনে যে কেকেআর নামবে, তাদের ভাল বোলিং যেমন ছিল, তেমন আছে। সঙ্গে আছে গম্ভীর-উথাপ্পার সেট ওপেনিং জুটি। মিডল অর্ডারে আছে ফর্মে থাকা ইউসুফ পাঠান-মণীশ পাণ্ডে। হায়দরাবাদ ম্যাচে যে মিডল অর্ডার দেখিয়ে দিয়েছে, ওপেনাররা না পারলেও এখন তারা পারে। দু’রানে ছ’উইকেট আর চলে যায় না। টানা চার ম্যাচ জেতা এই কেকেআর আরও বলে দেয়, তারা নিখুঁত না হলে ধোনির টিমও দুর্ভেদ্য নয়। আরসিবি দেখিয়েছে, হলুদ জার্সির পরাক্রমী ব্যাটিংকেও একশো চল্লিশে আটকে রাখা যায়। দেখিয়েছে, মধ্যবিত্ত বোলিং নিয়ে। আরসিবি পারলে কেকেআর পারবে না কেন? নাইটদের বোলিং তো টুর্নামেন্টের সেরা।
অতঃকিম?
টিম গম্ভীরের ফর্ম, মানসিকতা, জোশ যদি প্রাক-যুদ্ধের সূচক হয়, তা হলে মঙ্গলবারের যুদ্ধটা গড়পড়তা দিনের নাইট বনাম সিএসকে হওয়া উচিত নয়। বরং আবহ, ম্যাচকে ঘিরে নাইটদের শরীরী ভাষা দেখলে একটা কথা মনে হবে।
ধোনির বিরুদ্ধে অপমানের রেকর্ডটা আজ পাল্টালেও পাল্টাতে পারে। কেকেআরকে আজ আইপিএল ফাইভ ফাইনালের নাইট রাইডার্স দেখালেও দেখাতে পারে!
ইডেন টাইম নিয়ে সমস্যা
মঙ্গলবারের আইপিএল ম্যাচে খেলা চলাকালীন বন্ধ থাকতে পারে ‘ইডেন টাইম’। মাসকয়েক আগে ক্লাবহাউসের দিকে বসানো এই ঘড়ির স্ক্রিনের প্রতিফলন ক্রিকেটারদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই খেলা চলার সময় ঘড়ি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
নাইটদের প্লে অফ অঙ্ক
এক) শেষ তিনটে ম্যাচের তিনটেতে জিতলেই প্লে অফে।
দুই) চেন্নাই ম্যাচ হেরে বেঙ্গালুরু, সানরাইজার্স ম্যাচ জিতলেও চলবে। সে ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু বাকি দুটো জিতলেও শেষ করবে ১৪ পয়েন্টে। কেকেআরের হয়ে যাবে ১৬।
তিন) নাইটরা চেন্নাই, হায়দরাবাদ ম্যাচ জিতল কিন্তু হেরে গেল বেঙ্গালুরুর কাছে। আর বেঙ্গালুরু শেষ তিনটে ম্যাচ জিতল। সে ক্ষেত্রে কেকেআর এবং আরসিবি দুটো টিমেরই পয়েন্ট হবে ১৬। প্লে অফের দল ঠিক হবে নেট রান রেটে। যেখানে কেকেআর (০.০৮৭) এখনও আরসিবি-র (-০.২৭০) থেকে এগিয়ে।
চার) কেকেআর বেঙ্গালুরু ম্যাচ জিতল কিন্তু চেন্নাই, হায়দরাবাদ ম্যাচ হেরে গেল। সে ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু বাকি দুটোর মধ্যে দুটোয় জিতলে দু’দলই একই পয়েন্টে। হিসেব সেই নেট রান রেটে। আর চেন্নাই, হায়দরাবাদ ম্যাচের একটাতে বেঙ্গালুরু হেরে গেলেই গম্ভীররা প্লে অফে।
পাঁচ) কেকেআর তিনটে ম্যাচই হারল। বেঙ্গালুরু সেক্ষেত্রে দুটো ম্যাচ জিতলেই প্লে অফে। আর নাইটরা যদি চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ম্যাচে হেরে সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে জেতে, তা হলে পয়েন্ট হবে ১৪। কোহলির টিম তখন তিনটেয় তিনটে জিতলে গম্ভীরদের ছুটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy