Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
ব্র্যাভোদের কঠোর শাস্তির দাবি ভারতীয় বোর্ডের

দাঙ্গার জুজু দেখিয়ে খেলতে নামানো হল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে

দেড়শো বছর পূর্তির উত্‌সবের আলোর রোশনাইয়ে ভাসা ইডেনকে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। সোমবার ইডেনে চলতি ওয়ান ডে সিরিজের শেষ ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরে যাচ্ছেন ব্র্যাভোরা। তাঁদের বোর্ডের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব মিটমাটের বদলে আরও জটিল হয়ে ওঠায় এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন ক্যারিবিয়ান ক্যাপ্টেন ডোয়েন ব্র্যাভো।

কাজে এল না শান্তির দূত দলাই লামার আশীর্বাদ। সিরিজ মাঝপথে ছেড়েই দেশে ফিরে যাচ্ছেন ব্র্যাভোরা। ছবি: পিটিআই

কাজে এল না শান্তির দূত দলাই লামার আশীর্বাদ। সিরিজ মাঝপথে ছেড়েই দেশে ফিরে যাচ্ছেন ব্র্যাভোরা। ছবি: পিটিআই

রাজীব ঘোষ
ধর্মশালা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

দেড়শো বছর পূর্তির উত্‌সবের আলোর রোশনাইয়ে ভাসা ইডেনকে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল।

সোমবার ইডেনে চলতি ওয়ান ডে সিরিজের শেষ ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরে যাচ্ছেন ব্র্যাভোরা। তাঁদের বোর্ডের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব মিটমাটের বদলে আরও জটিল হয়ে ওঠায় এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন ক্যারিবিয়ান ক্যাপ্টেন ডোয়েন ব্র্যাভো।

এ দিন সকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর অবশ্য সন্ধের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলল বিসিসিআই। নভেম্বরের ১ থেকে ১৫ ভারতে পাঁচটি ওয়ান ডে খেলবে শ্রীলঙ্কা। তার মধ্যে অবশ্যই একটি ম্যাচ হবে ইডেনে। পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আইসিসি-তে কড়া নালিশও জানাতে পারে বোর্ড। এমনকী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও নাকি ভাবা হচ্ছে।

শান্তির দূত দলাই লামার শহরের ক্রিকেট প্রশাসকরা শুক্রবার দিন শুরু হতেই পড়েন চরম অশান্তির মধ্যে। সকাল সকাল ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার মধ্যেই যেন বজ্রপাত হিমাচলপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার উপর। সাত সকালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল সাফ জানিয়ে দেয়, তারা মাঠে যাবে না। শুক্রবারের বিমানেই দিল্লি ফিরে যাবেন। সেখান থেকেই দেশে ফেরার বিমান ধরতে চান তাঁরা।

এমন দুঃসংবাদ শুনেই ধর্মশালার অদূরে কান্ডিতে টিম হোটেলে দৌড়ন বোর্ডের যুগ্মসচিব অনুরাগ ঠাকুর। সঙ্গে আরও কয়েক জন কর্তা। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাভো ও দলের ম্যানেজার রিচি রিচার্ডসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তাঁরা। ব্র্যাভোদের যুক্তি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের চলতি সফরের আর্থিক চুক্তি নিয়ে যাবতীয় কথাবার্তা বলতে হবে তাঁদের সঙ্গেই, ক্যারিবিয়ান প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (উইপা) সঙ্গে নয়। ক্যারিবিয়ানদের অভিযোগ, উইপার অভিসন্ধি মোটেই সত্‌ নয়। তারা নাকি দেশের বোর্ডেরই হাতের পুতুল। সংস্থার প্রধান ওয়েভেল হাইন্ডসের পদত্যাগ আগেই চেয়েছেন। এখনও সেই দাবিতে অনড় ব্র্যাভোরা।

কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের পাল্টা জবাব, চুক্তি অনুযায়ী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক (যা প্রায় ৭৫ শতাংশ কমার উপক্রম) নিয়ে আলোচনা উইপা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে নয়। হাইন্ডসও জানিয়ে দেন, পদত্যাগের প্রশ্নই নেই। দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভারতীয় বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল। দুবাইয়ে আইসিসি-র সভায় তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, তাও হয়ে ওঠেনি। তাই সিরিজ অপূর্ণ রেখেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে বোর্ডকে ই-মেলে জানিয়ে দেন ক্যারিবিয়ান টিম ম্যানেজার রিচার্ডসন। বলেন, “দলের ছেলেরা কেউ এই সিরিজে খেলতে চাইছে না। ওদের দিল্লি ফেরার ব্যবস্থা করুন।”

এ দিন সকালের মহাগুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত এক কর্তা জানালেন, হিমাচল ক্রিকেট কর্তারা ব্র্যাভোদের বোঝান, এই ম্যাচ তাঁরা না খেললে শহরে প্রবল অশান্তি শুরু হতে পারে। এমনকী দাঙ্গাও বেধে যেতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এবং তার প্রভাব ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের উপর আছড়ে পড়লে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে অনুরাগরা ব্র্যাভোদের জানিয়ে দেন। এ-ও বলা হয় যে, দলাই লামা তাঁদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মাঠে আসছেন। তাঁরা না গেলে তাঁকে চূড়ান্ত অপমান করা হবে, যা ধর্মশালাবাসী মোটেই ভাল মনে নেবেন না। এই আলোচনার পর যখন ব্র্যাভোরা রাজি হলেন, ততক্ষণে তাঁদের হোটেল থেকে মাঠের দিকে রওনা হওয়ার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা পর রওনা হন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা।

তখনও যে ম্যাচ খেলতে পুরোপুরি রাজি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তা নয়। স্টেডিয়ামে এসে ব্র্যাভোরা ম্যাচ শুরুর আগে ম্যাচ সম্প্রচারকারী টিভি সংস্থার ক্যামেরার সামনে সাংবাদিক বৈঠক করতে চেয়েছিলেন, যেখানে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে শেষ ম্যাচ না খেলে দেশে ফেরার ঘোষণা করার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তারা তা হতে দেননি, যাতে পরিস্থিতির প্রভাব গ্যালারিতে না পড়ে। এর পর ড্রেসিংরুমে ফের এক দফা বৈঠকে বসেন ব্র্যাভোরা। অবশেষে ক্যারিবিয়ান দল এই শর্তে রাজি হয় যে, এই ম্যাচ খেলেই তারা দেশে ফিরে যাবে।

নিয়ম অনুযায়ী টসের সময় ক্যাপ্টেন ছাড়া দলের অন্যরা থাকেন না। কিন্তু এ দিন টসের সময় ব্র্যাভোর সতীর্থরা ঠায় তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ও টস জেতায় যখন তাঁর দিকে মাইক্রোফোন বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন ব্র্যাভো বলতে শুরু করেন, “দল আমার পিছনেই আছে। পুরো সিরিজটাই কঠিন ছিল। আমরা ক্রিকেট বা ফ্যানদের ক্ষতি করতে চাই না। তবু একটা সিদ্ধান্তে তো আসতেই হবে।”

বোর্ডের যুগ্মসচিব অনুরাগ ঠাকুর বিকেলে বলেন, “আজ ম্যাচ না হলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যেত। সেই ক্ষতি থেকে বাঁচলাম।” পরে সন্ধ্যায় তিনি অবশ্য বলেন, “ক্রিকেটারদের দাবি হয়তো যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু এ ভাবে ফিরে যাওয়াটা মোটেই যুক্তিপূর্ণ নয়। এই ঘটনার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট সম্পর্কই না নষ্ট হয়ে যায়।” রাতে অবশ্য দুই বোর্ডের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের প্রেস রিলিজে দাবি করা হয়, “সফর বাতিলের জন্য বোর্ড দায়ী নয়। বিসিসিআই এর ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে।” কোচি থেকে ধর্মশালা পর্যন্ত ঘটনার পরম্পরা প্রকাশ করে বিসিসিআই আবার পাল্টা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডই এই সফর বাতিলের জন্য দায়ী। ডোয়েন ব্র্যাভো ও তাঁর সঙ্গীরাও তাঁদের বোর্ডকেই দায়ী করছেন। অসম্পূর্ণ বলে এ দিন ম্যাচের পর সিরিজ সেরা ও সিরিজ জয়ীর ট্রফিও দেওয়া হল না। সাংবাদিক বৈঠকে এলেন না কোনও ক্যাপ্টেনও।

সফরের না হয় বারোটা বাজল। কিন্তু তার জেরে ভারতীয় বোর্ডের রোষানল থেকে কী করে বাঁচবেন আইপিএলে খেলা ক্যারিবিয়ানরা, এর পর সেটাই দেখার। এক বোর্ডকর্তা কার্যত জানিয়েই দিলেন, বিদ্রোহী ক্রিকেটারদের পরের আইপিএল খেলা কঠিন হয়ে গেল। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের আগামী সভায় এই নিয়ে ঝড় ওঠারও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন ওই কর্তা। বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল অবশ্য শুধু বললেন, “ওয়েস্ট ইন্ডিজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ক্রিকেটারদেরও ছাড়া উচিত নয়। আমরা আইসিসি-র কাছে এই আবেদনই জানাচ্ছি।”

আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২১ অক্টোবর হায়দরাবাদে ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে বোর্ড। সে দিনই চূড়ান্ত হতে পারে শ্রীলঙ্কা সিরিজের সূচি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE