Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
ভারত ৯ পাকিস্তান ০

‘ক্যাপ্টেনের থেকে লেগ স্পিনার যে সমর্থনটা চায়, তা পেয়েছি’

বাইশ গজে চিরশত্রুকে আরও একবার পেড়ে ফেলার মতোই শুক্রবারের মিরপুর মাঠের রাত মনে রাখতে হবে ধোনির অমিত-প্রেম দেখে! ভারত অধিনায়ক বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের মতো প্রেশারকুকার সিচুয়েশন ম্যাচে নেমেছিলেন দুই পেসার+তিন স্পিনারের অপ্রত্যাশিত কম্বিনেশনে। এবং সেই বাড়তি স্পিনারের নাম অমিত মিশ্র! যে লেগ স্পিনার বরাবর ধোনির অনাস্থাই বেশি পেয়ে এসেছেন ভরসার বদলে।

চিরশত্রুকে হারানোর হাসি। শুক্রবার মিরপুরে সুরেশ রায়না।

চিরশত্রুকে হারানোর হাসি। শুক্রবার মিরপুরে সুরেশ রায়না।

চেতন নারুলা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

বাইশ গজে চিরশত্রুকে আরও একবার পেড়ে ফেলার মতোই শুক্রবারের মিরপুর মাঠের রাত মনে রাখতে হবে ধোনির অমিত-প্রেম দেখে! ভারত অধিনায়ক বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের মতো প্রেশারকুকার সিচুয়েশন ম্যাচে নেমেছিলেন দুই পেসার+তিন স্পিনারের অপ্রত্যাশিত কম্বিনেশনে। এবং সেই বাড়তি স্পিনারের নাম অমিত মিশ্র! যে লেগ স্পিনার বরাবর ধোনির অনাস্থাই বেশি পেয়ে এসেছেন ভরসার বদলে।

কিন্তু এ দিনের ভারত-পাক মহাসংঘর্ষে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ অমিত-ই। যিনি কি না বলেও দিলেন, “আজ এমএস আমাকে প্রচুর সাপোর্ট দিয়েছে। এক জন লেগ স্পিনার তার অধিনায়কের থেকে মাঠে ঠিক যেমনটা সমর্থন চায়, সে রকমই।” আর ধোনি টিভির সামনে কী বললেন তাঁর দলের ন’বল বাকি থাকতে সাত উইকেটে সহজ জয়ের নায়ক সম্পর্কে? “আমি মনে করি এ দিন অমিত ওর দক্ষতার সত্তর থেকে পঁচাত্তর ভাগ বোলিং করেছে।” অমিত কিন্তু ম্যাচ শেষে বললেন, “আমি প্রচুর খেটেছি। তা ছাড়া আমি সব সময় উইকেট পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বল করতে ভালবাসি। এ দিনও তাই করেছি। অন্য রকম কিছু করার চেষ্টায় যাইনি। তা ছাড়া আমার মনে হয়, সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে বোলার রান আটকানোর চেষ্টা করলে বরং সে বেশিই রান খরচ করে ফেলে। আমি তাই নিজের স্বাভাবিক বোলিংই করেছি। এমএস-ও মাঠে আমাকে বলছিল, নিজের যেটা শক্তি সেই অনুযায়ী বল করো। আর আমার সেই শক্তিটা হল বল টার্ন করানো এবং লুপ দিতে বলটাকে হাওয়ায় একটু বেশি রাখা।”

টুর্নামেন্টে ভারতের পরের দু’টো কঠিন ম্যাচেও (ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়া) কি ধোনি বাড়তি স্পিনারের উপর ভরসা রাখবেন? সোজা কথায় ভারত অধিনায়কের অমিত-প্রেম কি জারি থাকবে বাংলাদেশে? ধোনি জানাচ্ছেন, “সেটা ম্যাচের দিন সন্ধেয় এখানকার মাঠের শিশির ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে। বেশি শিশির থাকলে স্পিনারদের বল গ্রিপ করার সমস্যাটা সবাই নিশ্চয়ই জানে। সেই সমস্যা বেশি নেই বুঝলে তিন জন স্পিনার খেলতেই পারে।”

অমিত বিক্রমকে বাহবা টিম ধোনির। শুক্রবার মিরপুরে।

কিন্তু এ দিন অমিত খেলছেন সেটা তিনি কখন জানলেন? স্বয়ং লেগ স্পিনার যার উত্তরে জানালেন, “সেটার মধ্যেও কিন্তু এই ভারতীয় দলের জন্য একটা ভাল বার্তা লুকিয়ে আছে। এখানে আমাদের দলের পক্ষে যেটা খুব ভাল ব্যাপার সেটা হল, কোন এগারো জন খেলবে সেটা একেবারে শেষ মুহূর্তে ঠিক হচ্ছে। এ দিনও তাই হয়েছে। যেটার মানে, টিমের প্রতিটা ক্রিকেটার মাঠে নামতে ছটফট করছে। আমিও এ দিন সে ভাবেই একেবারে শেষ মুহূর্তে জেনেছি যে, পাকিস্তান ম্যাচ খেলছি।”

অমিতের দুর্দান্ত স্পিন বোলিং, দুই ওপেনারের ভাল শুরু, সবশেষে রায়নার ফিনিশিং যেন তিনি নেটে ব্যাটিং করে গেলেন, পাকিস্তানের মতো মহাপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নয়। তাতেও অবশ্য পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না ধোনি। “গোটাকতক ক্যাচ যেগুলো আমরা ফেলেছি সেগুলো না পড়লে ‘পারফেক্ট উইন’ বলতে পারতাম। তবে এটাও দুর্দান্ত জয় আমাদের। পাকিস্তানের রানটা কম দেখালেও এ ধরনের ম্যাচে সেটা তাড়া করাও খুব একটা সহজ নয়। যে কারণে ধবন-রোহিতের থেকে একটা ভাল শুরুর দরকার ছিল। যাতে ইনিংসের পরের দিকে হাতে বেশি উইকেট থাকে আমাদের। দুই ওপেনার সেই ভাল শুরুটা দিয়েছে। তার পর রায়নার ব্যাটিং তো দুর্দান্তই। ওর মতো ব্যাটসম্যান দলে থাকায় আমাদের ব্যাটিংয়ের মিডল অর্ডারেও প্রচুর ফায়ারপাওয়ার রয়েছে,” তাঁর প্রিয় সিএসকে-সতীর্থ সম্পর্কে প্রশংসায় এ দিন পঞ্চমুখ ভারত অধিনায়ক।

স্বয়ং রায়না ম্যাচ নিয়ে টিভির বিশেষ অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি আর বিরাট ঠিক করেছিলাম ইতিবাচক ব্যাটিং করব। আজমল এমন এক জন স্পিনার যে উইকেট তোলার দিক থেকে বিপজ্জনক। তাই আমরা অন্য প্রান্তে গুলকে টার্গেট করেছিলাম। গত দু’মাস নিজের ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর খেটেছি, বিশেষ করে শর্ট বলের বিরুদ্ধে। শর্ট বলের সামনে আমার এখন পাল্টা পরিকল্পনা মজুত থাকে। তবে ঠিক, আমার সব সময় ফুল লেংথের বলের দিকে নজর থাকে তাই বডিওয়েট সামনের পায়ে চলে যায়।”

বিশ্বকাপে (ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে) ভারতের কাছে পাকিস্তান এই নিয়ে ন’টা ম্যাচে ন’বারই হারলেও পাক অধিনায়ক মহম্মদ হাফিজ মোটেও ভেঙে পড়েননি। টিভির সামনে বললেনও, “এই ম্যাচ থেকেও আমাদের জন্য কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। মাকসুদের মতো তরুণ ব্যাটসম্যান দারুণ প্রতিভাবান। পাঁচ-ছ’নম্বরে পাঠানোর মতো পাওয়ারহাউস। কিন্তু এ দিন ওই সময় বোর্ডে তেমন বেশি রান ছিল না বলে পরের দিকে পাঠাতে হয়েছে মাকসুদকে। আসলে পিচটা একটু ভিজে-ভিজে ভাব ছিল। ব্যাটে ঠিক মতো বল আসেনি গোড়ার দিকে। বাউন্সও বেশি ছিল উইকেটে। আমরা অন্তত ২০ রান কম তুলেছি। গোটা কয়েক ক্যাচও ফেলেছি। যেগুলো এ ধরনের ম্যাচে খুব গুরুত্বপূর্ণ।” ধোনি আবার টিম ইন্ডিয়া-র ক্যাচ ফেলার জন্য দায়ী করলেন গ্যালারির দর্শকদের। “ডিপে ফিল্ডিংয়ের সময় উঁচু ক্যাচ এলে বলটা দর্শকদের নানা রঙের পোশাকের ভিড়ে অনেক সময় হারিয়ে যায় ফিল্ডারের চোখ থেকে।”

ছবি: এএফপি।

অন্য বিষয়গুলি:

chetan narula dhaka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE