লিওনেল মেসি এবং বার্সেলোনার বিরুদ্ধে মর্যাদার লড়াইয়ে হেরে রেফারিকে ‘অযোগ্য’ বলে তুলোধোনা করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। একই সঙ্গে তাঁর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, লা লিগার দৌড় থেকে রিয়ালকে ছিটকে দিতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
বের্নাবাওয়ে নিজেদের ঘরে রিয়াল যখন ৩-২ এগিয়ে, সেই সময় পরপর দু’টি পেনাল্টি থেকে মেসির দুই গোল ম্যাচের চেহারা আমূল পাল্টে দেয়। আর তাতেই রেগে আগুন সিআর সেভেন। রেফারির যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “রেফারির মুখটা টেনশনে পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। আমি ওঁর দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। বড় ম্যাচ খেলানোর অবিশ্বাস্য চাপে ছিলেন উনি। এতটাই নার্ভাস ছিলেন যে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বারবার ভুল করলেন!” তাৎপর্যপূর্ণ হল, যে পেনাল্টি থেকে রোনাল্ডো নিজে গোল করেন, সেটাও বৈধ ছিল না বলে সমালোচনা হচ্ছে রেফারি আলবের্তো উদিয়ানো মায়েঙ্কোর।
রোনাল্ডো অবশ্য সুক্ষ্ম বিচারে না গিয়ে সাফ বলছেন, রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা মহারণ সামলানোর মতো যোগ্যতাই ছিল না মায়েঙ্কোর। “আমরা ৩-২ এগিয়ে ম্যাচ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছিলাম। রেফারির কিছু অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত আমাদের ছিটকে দিল। গোটা ম্যাচে প্রচুর ভুল করেছেন রেফারি। রিয়াল-বার্সা ম্যাচ খেলানোর দায়িত্ব এমন কাউকে দেওয়া উচিত যিনি অভিজ্ঞতা আর দাপটের সঙ্গে খেলাটা পরিচালনা করতে পারবেন। মায়েঙ্কোর সেই আত্মবিশ্বাসই ছিল না,” ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ফিফার বর্ষসেরা মহাতারকা। সঙ্গে যোগ করেছেন, “এ সব দেখে সন্দেহ হচ্ছে যে, ম্যাচ শুধুু মাঠে নেমে খেলেই জেতা যায় না। মাঠের বাইরের সাহায্য নিয়েও কখনও কখনও জেতা যায়!”
এটুকুতেই না থেমে রোনাল্ডোর তির্যক দাবি, “মনে হচ্ছে, অনেকেই চায় না রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগা জিতুক। ফলটা সেই লোকগুলোকে দারুণ খুশি করবে।” রবিবার জেতায় লা লিগার দৌড়ে ফিরে এসেছে বার্সা। রিয়াল এবং আটলেটিকোর থেকে মাত্র এক পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা মেসিরা ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে মাদ্রিদের দুই টিমের। আর ষড়যন্ত্রটা এখানেই হচ্ছে, বলছেন রোনাল্ডো। “আমাদের কাজটা প্রথম থেকেই খুব কঠিন ছিল। অনেকে চায়নি ম্যাচটা আমরা জিতি। কারণ, বার্সেলোনা তাতে খেতাবের দৌড় থেকে পুরোপুরি ছিটকে যেত।” তবে চিরশত্রুদের তাঁরা ছেড়ে কথা বলবেন না। “ম্যাচে যা হল তারপরে আমরা হতাশ। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের অনেক বেশি প্রাপ্য ছিল। তবে রিয়াল হাল ছাড়ছে না, যুদ্ধ চলবে,” লড়াই হারলেও যুদ্ধ শেষ হয়নি, বুঝিয়ে দিচ্ছেন রোনাল্ডো।
রেফারিকে টেনেটুনে পাশ নম্বর দেব
সাত গোলের ম্যাচে তিনটে পেনাল্টি, একটা লাল কার্ড, সাতটা হলুদ কার্ড, হাতাহাতি। কাঠগড়ায় স্প্যানিশ রেফারি আলবের্তো মায়েঙ্কো। কোন সিদ্ধান্তটা ঠিক, কোনটা ভুল? বিশ্লেষণ করলেন প্রাক্তন ফিফা রেফারি প্রদীপ নাগ...
১) রোনাল্ডোকে ফাউল বল নিয়ে বার্সা বক্সে ঢোকার সময় দানি আলভেজ রোনাল্ডোকে ফাউল করে। টিভিতেই পরিষ্কার, রোনাল্ডোর বাঁ পায়ে আলভেজের ট্রিপটা হয়েছিল পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে। রোনাল্ডোও কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায়নি। ফাউলের ফিনিশিংটা অন দ্য লাইন। রোনাল্ডো গিয়ে পড়ে বক্সের ভিতরে। রিপ্লে দেখাচ্ছে, রেফারি বলের পিছনে ছিলেন, পাশে নয়। হয়তো তাই আসল ঘটনা তাঁর চোখ এড়িয়ে গিয়েছে।
রায়: পেনাল্টি হয় না।
২) নেইমারকে ফাউল টিভিতে প্রথম দেখার পর মনে হতেই পারে নেইমার পায়ে পা জড়িয়ে পড়ে গিয়েছে। কিন্তু খুব ভাল করে ফুটেজটা দেখলেই বোঝা যাবে রিয়াল বক্সের ভিতর ঢুকেই পায়ে পা জড়িয়ে গেল নেইমারের। ওর গায়ে তখন লেগে রয়েছে সের্জিও র্যামোস। অভিজ্ঞতার নিরিখেই বলতে পারি, একটা ছোট ট্রিপ নেইমারকে করা হয়েছেই। না হলে এ ভাবে ও পড়তে পারে না।
রায়: পেনাল্টি। লাল কার্ড দেখানোটাও ঠিক। কারণ নেইমারের মুভটা গোলমুখী ছিল।
৩) পেপের মুখে বুস্কেতসের পা পুরো ঘটনাটা টিভি-তে ভাল করে দেখায়নি। তবে পরে ইন্টারনেটে ছবিতে দেখলাম, বুস্কেতস ডান পা-টা তুলে দিয়েছে পেপের মুখে। ওর বাঁ পায়ের পজিশন দেখে মনে হচ্ছে না, দৌড়তে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত এটা হয়েছে। বরং মনে হচ্ছে, কোনও ভাবে তা রেফারির চোখ এড়িয়ে গিয়েছে।
রায়: লাল কার্ড দেখানো উচিত ছিল। রেফারি মায়েঙ্কোর ভুলে বেঁচে গিয়েছে বুস্কেতস।
৪) ইনিয়েস্তাকে ফাউল জাবি আলোন্সো রিয়াল বক্সের ভিতর অবৈধ ভাবেই আটকেছিল ইনিয়েস্তাকে।
রায়: অবশ্যই পেনাল্টি।
ছবি এএফপি ও রয়টার্স
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy