Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

আমার ভবিষ্যদ্বাণী না মেলার জন্য মেসি দায়ী

শেষমেশ একচুলের তফাতে বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হল! যদি গঞ্জালো ইগুয়াইন কুড়ি মিনিটের মাথায় জার্মান গোলের একেবারে সোজাসুজি বল-সমেত নিখুঁত পজিশনে থেকেও দিশাহীন শট মারার আগে নিজের ঘাড়ের উপর দিয়ে না তাকাত, কে বলতে পারে, মারাকানা ফাইনালের চূড়ান্ত ফলাফল কী হত! ওকে সেই মুহূর্তে দেখে মনে হল, ও সম্ভবত চাইছিল ওর কোনও সতীর্থ শটটা নিক। শেষ পর্যন্ত যখন আবিষ্কার করল, শটটা ওকেই নিতে হবে, হয়তো মনে মনে কেঁপে গিয়েছিল!

পিটার শিলটন
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

শেষমেশ একচুলের তফাতে বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হল! যদি গঞ্জালো ইগুয়াইন কুড়ি মিনিটের মাথায় জার্মান গোলের একেবারে সোজাসুজি বল-সমেত নিখুঁত পজিশনে থেকেও দিশাহীন শট মারার আগে নিজের ঘাড়ের উপর দিয়ে না তাকাত, কে বলতে পারে, মারাকানা ফাইনালের চূড়ান্ত ফলাফল কী হত! ওকে সেই মুহূর্তে দেখে মনে হল, ও সম্ভবত চাইছিল ওর কোনও সতীর্থ শটটা নিক। শেষ পর্যন্ত যখন আবিষ্কার করল, শটটা ওকেই নিতে হবে, হয়তো মনে মনে কেঁপে গিয়েছিল!

যদি সেটাও ফাইনালের অন্যতম মীমাংসাসূচক সুযোগ না হয়ে থাকে, তা হলে তার মিনিট কয়েক বাদেই যেটা আর্জেন্তিনা পেয়েছিল, নিশ্চয়ই একটা সে রকম সুযোগ! যখন আবার সেই ইগুয়াইন-ই জার্মানির জালে বল জড়িয়েও অফসাইডের কবলে পড়ায় গোলটা বাতিল হয়। তবে ওর অবশ্যই অফসাইড-ফাঁদে পা না দেওয়া উচিত ছিল। অপ্রয়োজনীয় ভাবে খুূব তাড়াতাড়ি উপরে উঠে গিয়েছিল ইগুয়াইন। এটা আর্জেন্তিনার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মিস। যেটা ম্যাচের বাকি সময়টাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

ফাইনালের প্রতিটা মিনিটই খুব কঠিন হয়েছে। তবে আর্জেন্তিনীয়রা যে ভাবে শুরু করেছিল, তাতে প্রথমার্ধে ওদেরই অপেক্ষাকৃত ভাল দল মনে হচ্ছিল। জার্মানি স্বাভাবিক সুন্দর ফুটবল খেলার দল কোনও কালেই নয়। এবং ওই সময় তাদের একটু বেশি ডিফেন্সিভ দেখাচ্ছিল।

যদিও ওদের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কেউ আশা করতে পারে না যে, আমি গোলের সুযোগ নষ্ট করব আর আমার হেভিওয়েট প্রতিপক্ষ সেই ভুল কাজে লাগাবে না! এবং এর পর মারাকানায় আমরা দেখলাম, আর্জেন্তিনার খেলায় ক্রমান্বয়ে অবনতি। শেষমেশ ১১২ মিনিটে গোটজে ফুটবল-বিশ্ব জয়ের গোলটা করল হাঁফ ধরে যাওয়া, বিবর্ণ এক বিপক্ষের বিরুদ্ধে!

তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আর্জেন্তিনার ব্যর্থতার জন্য খানিকটা দায়ী ওদের অধিনায়ক লিওনেল মেসি-ও। ফাইনালে আমি সত্যিই সেই মেসিকে দেখতে চেয়েছিলাম, যে ভাবে ও বেলজিয়াম ডিফেন্স ভেদ করেছিল। কিংবা সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যাঞ্জেল দি মারিয়ার গোলের পিছনে নিখুঁত অ্যাসিস্ট-এর কাজ করেছিল।

সত্যি বলতে কী, গ্রুপ লিগে মেসির চমৎকার ফর্মের একেবারে উল্টো ছিল মারাকানার স্লথ মেসি। সম্ভবত ওর উপর গোটা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের অনন্ত প্রত্যাশার চাপ ওর কাঁধে একটু বেশি চেপে বসেছিল! সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ম্যাচেও সেটা মালুম হয়েছে। তবে ডাচরা যেমন মেসি-ম্যাজিককে সম্পূর্ণ ভোঁতা করার ছক কষেছিল, জার্মানি ততটাও করেনি। ফাইনালে মেসির জন্য সত্যিকারের কোনও ম্যান-মার্কিং ছিল না। বরং আশ্চর্যের ব্যাপার, আর্জেন্তিনা যখন মেসিকে সবচেয়ে ঝলমলে দেখতে চাইছিল, সেই সময়েও ওর সামনে খানিকটা পড়ে থাকছিল। কিন্তু স্বয়ং মেসিকে দেখে মনে হচ্ছিল, ওর যেন আর কিছু দেওয়ার নেই দলকে!

ব্যাপারটা আমার কাছে আরও পরিষ্কার হয়ে যায়, যখন দ্বিতীয়ার্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় জার্মান ডিফেন্স চেরা ইগুয়াইনের পাসটা মেসির পায়ে পড়ল। ওর সামনে শুধু ম্যানুয়েল নয়্যার, যাকে পরাস্ত করতে হবে বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে নয়্যারের দক্ষতা আর যশের কাছে মেসি আটকে যাবে ভাবাটা খুবই বাড়াবাড়ি! কিন্তু বাস্তবে ভাবনাটাকে অত দূর প্রসারিতই করতে হয়নি, যেহেতু মেসির শটটাই ছিল গোলের অনেক বাইরে!

আমার প্রাক-টুর্নামেন্ট ভবিষ্যদ্বাণী না মিলুক, জার্মানি সম্পূর্ণ যোগ্য দল হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর মেসি এবং ইগুয়াইনের গোলের মুখে দাঁড়িয়ে দোনোমনো করাটা এই তত্ত্বই খাড়া করছে যে, এটা গোলকিপারদের বিশ্বকাপ। যে কথাটা আমি অতীতের কোনও বিশ্বকাপ সম্পর্কে বলতে পারছি না। তবে গোল্ডেন গ্লাভস নয়্যারকে ফিফা দিলেও আমি হলে কোস্টারিকার কেলর নাভাসকে দিতাম। আমার মতে নাভাস-ই এই টুর্নামেন্টের সেরা কিপার।

অন্য বিষয়গুলি:

messi argentina peter shilton world cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE