যোগেশ কাঠুনিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। বাবা-মা ভাবতেন ছেলে চিকিৎসক হবে। কিন্তু মাত্র ৯ বছর বয়সে তাঁদের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ। পার্কে খেলতে খেলতে পড়ে যান যোগেশ কাঠুনিয়া। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছিলেন, কোনও দিন আর দাঁড়াতে পারবেন না যোগেশ। কিন্তু হাল ছাড়েননি যোগেশের মা মীনা দেবী। হাল ছাড়েননি যোগেশও। তারই ফসল প্যারালিম্পিক্সে জোড়া পদক। টোকিয়োর পরে প্যারিসেও ডিসকাস থ্রোয়ে রুপো জিতেছেন ভারতীয় খেলোয়াড়।
যোগেশের বাবা জ্ঞানচন্দ কাঠুনিয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। মা গৃহবধূ। বল্লভগড়ে বাড়িতে বসে তাঁরা দেখেছেন ছেলের পদক জয়। ডিসকাসের এফ৫৬ (বসে ছোড়া) ইভেন্টে ৪২.২২ মিটার ছুড়ে রুপো জেতেন যোগেশ। ছেলের সাফল্যের পরে বাবা-মায়ের মনে পড়ছে এত বছরের লড়াইয়ের গল্প।
৯ বছর বয়স থেকে চিকিৎসকদের কাছে দৌড়েছেন মীনা। কখনও চণ্ডীগড়ে ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড হাসপাতাল, তো কখনও দিল্লির বেস হাসপাতাল। চিকিৎসার পাশাপাশি চলত ফিজিয়োথেরাপি। হরিয়ানা ও রাজস্থানের অনেক সেন্টারে যোগেশকে নিয়ে যান তাঁর মা। তিনি নিজেও ফিজিয়োথেরাপি শেখেন। একমাত্র লক্ষ্য ছিল, যোগেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো। প্রাক্তন সেনাকর্তা জ্ঞানচন্দ বলেন, “যোগেশ পড়াশোনায় এত ভাল ছিল যে আমরা চাইতাম ও চিকিৎসক হোক। কিন্তু পার্কে পড়ে যাওয়ার পর আমাদের জীবনটাই বদলে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছিল, যোগেশ আর কোনও দিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু ওর মা হাল ছাড়েনি। লড়াই করে গিয়েছে। মায়ের জেদ ও যোগেশের পরিশ্রমের জন্যই ও সফল হয়েছে।”
বেশ কয়েক বছরের পরিশ্রমের পরে অবলম্বন নিয়ে হাঁটাচলা শুরু করেন যোগেশ। শারীরিক সমস্যার মাঝেও লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। কিরোরীমল কলেজে পড়ার সময় আরও কয়েক জন প্যারা অ্যাথলিটের সঙ্গে পরিচয় হয় যোগেশের। তাঁদের মধ্যে অন্যতম এশিয়ান প্যারা গেমসে পদকজয়ী নীরজ যাদব। নীরজ জেএলএন স্টেডিয়ামে দ্রোণাচার্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কোচ নাভাল সিংহের কাছে প্রশিক্ষণ নিতেন। সেখানেই ভর্তি হন যোগেশ। ২০১৮ সালে ভারতীয় দলে জায়গা পান তিনি। সেই বছরই এশিয়ান প্যারা গেমসে ব্রোঞ্জ জেতেন তিনি। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ৪৪.৩৮ মিটার ডিসকাস ছুড়ে রুপো জেতেন যোগেশ।
২০২২ সালে আবার স্নায়ুর সমস্যা হয় যোগেশের। তাঁর মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পরেও হাল ছাড়েননি তিনি। ছ’মাসের চেষ্টায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবার অনুশীলন শুরু করেন। কোচ নাভাল বলেন, “যোগেশ ঠিক মতো ডিসকাস ধরতে পারত না। ওর হাতের আঙুল বেঁকে গিয়েছিল। অনেক পরিশ্রম করে আবার আগের অবস্থায় ফিরতে হয়েছে ওকে। হুইলচেয়ারে বসে ডিসকাস দূরে ছোড়ার নানা রকম কায়দা রপ্ত করতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করেছে যোগেশ। তার ফল পাচ্ছে।”
গত চার বছরে একের পর এক রুপো জিতেছেন যোগেশ। প্যারিস ও জাপানে বিশ্ব প্যারা চ্যাম্পিয়নশিপ, গত বছর এশিয়ান প্যারা গেমসে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছেন ২৭ বছরের যোগেশ। যদিও ওপেন ন্যাশনাল প্যারা চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৮.৩৪ মিটার ডিসকাস ছুড়ে বিশ্বরেকর্ড করেছেন তিনি। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আগামী দিনেও এগিয়ে যেতে চান যোগেশ। এ বার তাঁর লক্ষ্য সোনা। সেই লক্ষ্যেই লস অ্যাঞ্জেলসের জন্য তৈরি হতে চাইছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy