Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

সোনার বুট দখলে আরও এক ধাপ এগোলেন ‘গোলন্দাজ’ রোনাল্ডো

বুধবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মরক্কোর বিরুদ্ধে মাঠে নেমে সেই পুসকাসকে টপকাতে রোনাল্ডোর লাগল মাত্র চার মিনিট।

শিখরে: মরক্কো-পর্তুগাল ম্যাচে গোলের পরে উল্লাস রোনাল্ডোর। বুধবার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ছবি: গেটি ইমেজেস

শিখরে: মরক্কো-পর্তুগাল ম্যাচে গোলের পরে উল্লাস রোনাল্ডোর। বুধবার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ছবি: গেটি ইমেজেস

দীপেন্দু বিশ্বাস
মস্কো শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

পর্তুগাল ১ : মরক্কো ০

খেলা শুরুর আগে স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল পরিসংখ্যানটা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে হাঙ্গেরির (স্পেনের হয়ে খেললেও কোনও গোল করেননি) ফেরেঙ্ক পুসকাস ইউরোপে সব চেয়ে বেশি গোল করেছেন। তাঁর গোলের সংখ্যা ৮৪। এ বারের বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের সুবাদে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ছুঁয়ে ফেলেছেন কিংবদন্তি সেই পুসকাসকে।

বুধবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মরক্কোর বিরুদ্ধে মাঠে নেমে সেই পুসকাসকে টপকাতে রোনাল্ডোর লাগল মাত্র চার মিনিট। পর্তুগালের হয়ে ১৫২ ম্যাচে ৮৫ গোল করে নতুন রেকর্ড গড়ার দিনে অবশ্য আগের দিনের মতো ‘গোটি সেলিব্রেশন’ (থুতনির দাড়িতে হাত বোলানো। যার নেপথ্য বার্তা, আমিই সর্বকালের সেরা) করেননি সিআর সেভেন। পিছন থেকে ছুটে এসে যে গোলটা রোনাল্ডো করলেন তা দেখে মনে পড়ছিল, জোসে দিনিস আভেইরো-র কথা। পর্তুগাল অধিনায়কের প্রয়াত বাবা। নিদারুণ অর্থকষ্টে জীবন কাটিয়েছেন। রোনাল্ডোর শৈশবে স্থানীয় পানশালায় আকণ্ঠ মদ্যপান করে চিৎকার করে বলতেন, ‘‘দেখবে, আমার ছেলে এক দিন বিশাল বড় ফুটবলার হবে।’’

বেঁচে থাকলে বুধবার আভেইরো হতেন এই গ্রহের সব চেয়ে সুখী মানুষ। কারণ, তাঁর সেই ছোট্ট ছেলেটাই এ দিন ছাপিয়ে গেলেন কিংবদন্তি পুসকাসের রেকর্ডকে। পাশাপাশি, চার গোল করে নিজেকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সোনার বুট জেতার লক্ষ্যেও। মেসি, নেমার-রা যখন এ বারের বিশ্বকাপে গোল খুঁজছেন, তখন রোনাল্ডোর নামের পাশে চার গোল। পর্তুগিজ অধিনায়ক গোলটা করতেই স্টেডিয়ামে পাশে বসা ইজ়রায়েল থেকে খেলা দেখতে আসা এক রোনাল্ডো-ভক্ত মজা করে বললেন, ‘‘রোনাল্ডোর সঙ্গে কি গোল করার নতুন চুক্তি করেছে পর্তুগাল? দলের চারটি গোলই তো রোনাল্ডোর!’’

বিশ্বকাপের প্রথম সপ্তাহে এ পর্যন্ত নায়ক রোনাল্ডোই। গতি, ড্রিবল, স্পট জাম্প, সাহস, শুটিং— এক জন স্ট্রাইকারের যে গুণ থাকা দরকার, তার সব ক’টাই রয়েছে রোনাল্ডোর ঝুলিতে। এর সঙ্গে যোগ হবে আগাম গোলের গন্ধ পাওয়ার ব্যাপারটাও। মাঠে বসে দেখছিলাম, এ দিন বের্নার্দো সিলভার শর্ট কর্নার থেকে জোয়াও মোতিনহো যখন বলটা মরক্কো বক্সে ভাসিয়ে দিচ্ছেন, তখন রোনাল্ডো বক্সের মাথায় দাঁড়িয়ে। বলটা দেখেই বিপক্ষ কিছু বোঝার আগে ঠিক জায়গায় চলে গিয়েছিলেন রোনাল্ডো। মরক্কোর মিডফিল্ডার করিম আল আহমদি বল বিপন্মুক্ত করতে পা চালিয়েছিলেন। রোনাল্ডো চোট লাগার আশঙ্কা উপেক্ষা করেই হেডে গোলটা করে গেলেন। সবার অলক্ষ্যে দ্রুত বলের কাছে পৌঁছনো, বলটা লক্ষ্য করা এবং নিখুঁত সময়জ্ঞান— এগুলোই চিনিয়ে দেয় রোনাল্ডোকে।

তবে চার মিনিটে এই গোলটার পরে বাকি সময়টা কলকাতা ময়দানে আমার কোচ করিম বেন শরিফার দেশের। গোল খাওয়ার পরেই প্রবল ভাবে ম্যাচে ফিরেছিল মরক্কো। দুই অর্ধ মিলিয়ে প্রায় পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল হার্ভ রেনার্ডের দল। তফাত এটাই, পর্তুগালের রোনাল্ডো ছিল। মরক্কোর সে রকম ‘ফিনিশার’ ছিলেন না। আর দ্বিতীয় ব্যাপার, পর্তুগিজ গোলকিপার রুই প্যাত্রিসিয়ো। তিনিই ব্যর্থ করেন মরক্কোর গোলের প্রচেষ্টা। দ্বিতীয়ার্ধে যে রকম পাসিং ও প্রেসিং ফুটবল খেললেন ইউনেস বেলহান্দা, নৌরেদ্দিন আমরাবাতরা, তা বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের দিনেও মরক্কোর মাথা উঁচুই রাখল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE